Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খুব জল, ডুব জল

ফের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মহানগরী। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার। টানা বৃষ্টিতে এ বার আর শুধু দক্ষিণ নয়, প্রায় গোটা কলকাতারই বিভিন্ন রাস্তা চলে গেল প্রায় এক থেকে চার ফুট জলের তলায়। পুরসভা সূত্রের খবর, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে।

আমহার্স্ট স্ট্রিট

আমহার্স্ট স্ট্রিট

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৫
Share: Save:

ফের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মহানগরী।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার। টানা বৃষ্টিতে এ বার আর শুধু দক্ষিণ নয়, প্রায় গোটা কলকাতারই বিভিন্ন রাস্তা চলে গেল প্রায় এক থেকে চার ফুট জলের তলায়। পুরসভা সূত্রের খবর, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এমনকী, জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে মধ্য কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে মারা গিয়েছে ফুটপাথবাসী মাস ছয়েকের এক শিশুও। উত্তরে সিঁথি থেকে শুরু করে ঠনঠনিয়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, নারকেলডাঙা মেন রোড, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, সুকিয়া স্ট্রিট, রামমোহন সরণি, দক্ষিণে পঞ্চাননতলা রোড, বালিগঞ্জ প্লেস, কসবা, সদানন্দ রোড, গল্ফগ্রিন, যোধপুর পার্ক, বেহালার বেশ কিছু এলাকা-সহ বাইপাসের ধারে পঞ্চান্নগ্রাম, মুকুন্দপুর, বুধেরহাট, ভগত সিংহ কলোনি, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ-সহ শহরের অনেক ওয়ার্ডই জলমগ্ন।

মাত্র তিন দিন আগে শহরে কয়েক পশলা ভারী বৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকা জলে ডুবে গেলেও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় তা স্বীকার করতে চাননি। এমনকী এ-ও বলেছিলেন, ‘‘বেশি জল ঢাললে তো বাথরুমেও জল জমে যায়।’’ এবং জল জমার যে সব ছবি আনন্দবাজারে ছাপা হয়েছিল, তা ‘বানানো’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহর জুড়ে জল জমার ছবি বাস্তবিক অর্থেই মেয়র-সহ পুর প্রশাসনকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। আর সে কারণেই এ দিন সাতসকালে পথে নামতে হয়েছে মেয়রকেও। জল জমা নিয়ে সকাল থেকে কাউন্সিলরদের কাছেও অসংখ্য ফোন আসতে থাকে।

তবে জল জমার ব্যাখ্যা দিয়ে এ দিন মেয়র বলেন, ‘‘মাত্র দু’ঘণ্টায় ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় জল জমেছে। যা ইদানীং কালে হয়নি। তার উপরে আজ সকালে গঙ্গায় জোয়ার আসায় নিকাশির মাধ্যমে জল বেরোতে পারেনি। উল্টে গঙ্গার জল বেড়ে যাওয়ায় তা ম্যানহোল ও ক্যানালের মাধ্যমে রাস্তায় উঠে এসেছে। শোভনবাবু জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুরসভার প্রতিটি নিকাশি পাম্প চালু রাখা হয়েছে।

সাতসকালেই কোথাও হাঁটু অবধি, কোথাও কোমর পর্যন্ত জল। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় বাইপাসের ধারে ১০৮, ১০৯ এবং ১১০ ওয়ার্ড এলাকায়। জল ঢুকে যায় ফ্ল্যাটের ভিতরেও। পুকুর, নালা ছাপিয়ে জল উপচে ওঠে রাস্তায়। বৃষ্টির জল বেরোনোর পরির্বতে কালিকাপুরের কাছে বেশ কয়েকটি ম্যানহোল থেকে উল্টে জল উঠে রাস্তায় জমতেও দেখা যায়। তার উপরে বৃষ্টির তোড়ে শহরের কয়েকটি এলাকায় গাছ উপড়ে রাস্তায় পড়ায় বিপত্তি আরও বাড়ে। এ সবের জেরে এ দিন সকালে অফিসের ব্যস্ত সময়ে গড়িয়াহাট থেকে রুবিগামী রাস্তায় যানচলাচল প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলেছে সেই অবস্থা। বৃষ্টির কারণে শহরে বেশ কয়েকটি স্কুলও এ দিন ছুটি ঘোষণা করে। তবে নানা কারণে এ দিন যাঁদের পথে নামতে হয়েছে, চূড়ান্ত নাকাল হয়েছেন তাঁরা সকলেই।

উত্তর কলকাতায় ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০এ বাসস্ট্যান্ডের ভিতরে পুরোপুরি জলে ডুবে রয়েছে চারটি বাস। কয়েকটি বাসকে কোনও মতে ক্রেন দিয়ে টেনে জলের বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। এর জন্য রাস্তায় নাকাল হতে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অধিকাংশ গলি জলে থইথই, বাড়িতে বাড়িতে জল, এলাকার পুকুর টইটম্বুর। জল উপচে মাছ ঢুকে পড়েছে একাধিক বাড়িতে। সিঁথি, রায়পাড়া, বেদিয়াপাড়া, ফোয়ারা মোড়, জামরুল তলা, সাঁতরা পাড়া, সোনাপট্টি, সাউথ সিঁথি রোড, কেদারনাথ দাস লেন— কোথাও এক হাঁটু কোথাও বা কোমর জল।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কারণে এমনিতেই নারকেলডাঙা মেন রোডে যানবাহনের গতি শ্লথ। তার উপরে বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে গিয়েছে। জল সরাতে ভোরেই পুরকর্মীদের নিয়ে নেমে পড়েন স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউত, কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডুরা। বাইপাসের ধারে জমা জল সরাতে সকাল থেকেই নিকাশি কর্মীদের নিয়ে পাম্প চালানো শুরু করেন স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এ দিন সকাল থেকেই পুরসভার কন্ট্রোল রুমে ছিলেন মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ। তিনি জানান, অনেক জায়গায় জমা জল সরাতে পুরসভা থেকে পোর্টেবল পাম্প পাঠানো হয়েছে।

পুরসভার একাধিক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, দীর্ঘকাল অধিকাংশ নিকাশি নালায় পলি তোলা হয়নি। পলি জমে জমে নালায় জলপ্রবাহের স্বাভাবিক গতি কমে গিয়েছে। তাই বৃষ্টি পড়লে জল বেরোতে পারে না। তাতে গত দু’দিন বেশি বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়েছে। একইসঙ্গে নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় নিকাশি পাম্পগুলোর মুখে আবর্জনা জমা হয়ে থাকে। তাতেও জলের ধারা আটকে যায়। ওই ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, নিকাশি দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ অসুস্থ থাকায় গত দু’বছর তেমন কোনও কাজ হয়নি ওই দফতরে। তার ফলেই নালা পরিস্কার থেকে শুরু করে পলি তোলার কাজে গাফিলতি থেকেই গিয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবারের বৃষ্টিতে তাই জলমগ্ন হয়েছে শহরের একটা বড় এলাকা।

ছবি: সুমন বল্লভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE