Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আগুন নেভাতে সেনা! ভেবেই পেল না মন্ত্রিগোষ্ঠী

পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনে কলকাতা ছাড়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েছেন এবং মন্ত্রী ও অফিসারদের কমিটিকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন

রাতেও জ্বলছে আগুন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

রাতেও জ্বলছে আগুন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১১
Share: Save:

বিদেশ সফরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী শহর ছাড়তেই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ল তাঁর গড়ে দেওয়া মন্ত্রী ও অফিসারদের কমিটি!

ভোররাত থেকে শুরু হয়ে ১৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রবিবার রাত পর্যন্ত পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাগড়ি মার্কেটের আগুন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখেও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিগোষ্ঠী কেন সেনার সাহায্য নিল না, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে দমকলমন্ত্রী ছাড়া আর কোনও মন্ত্রীকে কেন ঘটনাস্থলে দেখা গেল না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। রাতে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিগোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নবান্নে আজ, সোমবার দুপুরে জরুরি পর্যালোচনা বৈঠক হবে। দমকল, পুরসভা, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে মন্ত্রীদের কমিটি।

পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনে কলকাতা ছাড়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েছেন এবং মন্ত্রী ও অফিসারদের কমিটিকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিমানবন্দরে এ দিন সকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগুন তো লাগতেই পারে। এটা একটা দুর্ঘটনা।’’ পাশে দাঁড়ানো রাজীব কুমারকে দেখিয়ে তাঁর সংযোজন, ‘‘সিপি রিপোর্ট দিয়েছেন, ওখানে কেউ মারা যাননি। কেউ আটকেও নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। মন্ত্রী ও অফিসারদের কমিটি করেছি। ওঁরাই ব্যবস্থা নেবেন।’’

বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন মন্ত্রিগোষ্ঠীর দুই সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু মমতার উড়ান কলকাতা ছাড়ার পরে অন্য কোনও মন্ত্রীকেই আর বাগড়ি মার্কেটের দিকে যেতে দেখা যায়নি। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরী, দিলীপ ঘোষের মতো বিরোধী নেতারা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী থাকলে তাঁর কাছে ‘নাম্বার’ ঠিক রাখতে বাকি মন্ত্রীরা ঠিক হাজির হয়ে যান! মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়েও কটাক্ষ করেছেন কেউ কেউ। পার্থবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, দমকলমন্ত্রী শোভনই আপাতত বিষয়টি দেখছেন। সিপিএমের সুধাংশু শীলও লোকজন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘটনাস্থলে ছিলেন।

উদ্বিগ্ন: বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: শৌভিক দে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রশ্ন নিয়ে দমকলমন্ত্রী শোভনবাবুর প্রাথমিক বক্তব্য, ‘‘ওই ঘিঞ্জি এলাকায় হাইড্রলিক ল্যাডার কাজ করেনি।’’ আর পার্থবাবু ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অভ্যাসকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর মুখে এত বড় ক্ষতি হল। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকার থাকবে। কিন্তু অগ্নি-সুরক্ষায় অনেক কিছুই করতে বলা হয়। সে সব ঠিকমতো ব্যবহার করলে এত বড় ঘটনা ঘটে না।’’

আগুন ছড়িয়ে পড়ার খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পার্থবাবুকে ফোন করে সেনার সাহায্য নেওয়ার দাবি তোলেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। একই দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠিও দেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুও বলেন, ‘‘লন্ডন হওয়ার বদলে লন্ডভন্ড হয়ে গেল শহরটা! কিন্তু সেনা না ডেকে এত সময় কেন খরচ করা হচ্ছে, সত্যিই দুর্বোধ্য!’’ ঘিঞ্জি এলাকায় আগুন যে হেতু ১৭-১৮ ঘণ্টা ধরে জ্বলছে, তাই বাড়ি ভেঙে প়ড়ে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অনেকে এবং সে কারণেই সেনা ডাকার দাবি। সরকারি একটি সূত্রে অবশ্য ইঙ্গিত, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে একা কেউ কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে ‘আলোচনা’র উপরেই নির্ভর করছেন।

আরও পড়ুন: দমকলকে দুষছেন বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রশাসনের গাফিলতিতেই আগুন এত বড় হয়েছে। দিদিমনিও বিদেশ চলে গেলেন! কলকাতায় অনেক বাজার জতুগৃহ হয়ে আছে। সরকার সব জেনেও ব্যবস্থা নেয় না।’’ ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বর্তমান কোনও বিচারপতিকে দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE