Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Crime

খিদিরপুরের নামী স্কুলে দিদিদের হাতে শিশু ছাত্রীর যৌন হেনস্থার অভিযোগ, বিক্ষোভ

ঘটনার কথা অন্য অভিভাবকদেরও বলেন নিগৃহীত ছাত্রীর পরিবার।

বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন অভিভাবকরা। —নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন অভিভাবকরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ১৫:৫২
Share: Save:

ফের স্কুলে ছাত্রীর যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠল কলকাতায়। এ বার খিদিরপুরের একটি নামী বেসরকারি স্কুলে। যৌন হেনস্থার শিকার ওই স্কুলের কেজি ওয়ানের এক ছাত্রী। ওই শিশুটির পরিবারের তরফে এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বুধবার স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখান অন্য অভিভাবকরা।

৬৮ ডায়মন্ড হারবার রোডের ওই স্কুলটি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরেই কেজি ওয়ানের এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করছে ওই স্কুলেরই উঁচু ক্লাসের তিন ছাত্রী। হেনস্থার শিকার ওই শিশুর অভিভাবকের দাবি, ঘটনাটি প্রথমে তাঁরা কিছুই জানতে পারেননি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তাঁরা লক্ষ্য করছিলেন মেয়ের চোখে মুখে ভয়। স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। ওই শিশুর অভিভাবকের অভিযোগ, ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে গত সোমবার। ওই দিন হেনস্থার শিকার হওয়া শিশু বাড়িতে জানায়, উঁচু ক্লাসের দিদিরা কী ভাবে তার উপর অত্যাচার করেছে। অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। একবালপুর এলাকারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে এখন চিকিৎসাধীন ওই শিশু।

ঘটনার কথা অন্য অভিভাবকদেরও বলেন নিগৃহীত ছাত্রীর পরিবার। তাঁরা গোটা বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানান। অভিযোগ, সব কিছু জানার পরেও স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরেই বুধবার দুপুরে কয়েকশো অভিভাবক স্কুলে জমায়েত হন। তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্কুল থেকে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন একবালপুর থানার আধিকারিকরা। পৌঁছয় বড় পুলিশ বাহিনীও। অভিভাবকদের দাবি, অবিলম্বে অভিযুক্ত ওই তিন ছাত্রীর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।

অভিযুক্ত তিন ছাত্রীর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন অভিভাবকরা। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: প্রোমোটারের ফ্ল্যাটে গিয়ে তোলাবাজি, ফের গ্রেফতার লেকটাউনের হাতকাটা দিলীপ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমরা এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছি, সোমবার ঘটনাটি স্কুলের শৌচাগারে হয়েছে। ওই শিশুটি শৌচাগারে যায়। সেখানে উঁচু ক্লাসের তিনজন ছাত্রী ওই শিশুটির যৌন হেনস্থা করে।” অন্য এক অভিভাবক বলেন, ‘‘বাচ্চাটি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। খুব ভয়ের মধ্যে রয়েছে। ওর কাছ থেকে বাবা-মা জানতে পেরেছেন, যারা ওর উপর অত্যাচার করেছে তাদের এক জন নবম শ্রেণির। বাকি দু’জনকে এখনও নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।” মহম্মদ আলি নামে এক অভিভাবক অভিযোগ করেন, ‘‘স্কুল ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। শিশু ছাত্রীদের সঙ্গে স্কুলের আয়াদের শৌচাগারে যাওয়ার কথা। সে বাবদ স্কুল আমাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। অথচ বাস্তবে কেউ যায় না।” রূপা সিংহ নামে আরও এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমরা আমাদের বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। স্কুলকে ছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।”

অভিযোগ, স্কুলে সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা অকেজো। স্কুলের দাবি কয়েক দিন আগে বৃষ্টি এবং বাজে ওই ক্যামেরাগুলি বিকল হয়ে গিয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের প্রিন্সিপাল অভিভাবকদের স্পষ্ট করে কিছু জানাননি ওই অভিযুক্ত ছাত্রীদের চিহ্নিত করে শাস্তির কী ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য দিকে, স্কুলের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। ওই ছাত্রীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা সাহায্য দরকার তা স্কুল করবে। সেই সঙ্গে গোটা বিষয়টি রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনকে আমরা জানিয়েছি।”

আরও পড়ুন: দরজা হাট করে খোলা, ভিড়ে ঠাসা মেট্রো ছুটল দমদম থেকে কবি সুভাষ!​

ডিসি (বন্দর) সৈয়দ ওয়াকার রাজা জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার উপর পুলিশ নজর রাখছে, যাতে কোনও অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি না হয়। তবে এখনও হেনস্থার শিকার হওয়া ছাত্রীর পরিবারের তরফে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে কারমেল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। দু’বছর ধরে তার উপর যৌন নির্যাতন চালাত সৌমেন রানা নামে স্কুলের অস্থায়ী নৃত্য শিক্ষক। বাড়িতে বললে খুনের হুমকিও দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জিডি বিড়লা স্কুলেরও চার বছরের ছাত্রীকে শৌচাগারে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, স্কুল চলাকালীন বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ওই ছাত্রীর যৌন নিগ্রহ করেন পিটি টিচার। পরে ওই ছাত্রীকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE