দখল: বারাসত স্টেশনের কাছে ওই সেতুর নীচে এ ভাবেই পসরা নিয়ে বসেন বহু হকার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
মাঝেরহাট উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে নবান্নে গত মঙ্গলবার পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার থেকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার সমস্ত বাস্তুকারকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং পূর্তসচিব অর্ণব রায়। সেই বৈঠকে এক ইঞ্জিনিয়ার প্রশ্ন করেন, বারাসতে একটি সেতুর নীচে বহু দোকান রয়েছে। বহু মানুষ বসবাসও করেন। সেতুর নীচে জল জমে যাচ্ছে। মেরামতির কাজে খুব অসুবিধা হচ্ছে। তাঁরা কী করবেন? উত্তরে পূর্তমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এটি মুখ্যমন্ত্রী নিজে দেখছেন।’’ সেই বৈঠকের পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে তৎপরতা। বেআইনি দখলদারদের উচ্ছেদ করতে অভিযানে নামতে চলেছে বারাসত পুরসভা।
বারাসত স্টেশনের কাছে রেললাইনের উপর দিয়ে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ককে জুড়েছে ওই সেতু। তার নীচে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন দোকানঘর তৈরি হলেও সেগুলি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে সেতুর নীচে গোটা জায়গা জুড়েই বসে পড়েছেন হকারেরা। সেই ঘিঞ্জি এলাকা দিয়ে রিকশা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও যাওয়ার উপায় নেই। অবস্থা এমনই যে, সেতুর গার্ডওয়াল বা গার্ডারগুলির কী অবস্থা, তা পরীক্ষা করারও উপায় নেই। এমনই বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে সেতুটি।
বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটের উপর দিয়ে ওই সেতুটি ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক ও যশোর রোডের চাঁপাডালি মোড়ের সঙ্গে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং কৃষ্ণনগর রোডের কলোনি মোড়কে যুক্ত করেছে। সেতু তৈরির আগে চাঁপাডালি মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত শ’দেড়েক দোকান ছিল। এখন সেই সংখ্যাটা ২২০ ছাড়িয়েছে। বারাসত পুরসভার পক্ষ থেকে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য সেখানে ১৭৫টির মতো দোকানঘর তৈরি করে দেওয়া হলেও অধিকাংশই এখনও বিলি হয়নি। অন্য দিকে, রেলগেটের অপর প্রান্ত থেকে কলোনি মোড় পর্যন্ত প্রায় ২০০টি দোকান রয়েছে। এ দিকে অবশ্য নতুন দোকানঘর তৈরিই হয়নি। ফলে গোটা রাস্তা জুড়েই চলছে হকার-রাজ। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘এলাকায় ভাল বাজার বলতে এই একটাই। কিন্তু ভিড়ে ঠাসাঠাসি হয়ে তার এমন অবস্থা যে, যেতেই ভয় লাগে।’’
মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে পূর্ত দফতরের কর্তাদের নিয়ে ওই সেতুর অবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়। সেতুর হাল দেখার পরে নীচ থেকে হকারদের সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সুনীলবাবু বলেন, ‘‘হকারদের জন্য এমনই অবস্থা হয়েছে যে, সেতুর দেওয়াল ও গার্ডার পর্যন্ত ঢাকা পড়ে গিয়েছে। মাঝেরহাটের ঘটনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, হকারদের পুনর্বাসনের জন্য সেতুর নীচে যে দোকানঘরগুলি তৈরি হয়েছিল, সেগুলি দেওয়া হবে না। বন্ধই রাখা হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কাউকে আর বসতে দেওয়া হবে না। রবিবারের মধ্যে সেতুর নীচের সমস্ত মালপত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।’’
কাল, সোমবার সেতু পরিদর্শন করে উচ্ছেদ অভিযান করবে পূর্ত দফতর ও পুরসভা। সেতুর নীচের হকারদের পুনর্বাসনের কী হবে? পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বারাসত শহরের মধ্যে হকার বসানোর তেমন জায়গা নেই। এ ব্যাপারে পরে ভাবনাচিন্তা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy