E-Paper

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল ইতিহাস বিজড়িত ডাকঘর

কলকাতা শহরে বহু বাড়িই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ জোড়াসাঁকোর অর্চনা উপ-ডাকঘর। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৩৪
জীর্ণ: এমনই অবস্থায় চলছে অর্চনা উপ-ডাকঘরটি। জোড়াসাঁকোয়।

জীর্ণ: এমনই অবস্থায় চলছে অর্চনা উপ-ডাকঘরটি। জোড়াসাঁকোয়। ছবি: রনজিৎ নন্দী।

কখনও শরিকদের মধ্যে বিবাদ। কখনও বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের মধ্যে বনিবনার অভাব। তার জেরে কলকাতা শহরে বহু বাড়িই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ জোড়াসাঁকোর অর্চনা উপ-ডাকঘর। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি।

কলকাতা পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন ওই ডাকঘরটি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অদূরেই। বাড়ির মালিক জানেন, ‘অর্চনা’ নামটি দেওয়া স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরই। আবার, ‘অর্চ্চনা’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের নাম। সেই পত্রিকা ওই ডাকঘরে এসে জমা হত। রবীন্দ্রনাথ নিজে গিয়ে ডাকঘর থেকে তা সংগ্রহ করতেন বলেও স্থানীয়দের কারও কারও দাবি। ডাকঘরের কর্মীরা জানান, যে ভাবেই হোক না কেন, এই ডাকঘরের স্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে আছেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক সংযোগ রাখতেন। তাই তিনি যদি কোনও ডাকঘরের নাম রেখে থাকেন, সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তিনি কলম, কালি, রেকর্ডের বিজ্ঞাপনে নিজেকে ব্যবহার করতে দিতেন। ফলে এ রকম ভাবার কারণ নেই যে, সাধারণ জিনিসপত্রের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কোনও যোগ ছিল না। তাই এ ক্ষেত্রে নিশ্চিত করে সেই সূত্রটিকে হয়তো আমরা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারব না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এটা করতেন।’’

এক দিন সেই উপ-ডাকঘরে পৌঁছে অবশ্য ধরা পড়ল অযত্নের চেহারা। দেওয়ালের পলেস্তারা কোথাও ফুলে উঠেছে, কোথাও চিড় ধরেছে। দেওয়ালেও রয়েছে ফাটল। ডাকঘরের কর্মীরা জানালেন, কয়েক বার চাঙড়ও খসে পড়েছে। কয়েক মাস আগে ডাকঘরে আসা এক ব্যক্তি মাথায় চাঙড় পড়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচেছেন। সামগ্রিক ভাবে ইতিহাস বিজড়িত একটি জায়গা যতটা ভাল ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা, তার প্রায় কিছুই দেখা যায়নি অর্চনা ডাকঘরে। ভিতরে ও বাইরে রয়েছে পরিচ্ছন্নতার অভাবও।

ডাক বিভাগ সূত্রের খবর, কলকাতার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, এমন কয়েকটি ডাকঘরের মধ্যে একটি অর্চনা। সামগ্রিক পরিস্থিতি পাল্টাতে কর্মীরা উপরমহলে দরবার করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে মালিকপক্ষের সঙ্গে ভাড়াটে ডাক বিভাগের মামলা-মোকদ্দমাকে কেন্দ্র করে সংস্কারের কাজ আটকে যাচ্ছে বলেই জানিয়েছেন কর্মীরা।

বাড়ির এক শরিক প্রণবকুমার দে স্বীকার করেছেন, ডাক বিভাগের সঙ্গে তাঁদের সমস্যার কথা। একই সঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতির পিছনে শরিকি বিবাদের কথাও তিনি মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, ওই ডাকঘরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে জড়িয়ে অনেক ভিত্তিহীন গল্পও প্রচলিত আছে। প্রণব বলেন, ‘‘আমার বাবা বাড়িটি কেনেন। ভাড়া নিয়ে ডাক বিভাগের সঙ্গে অনেক দিন ধরে গোলমাল চলছে। তবে শরিকি পরিবারের কিছু সমস্যাও রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এই ডাকঘরের নাম রেখেছিলেন বলে শুনেছি। তবে এখানে পত্রিকা সংগ্রহে আসতেন কিনা, নিশ্চিত নই। তা ছাড়া ডাকঘরটি আগে অন্য জায়গায় ছিল।’’ তবে বাড়িটি তাঁদের সম্পত্তি, তাই কখনও কখনও তাঁরাই সংস্কারের কাজ করান বলে দাবি প্রণবের।

পোস্টমাস্টার কার্তিক ধর বলেন, ‘‘পরিস্থিতির পরিবর্তন চেয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দেখা যাক, কী হয়।’’ যদিও সম্পত্তিটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হওয়ায় এ নিয়ে তাদের কিছু করার নেই বলেই জানিয়েছে কলকাতা পুরসভা। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি রাজেশ সিংহ বলেন, ‘‘সংস্কারের জন্য ডাকঘরের তরফে আমাদের কাছে আবেদন করা হলে বিষয়টি নিয়ে আমরা হেরিটেজ কমিশনে দরবার করতে পারি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

heritage Rabindranath Tagore Jorasanko

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy