হাতের আঙুল কাটার পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল চার বছরের প্রীতি নস্করকে। ভয়াবহ সেই খুনের ঘটনায় শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে শিশুটির ঠাকুরমা আরতি ও কাকিমা কবিতা নস্করকে।
মহালয়ার সকালে নিজের বাড়ির উঠোনে খেলার ফাঁকে কাকার বাড়িতে হাজির হয়েছিল প্রীতি। কাকা শঙ্করবাবু তখন বাড়িতে ছিলেন না। কাকিমা ঘরে কাজ করছিল। আর ঠাকুরমা ছিল ঠাকুরঘরে। খেলতে খেলতেই চন্দনের বাটি উল্টে ফেলে শিশুটি। সেই রাগেই প্রীতির মাথায় বেলন দিয়ে আঘাত করে তার ঠাকুরমা। পুলিশকে শনিবার এমনটাই জানিয়েছে আরতি। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম জানান, টানা পুলিশি জেরার মুখে শনিবার রাত ন’টা নাগাদ প্রীতির ঠাকুরমা ও কাকিমা ভেঙে পড়ে খুনের কথা স্বীকার করে নেয়।
বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, জেরায় আরতি জানিয়েছে, কন্যাসন্তান হওয়ায় প্রীতি প্রথম থেকেই তাদের চক্ষুশূল ছিল। তার সঙ্গে শিশুটির ‘দুরন্তপনা’ মিলে খুনের ঘটনাটি ঘটে। আরতি জানিয়েছে, ওই দিন প্রীতি খেলতে গিয়ে বারবার পুজোয় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল। প্রীতির দুষ্টুমি ঠেকাতে আরতি প্রথমে ছুরি দিয়ে তার হাতের আঙুল কেটে দেয়। প্রীতি যখন বাড়ি থেকে কাকার বাড়ি যায়, তখন তার হাতে ছিল একটি লাল রঙের শালু। আরতি প্রীতির আঙুল কাটার আগেই তার মুখ ওই শালুটি দিয়ে বেঁধে দিয়েছিল, যাতে সে চেঁচাতে না পারে। পরে আঙুল কেটে ফেলার পরে অবস্থা বেগতিক দেখে কবিতা প্রীতির মুখ প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেয়। ফলে শ্বাস বন্ধ হয়ে প্রাণ হারায় শিশুটি। এর পরে পুরনো চালের বস্তায় প্রীতির দেহ মুড়ে সেটি ঠাকুরঘরেই রেখে দেওয়া হয়। খুনের দিনই রাত ১টা নাগাদ প্রীতির বস্তাবন্দি দেহ চিলেকোঠার ঘরে রেখে আসে আরতি ও কবিতা।
পুলিশ জেনেছে, আরতির ধারণা ছিল প্রীতির মা বৃহস্পতিদেবী তাদের সংসারে আসার পরেই পরিবারে পুত্রসন্তানের জন্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিদেবীর দু’টি মেয়ে হওয়ার পরে প্রীতির কাকা শঙ্করবাবুরও মেয়ে হয়। অভিযোগ, এ জন্যও বৃহস্পতিদেবীকেই দায়ী করতেন আরতি। পুলিশ জেনেছে, থাকদাঁড়ি এলাকার এক তান্ত্রিকের কাছে নিয়মিত যাতায়াত ছিল আরতির। এক তদন্তকারীর কথায়, পরিবারে পুত্রসন্তানের জন্ম হবে, এমন কুসংস্কার থেকেই প্রীতিকে খুন করা হয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কঙ্করপ্রসাদ বলেন, আরতির ঠাকুরঘর থেকে নখ ও চুল-সহ নানা জিনিস পাওয়া গিয়েছ। ফলে খুনের ঘটনার সঙ্গে তুকতাকে বিশ্বাসের যোগাযোগকেও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
বুধবার নিউ টাউন থানা এলাকার মহিষগোঠের শিবতলায় কাকার বাড়ির চিলেকোঠায় চার বছরের প্রীতির বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে পুলিশ প্রথম থেকেই সন্দেহ করেছিল, প্রীতি খুন হয়েছে কাকার বাড়িতেই। আর ঘটনার পিছনে পরিবারের লোকজনেরই হাত রয়েছে। প্রীতির বস্তাবন্দি দেহ যেখানে ছিল, এ দিন সেখান থেকেই প্রীতির এক জোড়া হাওয়াই চপ্পল ও রক্তের দাগ লাগা একটি জামাও পাওয়া যায়। পুলিশ জেনেছে, প্রীতির কাটা আঙুল ও ছুরি বাড়ির আশপাশেই ফেলা হয়। সেগুলির খোঁজে তল্লাশি হবে।
ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক হওয়া বাড়ির ভাড়াটে ভোলানাথ কুশারী ও তাঁর স্ত্রী মধুমিতা কুশারীকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা মনে করছেন, প্রীতির খুনিরা চেয়েছিল নিঃসন্তান কুশারী দম্পতির ঘাড়ে দোষ দিতে। তারা ভেবেছিল, ঘটনা সামনে এলে অনেকেই বিশ্বাস করবেন সন্তান লাভের আশায় কুশারীরা প্রীতিকে খুন করেছেন। ভোলানাথবাবুর মুরগির ব্যবসাও রয়েছে, তাই আঙুল কাটার দায়ও তাঁর ঘাড়ে চাপানো সহজ হবে।
তবে পুলিশের দাবি, এই ঘটনার পরেও আরতির চোখেমুখে কোনও অনুতাপের ছাপ দেখা যায়নি। বরং পুলিশের জেরার উত্তরে গোটা ঘটনার জন্য সে বৃহস্পতিদেবীকেই দায়ী করেছে বারবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy