Advertisement
E-Paper

‘হামাগুড়ি দিয়ে আলো নিয়ে ঢুকতে হবে’

কোথাও তিন ফুট, কোথাও আবার চার ফুট চওড়া। পাঁচতলা উচ্চতাবিশিষ্ট এমন দেওয়ালের ওজন, মাটি ঠিকঠাক নিতে পারছে কি না, তা জানা যাচ্ছে না।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪১
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল ছবি: সুমন বল্লভ

সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল ছবি: সুমন বল্লভ

কোথাও তিন ফুট, কোথাও আবার চার ফুট চওড়া। পাঁচতলা উচ্চতাবিশিষ্ট এমন দেওয়ালের ওজন, মাটি ঠিকঠাক নিতে পারছে কি না, তা জানা যাচ্ছে না। কারণ, ভিতের নকশা এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে ওজন সংক্রান্ত কঠিন অঙ্কের সমাধানও করা যাচ্ছে না। এ দিকে প্রাথমিক সমীক্ষায় দেওয়ালে একাধিক ফাটল ধরা পড়েছে। মেঝের অনেক জায়গাও বসে যাচ্ছে। ফলে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল সংস্কারের কাজ পুরোদস্তুর শুরুর আগে ওই ভিতের নকশার ধাঁধার সমাধান করতে চাইছেন হেরিটেজ স্থপতিরা।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের সংস্কারের কথা হচ্ছিল। কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটি সম্প্রতি সংস্কারের ছাড়পত্র দেওয়ায় ১৭২ বছর বয়সি গ্রেড ওয়ান হেরিটেজের তালিকাভুক্ত ওই ক্যাথিড্রাল সংস্কারের প্রাথমিক সমীক্ষা শুরু হয়েছে। শনিবারও হেরিটেজ বিশেষজ্ঞেরা সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল ঘুরে দেখেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভিতের নকশা তৈরির জন্য আগে ‘ফাউন্ডেশন’-এর ভিতরে ঢুকতে হবে। তবে সেটা মোটেও সহজ কাজ নয়। কারণ,

ন্যাশনাল লাইব্রেরি বা টাউন হলের ক্ষেত্রে যে সুবিধাটা রয়েছে, তা এখানে নেই বলে জানাচ্ছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞেরা। ন্যাশনাল লাইব্রেরি বা টাউন হলের ক্ষেত্রে ভিত

কমপক্ষে আট-ন’ফুট উঁচু। সে কারণে ওই দুই কাঠামোয় অত সিঁড়ি। ভিতের উপরে ওই সিঁড়িগুলি তৈরি হয়েছে।

কিন্তু সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের ভিত বড়জোর চার ফুট। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হেরিটেজ স্থপতি তথা রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাশের কথায়, ‘‘হামাগুড়ি দিয়ে আলো নিয়ে ঢুকতে হবে। তবে তার আগে ওই জায়গা পুরো পরিষ্কার করতে হবে। কারণ, ওখানে সাপ-পোকামাকড় থাকতে পারে। সমীক্ষার পরে ভিতের একটা পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করতে হবে।’’

এমনিতে গথিক স্টাইলের এই ক্যাথিড্রাল শহরের স্থাপত্যশৈলীর ক্ষেত্রে একটা উজ্জ্বলতম নিদর্শন বলে জানাচ্ছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞেরা। তথ্য বলছে, এই ক্যাথিড্রালের

স্থপতি ছিলেন উইলিয়াম এন ফোর্বস। ১৮৪৭ সালে নির্মাণের সময়ে এমন ভাবে এটি তৈরি হয়েছিল, যাতে প্রাকৃতিক আলো-হাওয়ার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কৃত্রিম আলোর উপরে যাতে নির্ভর করতে না হয়, সে কারণে আলো ঢোকার ব্যবস্থা

ছিল। তেমন ভাবেই কলকাতার হাওয়ার গতি কতটা, তা মাথায় রেখে কাঠামো নির্মিত হয়েছিল। পুরো কাঠামোই তখনকার দিনের মতো ইট, চুন, সুরকি দ্বারা নির্মিত। ১৮৯৭ সাল এবং ১৯৩৪ সালের দু’টি ভূমিকম্পে এই কাঠামো ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ফলে শুধুমাত্র বাহ্যিক ভাবে সিমেন্টের কাজ করে কাঠামোকে মজবুত করা যাবে না বলেই

জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, ক্যাথিড্রালের নির্মাণ সংক্রান্ত লিখিত কিছু নথি পাওয়া গিয়েছে। নকশা তৈরির ক্ষেত্রে সেই লিখিত নথির সাহায্যও নেওয়া হবে। আরও এক হেরিটেজ স্থপতি হিমাদ্রি গুহ বলেন, ‘‘সংরক্ষণের জন্য কোথায় লোহার পাত লাগাতে হবে বা প্লাস্টারের কাজ করতে হবে সে জন্য আমরা রেট্রোফিটিং করতে চাইছি। আমাদের কাছে যদি পুরনো নকশাটা থাকত, তা হলে কাজ সহজ হত। কিন্তু সেটা নেই যখন, তখন অন্য অনেক তথ্য সংগ্রহ করে কাজ করতে হবে। পুরোটাই গাণিতিক হিসেবের উপরে দাঁড়িয়ে।’’

তথ্য বলছে, শুরুর দিকে ক্যাথিড্রালের একটি চূড়াও ছিল, যা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীকালে নতুন করে ‘সেন্ট্রাল টাওয়ার’ তৈরি করা হয়। সে সম্পর্কে ব্রায়ান পল বাখ ‘ক্যালকাটাস এডিফিস’ বইতে লিখছেন, ‘ক্যান্টারবেরি ক্যাথিড্রালের বেল হ্যারি টাওয়ারের অনুকরণে বর্তমানের সেন্ট্রাল টাওয়ারটি তৈরি করা হয়েছিল। এটির নকশা তৈরি করেছিলেন ডব্লু আই কিয়ের। নির্মাণের দায়িত্বে ছিল ম্যাকিনটশ বার্ন লিমিটেড। মাত্র ৭০ হাজার টাকায় এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।’

হেরিটেজ স্থপতিরা জানাচ্ছেন, প্রথমে নরউইচ ক্যাথিড্রালের আদলে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সার্বিক ভাবে এই ক্যাথিড্রালে কলকাতার নিজস্বতা ফুটে উঠেছে। হিমাদ্রিবাবু বলছেন, ‘‘এই ক্যাথিড্রালের নির্মাণে কলকাতার আবহাওয়ার একটা ভূমিকা রয়েছে। বাইরে গথিক স্থাপত্য থাকলেও ক্যাথিড্রালের ভিতরে কলকাতার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলীর বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’’

St. Paul's Cathedral Renovation KMC Heritage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy