Advertisement
E-Paper

দগ্ধ পরিবারকে ভর্তি না নেওয়ায় তদন্তের ভাবনা

উল্টোডাঙায় শনিবার শেষ রাতে ঘুমোনোর সময় ঝুপড়ির ঘরে আগুন লেগে পুড়ে যান গেঞ্জির কারখানার কর্মী মধুসূদন রায়, তাঁর স্ত্রী মাম্পি এবং তাঁদের সাড়ে ছ’মাসের মেয়ে ঈশিকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫০
এই ঝুপড়িতেই লেগেছিল আগুন। নিজস্ব চিত্র

এই ঝুপড়িতেই লেগেছিল আগুন। নিজস্ব চিত্র

অগ্নিকাণ্ডে শিশু-সহ দগ্ধ গোটা পরিবারকে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফেরতের ঘটনায় তদন্ত শুরু করার কথা ভাবছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

উল্টোডাঙায় শনিবার শেষ রাতে ঘুমোনোর সময় ঝুপড়ির ঘরে আগুন লেগে পুড়ে যান গেঞ্জির কারখানার কর্মী মধুসূদন রায়, তাঁর স্ত্রী মাম্পি এবং তাঁদের সাড়ে ছ’মাসের মেয়ে ঈশিকা। রবিবার সকালে দগ্ধ অবস্থায় ঈশিকা ও তার বাবা-মাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁদের আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরা। কিন্তু অভিযোগ ওঠে একাধিক সরকারি হাসপাতাল দগ্ধ ওই তিন জনকে ভর্তি নিতে রাজি হয়নি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই সোমবার নতুন করে নড়চড়ে বসেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এমনকি কোনও রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা না করে অন্যত্র পাঠানো যাবে না— এই মর্মে নতুন করে নির্দেশিকা জারি করার কথা ভাবা হচ্ছে।

সাড়ে ছ’মাসের ঈশিকার শরীরের আশি শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। প্রায় সত্তর শতাংশ দগ্ধ হয়েছিলেন মধুসূদনও। বীভৎস ভাবে পুড়ে গিয়েছিলেন মাম্পি। তা সত্ত্বেও তাঁদের রবিবার সকালে একের পর এক সরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। বর্তমানে সঙ্কটজনক অবস্থায় এসএসকেএমের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ওই দম্পতি ও তাঁদের মেয়ে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের শরীরের ভিতরে ধোঁয়া ঢুকে গিয়েছে। কার্যত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সকলেই।

স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক সোমবার বলেন, ‘‘ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু হতে পারে। এমনও নির্দেশিকা জারি হতে পারে যেখানে হাসপাতালগুলিকে বলে দেওয়া হবে যে কাউকে ‘রেফার’ করা হলে, যেখানে পাঠানো হবে সেই হাসপাতালে জায়গা রয়েছে কি না তা জেনে নিতে হবে। এমনকি প্রাথমিক চিকিৎসা না করে কোনও রোগীকে ফেরানো যাবে না।’’

উল্লেখ্য, রবিবার সকাল থেকে ঈশিকা এবং তার বাবা-মায়ের চিকিৎসা করাতে দু’টি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ছোটাছুটি করেন উল্টোডাঙার ওই বস্তির বাসিন্দা এবং ঈশিকাদের আত্মীয়েরা। বাদ যাননি আগুনে জখম হওয়া ঈশিকার জেঠু মানিকও। অভিযোগ ওঠে, বি সি রায় শিশু হাসপাতাল-সহ তিনটি সরকারি হাসপাতাল দগ্ধ ঈশিকাকে ভর্তি নেয়নি। শেষ পর্যন্ত এসএসকেএম হাসপাতালে তার জায়গা হয়। মধুসূদন ও মাম্পিকেও প্রথমে সরকারি হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি। বেসরকারি হাসপাতাল তাঁদের ভর্তি করতে ২ লক্ষ টাকা প্রথমেই দাবি করে। শেষে রবিবার দিনের বেলা তাঁদের একটি কম খরচের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে মধুসূদনদেরও রাতে এসএসকেএমে জায়গা জোটে। এ ভাবেই পোড়া গায়ে জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরে কাটে ঈশিকাদের। এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র সোমবার বলেন, “সব রকমের চিকিৎসা করা হচ্ছে। আমাদের মেডিক্যাল টিম ওঁদের দেখছে।”

প্রাথমিক তদন্তের পরে স্থানীয় মানিকতলা থানার পুলিশ মনে করছে ঘরে মশার ধূপ কিংবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমোনোর সময় কোনও ভাবে আগুন লেগে থাকতে পারে। সোমবার ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন ফরেন্সিক আধিকারিকেরাও।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, মাঝেমধ্যেই ঘুম ভেঙে কেঁদে উঠছে ছোট্ট ঈশিকা। বমিও হচ্ছে তার। খাবার খেতে পারছে না সে।

এ দিনও রবিবারের ঘটনা ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঈশিকাদের আত্মীয়েরা। এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘অত্যন্ত অমানবিক ব্যবহারের শিকার হয়েছি আমরা। জলুনি নিয়ে ছটফট করা একটি শিশুর ওই অবস্থা দেখেও কারও কোনও দয়া হয়নি।’’ ছোট্ট শিশু ও তার পরিবারের জন্য চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাদের প্রতিবেশী ও আত্মীয়েরা।

Investigation Government Hospital Health Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy