Advertisement
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Foreigners treatment at Bengal

হাসপাতালে বিদেশি রোগী-নীতি স্থির করতে গঠন কমিটি

নথি খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য ভবনের পর্যবেক্ষণ, বেশ কিছু দেশ থেকে এ রাজ্যে আসা লোকজন কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে এখানকার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন।

পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। — ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ ০৬:৩৬
Share: Save:

পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য তো বটেই, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও রোগীরা ভিড় করেন এ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি বিভাগে। কিন্তু সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা দেখছেন, সেই তালিকায় রয়েছে আইসল্যান্ড, কাজ়াখস্তান, জিব্রাল্টারের মতো দেশের নামও! তাই বিদেশিদের এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়ার নীতি কী হবে, তা স্থির করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। আগামী ৩১ মে-র মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

নথি খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য ভবনের পর্যবেক্ষণ, বেশ কিছু দেশ থেকে এ রাজ্যে আসা লোকজন কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে এখানকার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। যেমন, আইসল্যান্ডের বাসিন্দা এক মহিলা এ রাজ্যে সন্তান প্রসব করার পরে এসএসকেএমের নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে (নিকু) চিকিৎসাধীন ছিল সেই সদ্যোজাত। দীর্ঘদিন ধরেই ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দাদের এ রাজ্যে এসে বিনামূল্যে চিকিৎসা করানোর প্রবণতার দিকে নজর রয়েছে প্রশাসনের। তার সঙ্গে অন্যান্য দেশের বিষয়টিও পর্যবেক্ষণে ছিল স্বাস্থ্য ভবনের।

সূত্রের খবর, প্রতি বছর কত জন বিদেশিকে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা নিয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের অডিটে প্রশ্ন ওঠে। এর পরেই ২০১৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত এই সংক্রান্ত পরিসংখ্যান চাওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত চিকিৎসা করিয়েছেন ৩১২ জন বাংলাদেশি। মূলত কার্ডিয়োলজি, কার্ডিয়োথোরাসিক, অঙ্কো-মেডিসিন, হেমাটোলজি বিভাগে ওই রোগীরা চিকিৎসা করিয়েছেন। কারও কারও অস্ত্রোপচারও হয়েছে। আবার ন্যাশনাল মেডিক্যালে গত দু’বছরে ৪০ জন বাংলাদেশি চিকিৎসা করিয়েছেন। এসএসকেএমে বাংলাদেশি ছাড়াও গত পাঁচ বছরে ১১ জন আইসল্যান্ডের রোগী চিকিৎসা করিয়েছেন। কাজ়াখস্তানের রোগী রয়েছেন দু’জন, এক জন জিব্রাল্টারের বাসিন্দা। এ ভাবেই বছরে ৩০-৪০ জন করে বাংলাদেশি শহরের অন্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করান।

এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “শেষ কয়েক বছরে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে। সঙ্গে নেপালের বাসিন্দাও রয়েছেন। অন্যান্য দেশের বাসিন্দারাও কোনও না কোনও সময়ে নিজেদের কাজে এ রাজ্যে এসেছেন, প্রয়োজনে বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন।” সরকারি হাসপাতালে সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা বিনামূল্যে পান রোগীরা। সেখানে ভিন্‌ রাজ্যের, এমনকি বিদেশি রোগীদের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা নীতি নেই। অথচ, সেই পরিষেবা দিতে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে।

আবার স্বাস্থ্যকর্তাদের এমনও অনুমান, বিনামূল্যের চিকিৎসা পরিষেবাকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হচ্ছে দালাল-চক্র। বিশেষত, বাংলাদেশি রোগীকে কম খরচে অস্ত্রোপচার বা অন্য পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার নামে এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে এসে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালেরা।

তাই সমস্ত দিক পর্যবেক্ষণ করেই এ বার সরকারি হাসপাতালে বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ নিতে চাইছে রাজ্য সরকারও। এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান করে স্বাস্থ্য দফতরের এক অধিকর্তা সুপর্ণা দত্ত, যুগ্ম স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, আর এক অধিকর্তা অশ্বিনীকুমার মাজি এবং অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুমন ভট্টাচার্যকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরাই স্থির করবেন, আগামী দিনে এ রাজ্যে বিদেশি রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার নীতি কী হবে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পেতে গেলে আধার কার্ড বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের নম্বর নথিভুক্ত করতে হচ্ছে। কিন্তু বিদেশিদের ক্ষেত্রে কী হবে, বা তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE