Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Haemophilia

রেফারের জটে মৃত্যু দুর্ঘটনাগ্রস্ত হিমোফিলিয়া আক্রান্তের

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ভিতরে বা বাইরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে, বন্ধ হতে চায় না।

শুভঙ্কর নস্কর

শুভঙ্কর নস্কর

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৫
Share: Save:

পথ দুর্ঘটনার মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া হিমোফিলিয়া আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে চিকিৎসা পেতে ঘুরতে হল একাধিক সরকারি হাসপাতালে! অভিযোগ, জরুরি ভিত্তিতে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়নি। এমনকি এ রোগের প্রয়োজনীয় রক্তের উপাদান ‘ফ্যাক্টর ৮’ (রক্ত তঞ্চনের সহায়ক একটি উপাদান) হাসপাতালে থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে রোগীর পরিবার।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ভিতরে বা বাইরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে, বন্ধ হতে চায় না। সেই সময়ে তাঁকে রক্ত তঞ্চনের সহায়ক উপাদান ফ্যাক্টর ৮ অথবা ফ্যাক্টর ৯ দেওয়া হয়। একাধিক হাসপাতালে ঘোরার পরে ওই ব্যক্তিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি নিলেও সেখানে তাঁকে হাজার ইউনিট ফ্যাক্টর-৮ এবং চার ইউনিট প্লাজমা দেওয়া হয়। পরদিন, গত ২৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার বাসিন্দা শুভঙ্কর নস্কর নামে বছর ছত্রিশের ওই যুবকের মৃত্যু হয়।

পরিবারের দাবি, শুভঙ্করের প্রতি মাসেই তিন হাজার ইউনিট ফ্যাক্টর-৮ লাগে। ওই রাতে তাঁকে যতটা দেওয়া হয়েছিল, সেটা অপ্রতুল ছিল। অন্য দিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, হিমোফিলিয়া রোগীর ক্ষেত্রে প্লাজমা দেওয়া নিষিদ্ধ। কারণ, এতে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রেও নির্দেশিকা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

মৃতের জামাইবাবু টোটোন বিশ্বাস জানান, গত ২৫ ডিসেম্বর বিকেলে পিকনিক করে ফেরার পথে ডায়মন্ড হারবার রোডে দুর্ঘটনার শিকার শুভঙ্করের মাথা, কান এবং নাক থেকে রক্ত বেরোতে থাকে। টোটোনবাবু বলেন, ‘‘ওকে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে ইএসআই কার্ড থাকায় সেখানেই যেতে বলা হয়। শিয়ালদহ ইএসআইয়ে নিয়ে গেলে মেডিক্যালে রেফার করা হয়। বারবার বলেছিলাম, হিমোফিলিয়ার রোগী, ফ্যাক্টর-৮ না দিলে মারা যাবে।’’

শুভঙ্করের মৃত্যুতে পরিজন ও বন্ধুরা তিন হাসপাতালেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তাঁদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় কম ফ্যাক্টর-৮ দেওয়ায় এবং অস্ত্রোপচার করতে দেরি হওয়ায় মারা গিয়েছেন শুভঙ্কর। গাফিলতি মেনে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্দেশ জারি করেছেন, এ বার থেকে জরুরি বিভাগে ফ্যাক্টর-৮ মজুত রাখা বাধ্যতামূলক। গত সোমবারই মৃতের পরিজন ও হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শিয়ালদহ ইএসআই কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের ইএসআই হাসপাতালগুলির মধ্যে হিমোফিলিয়া চিকিৎসার নোডাল সেন্টার এটি।

চিকিৎসকদের মতে, এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের পরিমাণ ও রোগীর ওজন অনুযায়ী প্রায় ছ’হাজার ইউনিট ফ্যাক্টর-৮ দরকার ছিল। শুধু তাই নয়। এই রোগীকে প্লাজমা দেওয়ার কথাও নয়। কেন নিয়ম মানা হয়নি? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজির প্রধান মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগ্রায় রয়েছি। যা বলার স্বাস্থ্য ভবন বলবে।’’ ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের সুপার রামপ্রসাদ রায়ের কথায়, ‘‘২৫ ডিসেম্বর হাসপাতালে ফ্যাক্টর-৮ মজুত ছিল। সম্প্রতি কেন্দ্রের থেকে এই উপাদান কেনার টাকাও এসেছে। তা সত্ত্বেও ওই রোগীকে কেন দেওয়া হয়নি, তদন্ত হচ্ছে।’’ শিয়ালদহ ইএসআইয়ের সুপার অদিতি দাসের বক্তব্য, ‘‘সে দিন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর পরিজনেদের বোঝাপড়ায় সমস্যা হওয়ায় এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গেল।’’

তবে হিমোফিলিয়ার চিকিৎসায় প্রোটোকল সম্পর্কে ডাক্তারদের অজ্ঞতা এবং গাফিলতি এতে প্রকট হয়েছে বলে মানছেন চিকিৎসকদের একটি অংশ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার দেশ জুড়ে নতুন হিমোফিলিয়া চিকিৎসার কর্মসূচি শুরু করেছে। তা রূপায়ণে কিছু ঘাটতি রয়েছে, জানাচ্ছেন রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সবে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। পুরোটা গুছিয়ে ওঠা যায়নি। তাই এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Haemophilia Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE