ডেঙ্গি দমনে উদ্যোগী হতে হবে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকেও। বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থার পদস্থ কর্তাদের ডেকে জানিয়ে দেওয়া হল সেই কথা। বলা হল, ডেঙ্গিবাহী মশা দমনে আপনারাও শরিক হন। নিজ নিজ অফিসবাড়ির দিকে নজর দিন। এ দিন পুরভবনে রাজ্যের ৬টি সংস্থাকে ডাকা হয়েছিল ওই বৈঠকে। দমকল কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন থানার সামনে জমে থাকা ভাঙাচোরা গাড়ির জঞ্জাল, গড়িয়াহাট, নোনাপুকুর ও শ্যামবাজার ট্রাম ডিপো, কসবা, গড়িয়া-সহ শহরের একাধিক বাসস্ট্যান্ড ও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরকে ডেঙ্গিবাহী মশার সম্ভাব্য আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুর প্রশাসন। বাদ যায়নি সরকারি আবাসন, এমনকি মহাকরণও। এ সব জায়গায় কোথায় কী করতে হবে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তাদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, নিয়মিত নজর রাখুন ওই সব এলাকায়। তা না হলে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, তা নিয়েও সতর্ক করা হয় তাঁদের। কেএমডিএ, পূর্ত, আবাসন, দমকল ও রাজ্য পরিবহণ নিগমের চিফ ইঞ্জিনিয়ার পর্যায়ের অফিসারেরা সেখানে হাজির ছিলেন। গরহাজির ছিল একমাত্র কলকাতা পুলিশ। কারণ হিসেবে অতীনবাবু জানান, যোগাযোগে কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ড ঘুরে কোথায় কোথায় জল জমে থাকার প্রবণতা রয়েছে, কোথায় জঞ্জাল জমিয়ে রাখা হয়, তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাতে যেমন সাধারণ বাসিন্দাদের ঘরবাড়ির ঠিকানা রয়েছে, তেমনই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার খুঁটিনাটিও লিপিবদ্ধ করা আছে। এ দিন ওই বৈঠকে রাজ্য সরকারের একাধিক সংস্থার কর্তাদের বলা হয়, সব চেয়ে খারাপ অবস্থা পরিবহণ দফতরের। পুরসভার রিপোর্টে বলা হয়েছে, অব্যবহৃত টায়ার ও টিউব, পরিত্যক্ত ঘর এবং গ্যারাজে জমা জঞ্জাল ক্রমেই মশার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে। নিয়মিত সাফাই দরকার। মহাকরণ নিয়ে পূর্ত দফতরকে জানানো হয়, ঐতিহ্যবাহী ওই ভবনের ছাদের জমা জলে মশার লার্ভা আগেও মিলেছে। মশাপ্রবণ এলাকা বলে সেখানে নিয়মিত নজরদারি দরকার।
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতিটি সংস্থার অফিসারেরাই কথা দিয়েছেন, এ বার থেকে ডেঙ্গি দমনে সদাসতর্ক থাকবেন তাঁরা। অন্যথায় কী হবে? পুরসভা কি কোনও কড়া ব্যবস্থা নেবে সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে? অতীনবাবু বলেন, ‘‘আইন সকলের জন্য একই। তবে সংঘাতে যাওয়া পুরসভার কাজ নয়। দোষ খুঁজে কাউকে অভিযুক্ত করাও আমাদের লক্ষ্য নয়। ডেঙ্গি প্রতিরোধে মশা দমনের কাজ করতে সকলকে অতিসক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, গত এক মাসে শহরে ৭২ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। যদিও জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা ১৭৩। তবে বর্ষার এই সময়ে মশার বংশবৃদ্ধি দ্রুত হতে থাকে। তাই বাড়ানো হচ্ছে সতর্কতা। পুরসভার দাবি, প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা মশা দমনের কাজ করছেন। যদিও অতীনবাবুর আশ্বাস, ‘‘ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও মানুষের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। এখন শহরে ১৬টি ডেঙ্গি-নির্ণয় কেন্দ্র রয়েছে। পরিকাঠামোও ভাল। অনেকেই ডেঙ্গি প্রতিরোধে সতর্ক হচ্ছেন।’’