Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কুণ্ডপুকুর পাশে নিয়ে সেজে উঠবে নয়া কালীঘাট

পুরনো হিন্দু মন্দিরের আদলে কালীঘাট মন্দির গড়ে উঠেছিল সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের আমলে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পুণ্যার্থী কালীঘাট মন্দির দর্শন করতে আসেন।

ঝকঝকে: সংস্কারের পরে এমনই হবে কালীঘাট চত্বর।

ঝকঝকে: সংস্কারের পরে এমনই হবে কালীঘাট চত্বর।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

দেবীতীর্থ কালীঘাটে কুণ্ডপুকুর (যা দুধপুকুর বলেও খ্যাত) এবং মায়ের মন্দির এ বার পাশাপাশি থাকবে। এত দিন ওই দুইয়ের মাঝে ছিল পাঁচিল। নব কলেবরে কালীঘাট মন্দির গড়ে তোলার প্রকল্পে ওই পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কুণ্ডপুকুরের জল মাথায় দিয়েই আগামীতে মায়ের পুজো দিতে পারবেন পুণ্যার্থীরা। কালীঘাট মূল মন্দির চত্বরের ভিতরে দোকানপাট থাকায় মায়ের মন্দির থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে গিয়েছিল কুণ্ডপুকুর। সেই সব দোকানপাটও ভিতর থেকে সরানো হচ্ছে। সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে গত ১৪ অগস্ট থেকে। ২০২১ সালের শুরুতে অর্থাৎ আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন সাজে দেশের অন্যতম এই সতীপীঠ কালীঘাট মন্দির, কুণ্ডপুকুর-সহ পুরো চত্বর রাজ্যবাসীকে উপহার দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ওই প্রকল্পের কাজটা করছে কলকাতা পুরসভা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, মন্দির সংস্কার, সৌন্দর্যায়ন, আলোর ব্যবস্থা-সহ পুরো কাজে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ইতিমধ্যে দক্ষিণেশ্বর, তারকেশ্বর, তারাপীঠ, কঙ্কালিতলা-সহ আরও কয়েকটি মন্দির ও মসজিদ সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছে সরকার।

পুরনো হিন্দু মন্দিরের আদলে কালীঘাট মন্দির গড়ে উঠেছিল সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের আমলে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পুণ্যার্থী কালীঘাট মন্দির দর্শন করতে আসেন। কালীঘাট মন্দিরের পরিবেশ অনেক দিন ধরেই ঘিঞ্জি হয়ে রয়েছে। এ নিয়ে নানা অভিযোগ শুনতে হয় প্রশাসনকেও। তা মাথায় রেখেই কালীঘাট মূল মন্দির, নাটমন্দির, ষষ্ঠীতলা, শিবমন্দির, কৃষ্ণমন্দির, ভোগঘর-সহ আরও একাধিক মন্দিরের মূল কাঠামো অবিকল রেখে বছর খানেক আগে সেগুলি সাজিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই সরকারি পদ্ধতি মেনে গত অগস্ট থেকে শুরু হয়েছে কাজ।

কী কাজ হচ্ছে এখন?

পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের কথায়, প্রতিদিনই ওই মন্দিরে বহু মানুষ পুজো দিতে যান। সেই কাজে কোনও বিঘ্ন যাতে না ঘটে সেটা মাথায় রেখেই শুরু হয়েছে সংস্কার এবং সৌন্দর্যায়নের কাজ। দুর্গাপুজো, কালীপুজোর সময়ে মন্দিরে ভিড়ের বিষয়টি নজরে রয়েছে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারদের। নব কলেবর কেমন হবে? তাঁদের কথায়, ‘‘এখন মন্দিরের ভিতরে এবং লাগোয়া জায়গায় পুজোর সামগ্রী বিক্রির ৮৫টির মতো দোকান রয়েছে। সেখানে খাওয়াদাওয়ার জায়গাও রয়েছে। নতুন প্রকল্পে দোকানগুলি মূল মন্দির চত্বরের বাইরে থাকবে। নতুন মন্দির চত্বর কেমন হবে এবং তার ভিতরে কী থাকবে তার একটি চিত্র করা হয়েছে। মূল মন্দির, নাটমন্দির, শিবমন্দির, কৃষ্ণমন্দির, ভোগঘর, রসমঞ্চ, মন্দির কমিটির অফিস-সহ আরও একাধিক মন্দির এবং কুণ্ডপুকুরকে ভিতরে রেখে চারপাশ পুরো ঘিরে দেওয়া হবে পাঁচ মিটার উচ্চতার দেওয়ালে। একই উচ্চতার ছ’টি প্রবেশদ্বার থাকবে। প্রবেশদ্বারগুলি তৈরি করা হচ্ছে কারুকার্য করা কাঠের উপর পিতলের নকশা। নতুন পরিকল্পনায় মন্দিরের দেওয়ালের বাইরের দিকে পুরো চৌহদ্দি জুড়ে পরপর পুজোর সামগ্রী বিক্রির স্টল গড়ে দেওয়া হবে। আর দেওয়ালের মাথায় স্টলগুলির উপরে পটচিত্রে থাকবে সতীপীঠের মাহাত্ম্য। প্রবেশদ্বার লাগোয়া জায়গা জুড়ে ১০ মিটার চওড়া এবং ১০০ মিটার লম্বা টালির রাস্তা বানানো হবে। এখন যেখানে পিচের রাস্তা রয়েছে তার সঙ্গে টালির রাস্তার মাঝে আর একটি লম্বা কাঠামো গড়ে তোলা হবে। পাঁচ

মিটার উচ্চতার ওই কাঠামোর মাথায় সারি সারি বড় পিতলের ঘণ্টা ঝোলানো থাকবে।

কালীঘাট প্রকল্পে কর্মরত এক ইঞ্জিনিয়ার শনিবার জানান, কাজটি শেষ করার জন্য দেড় বছর সময় দেওয়া হয়েছে। কালীঘাট গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সেটা মাথায় রেখেই কাজ চলছে। ২০২১ সালের শুরুতে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalighat Temple Renovation Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE