Advertisement
E-Paper

সঞ্জয়ের মৃত্যুতে অ্যাপোলো কর্তাদের তলব, জবাবে সন্তুষ্ট নয় সরকার

একের পর এক চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতে আজ আবারও অ্যাপোলোয় চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠল৷

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৮:৫৪

একের পর এক চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতে আজ আবারও অ্যাপোলোয় চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠল৷ পর পর এই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ যে ভাবে উঠছে, যে ভাবে অভিযোগ উঠছে বিলিংয়ের অস্বচ্ছতা নিয়ে, তাতে রীতিমতো অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছে নবান্ন৷ তারই ফলশ্রুতিতে আজ অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে তলব করে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিবের পাঠানো নির্দেশে স্বাস্থ্য ভবনে যান তিন অ্যাপোলো কর্তা। আত্মপক্ষ সমর্থনে এই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যা বলেছেন, তাতে আদৌ সন্তুষ্ট নন স্বাস্থ্যকর্তারা। প্রকাশ্যেই অ্যাপোলোর ভূমিকার কড়া নিন্দা করলেন স্বাস্থ্যসচিব। তবে স্বাস্থ্য ভবনে ডেকে অ্যাপোলো কর্তাদের যখন জবাবদিহি চাইছে সরকার, ঠিক তখনই আলাদা করে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের যাবতীয় দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে এই বেসরকারি হাসপাতাল। মৃতের পরিবার পরিস্থিতির ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন হাসপাতালের এক সিনিয়র চিকিৎসক।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোর গলাকাটা বিল আর চিকিৎসায় অবহেলা নিয়ে বারংবার যে অভিযোগ উঠে চলেছে, এ নিয়ে সম্প্রতি হস্তক্ষেপ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। শহরের প্রায় সব বড় বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে বৈঠকে ডেকে সতর্কও করেন। কিন্তু তার পরেও অভিযোগ কম হয়নি। যেমন সঞ্জয় রায়ের মৃত্যু। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হুগলির ডানকুনিতে বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন ওই যুবক। তাঁকে সে দিনই অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসার পরেও তাঁর অবস্থার উন্নতির কোনও আভাস পাওয়া যায়নি বলে জানায় তাঁর পরিবার। অথচ তত ক্ষণে বিল সাত লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এত খরচ তাঁদের পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়ে সঞ্জয়কে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে চায় তাঁর পরিবার। কিন্তু বিল মেটানো না হলে রোগীকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। টানাপড়েনের জেরে বেশ খানিক ক্ষণ দেরি হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। এর পর তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য ভবন থেকে রেবিয়ে আসছেন এক অ্যাপোলোর সিইও রাণা দাশগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র।

পরশুর এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আজ ফের চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ সেই অ্যাপোলোরই বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে যে রোগীর ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল, তাঁরই মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। মৃতার নাম রত্না বোস(৬০)। তিনি বর্ধমানের বাসিন্দা। হার্টের সমস্যা নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি অ্যাপোলোতে ভর্তি হন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর অপারেশনও হয়। আজ সকালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোর চারটে নাগাদ তিনি মারা যান। এর পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁর পরিজনেরা। যদিও গাফিলতি মেনে নিতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে মৃতের পরিবার। বিষয়টি নিয়ে উপভোক্তা আদালতেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এই ধরনের কোনও অভিযোগ মানতে নারাজ অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: সাত দিনে চিকিৎসার বিল ৭ লক্ষ টাকা! যুবকের মৃত্যু ঘিরে চাপে হাসপাতাল

এ দিকে সরকারের ডাকে আজ দুপুর দেড়টা নাগাদ স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছন অ্যাপোলো হাসপাতালের তিন কর্তা। সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনে অনেক যুক্তি এবং তথ্য পেশ করেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় সরকার। বরং চাঁচাছোলা ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়, এই দুটি ঘটনার ক্ষেত্রেই হাসপাতালের ভূমিকা কী ছিল, তা জানতে আরও তদন্ত করা হবে। অ্যাপোলো কর্তাদের পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য সচিব জানিয়ে দেন, এই বেসরকারি হাসপাতালে পরিষেবা পেতে রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। যা একেবারেই কাম্য নয়। একটু কম খরচেও সেই মানেরই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। আরও ভাল ভাবে সঞ্জয়ের চিকিৎসা করা যেতে পারত বলেও মত স্বাস্থ্য সচিবের। একই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়, টাকার জন্য রোগীকে আটকে রাখা গর্হিত কাজ হয়েছে।

অন্য দিকে, অ্যাপোলো হাসপাতালের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জানানো হয়, সঞ্জয়ের পরিবার পরিস্থিতির ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। মানবিকতার খাতিরে বিল বাবদ প্রাপ্ত পুরো টাকাটাই ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে অ্যাপোলো।

Apollo Hospital Govt Health Secretary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy