Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জমা জলেই ডুবল পুরসভার দাবি

চার ঘণ্টায় জল নেমে যাওয়ার দাবি তো দূর স্থান, ১৪ ঘণ্টাতেও পুরোপুরি জলমুক্ত হল না কলকাতা। সোমবার বিকেলে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলে মাঝ রাত পর্যন্ত। তাতে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়। কিন্তু সেই জমা জল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিপর্যস্ত করেছে জনজীবন।

চিত্র ১: সকাল ৯টা ২৩। হসপিটাল রোড।

চিত্র ১: সকাল ৯টা ২৩। হসপিটাল রোড।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫৭
Share: Save:

চার ঘণ্টায় জল নেমে যাওয়ার দাবি তো দূর স্থান, ১৪ ঘণ্টাতেও পুরোপুরি জলমুক্ত হল না কলকাতা।

সোমবার বিকেলে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলে মাঝ রাত পর্যন্ত। তাতে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়। কিন্তু সেই জমা জল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিপর্যস্ত করেছে জনজীবন। এমনকী, এ দিন দুপুরে বেহালায় মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে জাগরণী সংলগ্ন এলাকাও ডুবে ছিল বেলা ১২টা নাগাদ। এতটাই জল ছিল যে, ছেলেদের মশারি দিয়ে মাছ ধরতেও দেখা যায়। তাঁর এলাকায় জল জমা নিয়ে শোভনবাবু অবশ্য দিন কয়েক আগেই বলেছিলেন, ‘‘মেয়র তো মঙ্গলগ্রহের বাসিন্দা নন যে, ভারী বৃষ্টি হলেও তাঁর এলাকায় জল জমবে না।’’

তবে জল জমার পিছনে প্লাস্টিকের তত্ত্বকেই ফের প্রতিষ্ঠিত করতে চান নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ। তিনি জানান, জল জমার প্রধান ‘ভিলেন’ ওই প্লাস্টিক। এমনকী, যাঁরা গালিপিটে প্লাস্টিক ফেলবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করার নোটিসও জারি করার কথা বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, পুরসভার কন্ট্রোলিং অফিসারদের তা প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের নোটিস কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুরসভারই একাধিক অফিসার এবং কর্মী। তাঁদের বক্তব্য, কে, কখন গালিপিটে প্লাস্টিক ফেলছে তা কে দেখবেন? কারও পক্ষে এটা নজর করা কি সম্ভব? ওই নির্দেশের বাস্তবতা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে ওই অফিসার ও কর্মীদের। পুরসভারই এক মেয়র পারিষদের কথায়, ‘‘আসলে বৃষ্টিতে শহর জলমগ্ন হলেই প্লাস্টিকের দিকে নজর পড়ে পুর প্রশাসনের। আর সে সব চুকলেই ভুলে যায় প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক ভূমিকা।’’

কিন্তু সবটাই যে প্লাস্টিকের জন্য হচ্ছে, এ কথা ঠিক নয় বলে মনে করেন পুর ইঞ্জিনিয়ারেরাই। তাঁদের মতে, নিকাশি ব্যবস্থা সাফ রাখতে মাটির নীচে (নিকাশি লাইন) জমে থাকা নোংরা-আবর্জনা ও পলিমাটি নিয়মিত পরিষ্কার রাখা দরকার। বছরের পর বছর সে কাজে তেমন ভাবে হাত পড়েনি। কয়েক মাস ধরে তা সাফ করার চেষ্টা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতায় বিস্তীর্ণ অংশে ও সংযোজিত এলাকায় এখনও নিকাশি ব্যবস্থা দুর্বল। নিকাশি ব্যবস্থার হাল ভাল নয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন এলাকাতেও। তাই গত কয়েক দিন বৃষ্টি হলেই জলভাসি হয়ে নদীতে পরিণত হয়েছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। তার জেরে যানজটে নাকাল হয়েছেন শহরবাসী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে কাটাতে হয়েছে যাত্রীদের।

তবে বৃষ্টি পড়লেই জলমগ্ন হওয়ার ছবি যেখানে বরাবরই মেলে, সেই ঠনঠনিয়ায় আর কখনও বেশিক্ষণ ধরে জল থাকবে না বলে দাবি করেছিলেন মেয়র পারিষদ তারকবাবু। এ দিন বেলা ১০টার সময়ে সেখানে জলছবির চিত্র ধরা পড়েছে। বিকেলে অবশ্য জলমুক্ত হয় ওই এলাকা। তবে সোমবার বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত বৃষ্টির জেরে কার্যত নদীর চেহারা নেয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। তার জের ছিল এ দিন সন্ধ্যে পর্যন্ত। সন্ধ্যার মুখে, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পরেও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে হাঁটুর নীচ অবধি জল বুঝিয়ে দিয়েছে নিকাশির হাল কত মজবুত! এ বিষয়ে পুরসভার নিকাশি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এক আধ জায়গায় এমন রয়েছে। মোটের উপরে শহর জলমুক্ত হয়েছে সকালের পরেই।’’


চিত্র ২: সকাল ১০টা ৩৬। কসবা।

সোমবারের বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার সকালেও জলমগ্ন ছিল তিলজলার এক পোস্ট অফিস চত্বর। এ দিন সকাল ১০টার পরে গিয়ে দেখা গেল, অফিসের সামনে হাঁটু জল। পোস্ট অফিসের ভিতরে রেকর্ড রুমেও জল থইথই। পোস্ট মাস্টার তাপস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রেকর্ড রুমে বহু পুরনো নথি রয়েছে। সেখানে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত জল ছিল। ফলে নীচে থাকা বিভিন্ন নথি ভিজে গিয়েছে।’’ রাত পর্যন্ত কার্যত জলবন্দি হয়ে ছিলেন তিলজলার অনেকেই। যেমন সি এন রায় রোডে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এক নাগাড়ে বৃষ্টি না হলে সচরাচর এখানে জল জমে না। কিন্তু এ বছর যে ভাবে জল জমেছে সাম্প্রতিক কালে এই চিত্র মনে করতে পারছি না।’’ মেয়র পারিষদ অবশ্য এই বাস্তব অবস্থার কথা মানতে চাননি। জলমগ্ন ছিল তপসিয়ার কুষ্ঠিয়া রোডও। জমা জলের কারণে দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসার ক্ষতিও হয়েছে কারও কারও। কসবার হালতুতেও একাধিক জায়গায় হাঁটু সমান জলে চলাফেরা করতে দেখা গিয়েছে বাসিন্দাদের। রাত ন’টাতেও পার্ক সার্কাস, তিলজলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর জল জমে ছিল।

বিধাননগর: সোমবার মধ্য রাত পর্যন্ত পাম্প চালিয়েও সর্বত্র জল সরানো গেল না বিধাননগর পুর এলাকায়। বিশেষত ১৪, ২০, ২১ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৮ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু জায়গায়। পুরসভার দাবি, কেষ্টপুর, বাগজোলা-সহ একাধিক খাল জলে টইটম্বুর। ফলে পাম্প চালিয়েও জল সরানো যায়নি। পরে বিকেলের দিকে জল নেমে যায়।


চিত্র ৩: দুপুর ১টা ৫৫। তিলজলা ডাকঘর।

এ দিন দুপুরে হলদিরাম বাসস্টপ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাঁটুর নীচে পর্যন্ত জল জমে রয়েছে। শুধু একটি জায়গাতেই নয় প্রায় ৫টি ওয়ার্ডের একাধিক এলাকায় কমবেশি জল জমার ছবি চোখে পড়েছে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে জল জমে থাকার যন্ত্রণা রয়েছে। আগে ৩-৪ দিন ধরে জল থাকত। তবে এ বারে তুলনায় তাড়াতাড়ি জল নেমেছে।

পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, রাজারহাট এলাকায় এর আগে নিকাশি ব্যবস্থার কোনও পরিকাঠামোই সে ভাবে ছিল না। উপরন্তু বাগজোলা-সহ আশেপাশের কয়েকটি খাল ভারী বৃষ্টিতে পরিপূর্ণ। ফলে পাম্প চালালেও জল নামছে না। কয়েকটি ক্ষেত্রে জল ব্যাক ফ্লো করে আসছে।

বিধাননগরের মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘কাল প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত পাম্প চালিয়ে সল্টলেক, রাজারহাট, নিউ টাউনের অধিকাংশ জায়গা থেকে জল সরানো হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত জল জমেছিল।’’

ছবিগুলি তুলেছেন রণজিৎ নন্দী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

waterlogging Kolkata Normal Life Disrupts
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE