Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বেশি বৃষ্টি বালিগঞ্জেই কেন! কী বলছেন আবহবিদরা

কলকাতা পুরসভার তথ্য বলছে, পয়লা জুন থেকে সোমবার পর্যন্ত, প্রাক বর্ষা ও বর্ষা মিলিয়ে শহরে সেই অর্থে আট দিনের মতো বৃষ্টি হয়েছে।

বাদল দিনে: সকালের ব্যস্ত সময়ে ঝেঁপে আসে বৃষ্টি। তারই জেরে নানা রকমের ছাতার ঢল হাওড়া ব্রিজে।

বাদল দিনে: সকালের ব্যস্ত সময়ে ঝেঁপে আসে বৃষ্টি। তারই জেরে নানা রকমের ছাতার ঢল হাওড়া ব্রিজে।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০৩:১৮
Share: Save:

বালিগঞ্জ আপাতত বৃষ্টি-সরণি!

কারণ, শহরে এখনও পর্যন্ত যত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, শীর্ষে রয়েছে বালিগঞ্জই। শহরের অন্য এলাকা, সে পামারবাজার হোক কিংবা তপসিয়া, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বৃষ্টিপাতের নিরিখে শহরের সেরা তিনের মধ্যে এলেও ধারাবাহিকতার দিক থেকে বালিগঞ্জের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো কেউ নেই। আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, মেঘ ঘনীভূত হওয়ার জন্য যে কয়েকটি কারণের প্রয়োজন হয়, সেগুলি বালিগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত বেশি তৈরি হয়েছে। তাই বালিগঞ্জ এখন বৃষ্টিপ্রবণ!

কলকাতা পুরসভার তথ্য বলছে, পয়লা জুন থেকে সোমবার পর্যন্ত, প্রাক বর্ষা ও বর্ষা মিলিয়ে শহরে সেই অর্থে আট দিনের মতো বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই বৃষ্টিপাতের নিরিখে প্রথম তিন সেরার মধ্যে থেকেছে বালিগঞ্জ। একমাত্র ব্যতিক্রম ৯ জুন। সে দিন প্রথম পাঁচের মধ্যেও বালিগঞ্জের কোনও স্থান হয়নি। কিন্তু বাকি সাত দিনই বালিগঞ্জের আকাশে মেঘ! তার মধ্যে দু’বার, ১২ জুন ও ২১ জুন, বৃষ্টিপাতের নিরিখে সেরার সেরা বালিগঞ্জ। তিনবার, ৭ জুন, ২০ জুন ও সোমবার, তার স্থান হয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। আবার ১ জুন ও ১০ জুন বৃষ্টিপাতের নিরিখে বালিগঞ্জ হল তৃতীয় স্থানাধিকারী। অন্য এলাকা, যেমন নিউ মার্কেট, তপসিয়া, ধাপা, এরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এসেছে বৃষ্টি-সরণির শীর্ষ তালিকায়। কিন্তু এখনও বৃষ্টির ময়দানে ‘সিআর সেভেন’ কিন্তু বালিগঞ্জ! কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, বৃষ্টির মানচিত্রে বালিগঞ্জের এই উত্থান এ বছরই! গত বছরেও এমনটা ছিল না। বরং এই ঘটনার পরেই পুর আধিকারিকদের একাংশ পুরনো তথ্য ঘাঁটতে শুরু করেছেন, গত বছরের সেরা কারা ছিল, তা নিয়ে!

তবে বালিগঞ্জ বা অন্য এলাকায় যেমন বিচ্ছিন্ন ভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা আসলে বর্ষার পরিবর্তিত চরিত্রের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়া গবেষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, কলকাতা-সহ অন্য জায়গায় মৌসুমি বায়ু ঢুকলেই যে একই ভাবে বৃষ্টি হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে এলাকাভিত্তিক বৃষ্টির চল বেড়ে গিয়েছে, যা বৃষ্টির চরিত্র বদলের দিকেই ইঙ্গিত করছে। কোনও কোনও এলাকায় বৃষ্টিপ্রবণ মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে, কারণ, মেঘ ঘনীভূত হওয়ার সহায়ক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। যেমন এ বার তা বালিগঞ্জে হয়েছে।

সকাল সওয়া ৯টায় আঁধার ঘনিয়েছে বি বা দী বাগে।

এখন মেঘ ঘনীভূত হওয়ার জন্য বাতাসে হাইড্রোকার্বনের একটা অবদান রয়েছে। এই হাইড্রোকার্বন আবার দু’ধরনের—‘অ্যানথ্রোপজেনিক হাইড্রোকার্বন’ ও ‘বায়োজেনিক হাইড্রোকার্বন’। যেখানে কল-কারখানা বা অটোমোবাইল থেকে দূষণ বেশি, সেখানে ‘অ্যানথ্রোপজেনিক হাইড্রোকার্বন’-এর পরিমাণও বেশি বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। ফলে বালিগঞ্জের বৃষ্টি আসলে এলাকার দূষণের দিকেও ইঙ্গিত করছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকদের একাংশ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্স’ বিভাগের শিক্ষক সুব্রতকুমার মিদ্যা বলেন, ‘‘বর্ষার একটা সার্বিক চরিত্র রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছরে সে চরিত্রে পরিবর্তন এসেছে। ফলে মৌসুমি বায়ু ঢুকলেই বৃষ্টি হবে, তা বলা যাচ্ছে না। বরং স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে। বালিগঞ্জে বৃষ্টির ক্ষেত্রেও দূষণের একটা সম্পর্ক রয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, গ্রামাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাচ্ছে ক্রমশ। কারণ ওখানে বায়োজেনিক হাইড্রোকার্বন, যা প্রকৃতিগত ভাবে হয়, তার পরিমাণ কমে যাচ্ছে।’’ তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘জুনের কয়েক দিন বৃষ্টি দেখে এখনই বালিগঞ্জ শীর্ষে বলা যাবে না। তার জন্য পুরো বৃষ্টির মরসুম দেখতে হবে।’’

তবে কলকাতা পুরসভার কর্তারাও হতবাক বালিগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ দেখে। ১২ জুন বালিগঞ্জে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল, শহরে যা সর্বাধিক! এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এ বছর বালিগঞ্জে ধারাবাহিক ভাবে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।’’ সোমবারও বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে আটটি পাম্প চালাতে হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE