E-Paper

কলকাতার কড়চা: বিষাদে আনন্দে মাখামাখি

গগনেন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাত প্রতিমা বিসর্জনের ছবিতে চিৎপুরের এই ছবিকে ধরলেও, পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বিজয়ায় মিশে থাকত সুরুচির নিজস্ব ধারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৩৫
প্রতিমা নিরঞ্জন।

প্রতিমা নিরঞ্জন।

পুজোর হুল্লোড় আরও ক’দিন টেনে ধরে রাখার চেষ্টা কলকাতার কাছে নতুন নয়। চার দিনের জায়গায় আট দিন রাখার পর বারোয়ারি পুজোরপ্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন হতে দেখেছে হুতোমের কলকাতা। কানাইধনবাবুর মতো আমমোক্তার পুলিশের থেকে পাশ করিয়ে আনতেন। তার পর চার দল ইংরাজি বাজনা, তুর্কি সওয়ার, ফিরিঙ্গি ইত্যাদি সাজের সং, আশা-শোটা, ঘড়ি ও পঞ্চাশটা ঢাক নিয়ে শোভাযাত্রায় বেরোতেন পুজোর অধ্যক্ষেরা। চিৎপুরের বড় রাস্তা লোকে লোকারণ্য। ছাদের ও বারান্দার উপর থেকে সেকেলে কলকাতার রূপোপজীবিনীরা রুপো-বাঁধানো হুকোয় তামাক খেতে খেতে তামাশা দেখতেন। রাস্তায় হাঁ করে দাঁড়িয়ে পড়ত লোকে, প্রতিমা দেখতে তো বটেই, তাঁদেরও দেখতে। হাটখোলা থেকে জোড়াসাঁকো ও মেছোবাজার ঘুরে শোভাযাত্রা শেষ হত গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে। হুতোম টিপ্পনী কেটেছেন, “অনেক পরিশ্রমে যে বিশ পঁচিশ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিলো, আজ তারি শ্রাদ্ধ হলো।”

গগনেন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাত প্রতিমা বিসর্জনের ছবিতে চিৎপুরের এই ছবিকে ধরলেও, পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বিজয়ায় মিশে থাকত সুরুচির নিজস্ব ধারা। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুজোর বাল্যস্মৃতিতে এসেছে বাড়ির সকলে এক সঙ্গে বসে শান্তিজল নেওয়ার, বিষ্ণু গায়কের বিজয়ার গানের কথা। অভিভাবকদের সঙ্গে প্রসন্নকুমার ঠাকুরের ঘাটে বসে ভাসান দেখে ফিরে ছোটদের অনুভূতি প্রসঙ্গে লিখেছেন, “মনটাও কেমন একটু খারাপ হইয়া যাইত। প্রথম-প্রথম কয়দিন খুবই কষ্ট বোধ হইত।”

নতুন পোশাক পরে ছেলেদের মতো প্রতিমার অনুগমনের অনুমতি ছিল না ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের। বিজয়াদশমীর দিনটায় তেতলার ছাদে ওঠার অনুমতি মিলত প্রতিমা বিসর্জন দেখার জন্য। একটা দিনের নির্ভার স্বাধীনতা। সন্ধেবেলায় ঝাড়বাতির আলোয় বিজয়া সম্মিলনীর জলসায় ‘বিষ্টু ওস্তাদ’-এর গলায় বিজয়ার করুণ গান শুনে মেয়েরা চিকের আড়ালে চোখের জল ফেলতেন। তবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতির বিজয়াদশমী ছিল আনন্দমুখরও। সকাল থেকেই কোলাকুলি আর পেন্নামের বান ডাকত। খাওয়াদাওয়া, মিষ্টিমুখ, আতর, পান, গোলাপজলের ছড়াছড়ি।

নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর মতো প্রথা প্রায় মুছে গেলেও, বহু বাড়ির পুজোয় এখনও পালিত হয় নানা পারিবারিক রীতি। বিডন স্ট্রিটের ভোলানাথ ধামে দালান থেকে উঠোনে নামানোর পর প্রতিমাকে ঘিরে মহিলারা দেন বিশেষ ‘বেড়া অঞ্জলি’। দর্জিপাড়া মিত্রবাড়িতে বরণের পর প্রতিমার প্রতিটি হাতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বিশেষ রীতিতে বানানো ঝাড়খিলি পান, ঝাড়বাতির মতো দেখতে বলে এমন নাম। হাটখোলা দত্তবাড়ির সদস্যেরা প্রতিমা বিসর্জনের পর গঙ্গা থেকে বাড়ি পর্যন্ত ফেরেন দেশাত্মবোধক গান গেয়ে। ফিরে এসে ঠাকুরদালানের সামনের উঠোনে একটি বাছুরের লেজ ধরে প্রদক্ষিণ করে পালিত হয় পারিবারিক বিশ্বাসমতে বৈতরণি পেরনোর রীতি। দুর্গাপূজার শাস্ত্রীয় আচারের বাইরে নানা লোকাচার, পরিবার-প্রথা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মিলেমিশে এতে, জট ছাড়ায় সাধ্য কার! ছবি: তথাগত সিকদার

সরস বৈদগ্ধ

“দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে গিয়ে ওই জগৎদুটিতে ও আটকে পড়েনি, অবধারিতভাবে ফিরে এসেছে শিল্পের অন্তর্লোকে,” লিখেছেন শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী। “অধ্যাপকেরা হাসেন মিত মাত্রায়, তিনি অকৃপণ ভাবে পরিহাসপ্রিয় ছিলেন,” মন্তব্য সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের। জ্ঞানের ব্যাপকতাকে সাহিত্যপাঠ ও সাহিত্যপাঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নেওয়ার আশ্চর্য দক্ষতাই হোক বা নরেন্দ্রপুরে পড়ানোর সময় সেমিনার লাইব্রেরি সাজিয়ে তোলার পরম যত্ন— এই সমস্ত গুণ, শীল ও সাধনার মূর্তিমান রূপটি: অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তী। এবং জলার্ক পত্রিকার (সম্পা: মানব চক্রবর্তী) শারদীয় ১৪৩২ সংখ্যার ক্রোড়পত্রটি তাঁকে নিয়েই, লিখেছেন ওঁর ছাত্র, সহকর্মী, সহযোগী, সহভাগীরা। বইয়ের দেশ-এ ২০২১ সালে প্রকাশিত ওঁর মহাদ্যুতি সাক্ষাৎকারটিও পুনর্মুদ্রিত এখানে। এ ছাড়াও রয়েছে একগুচ্ছ কবিতা গল্প প্রবন্ধ ব্যক্তিগত গদ্য অনুমন্ত্রণ, মায় নকশাও— মননের শারদ রসদ। ছবি প্রচ্ছদ থেকে, সুব্রত চৌধুরীর আঁকা।

আন্তরিক

বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে গুজরাতি পাঠকের সেতুবন্ধন করে চলেছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিকী হালচাল। ১৯৯৮-এ প্রথম শারদ সংখ্যার প্রকাশ, ২০০৩-এর বিশেষ সংখ্যা ‘ওপার বাংলা’ বা ২০০৬-এর বিশেষ সংখ্যা ‘রূপাঞ্জলি’তে বাংলা সিনেমার সুবর্ণ-অতীত নিয়ে আলোচনা: বাঙালিয়ানার বহুরূপ। চার দশকের সূচিপত্রে মিলবে ছোটগল্প, কবিতা, নিবন্ধের সম্ভার: রবীন্দ্রনাথ নজরুল আশাপূর্ণা দেবী থেকে সত্যজিৎ রায়, কাকে নিয়ে লেখা হয়নি! আছে বইমেলা, টয় ট্রেন, টেরাকোটা, বাংলা নাট্য প্রসঙ্গও। ভাষা-সংঘাতের এ কালে ভিন্‌ সংস্কৃতিতে জানার আন্তরিক উদ্যোগ।

জাপানের সুর

এ যেন কলকাতার সঙ্গীতপ্রেমীদের বিজয়া সম্মিলনী। আজ, শনিবার, সন্ধে ৬টা থেকে হাইকু আর চেরিফুলের দেশ জাপানের গানে মুখর হতে চলেছে এলগিন রোডের নেতাজি ভবন। চার জন মহিলা শিল্পীর একটি দল শোনাবেন সাঙ্গীতিক গল্পগাথা ও গান— পিয়ানো, ওবো আর জাপানের প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে। এই দলে রয়েছেন একাধিক জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গল্পকার ও বিভিন্ন জাপানি বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শী শিল্পী কাটসুরা কোসুমি, তাঁর সঙ্গে গানে কুনিশি মিয়ো, পিয়ানিস্ট ও সঙ্গীতকার তাকাশিমা কেইকো এবং ওবো বাদক মিয়া আকামে। বাংলানাটক ডট কম, নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো ও জাপান কনসুলেট-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে এই অনুষ্ঠান। পুজোর রেশ রেখেই, গানে গানে জাপান-সফর।

সম্মাননা

বারোয়ারি বা ক্লাবের দুর্গাপুজোয় গুণিজন-সম্মাননা পরিচিত ঘটনা। কিন্তু বাড়ির পুজোয় ফি-বছর নিয়ম করে শিল্পী ও গবেষকদের সম্মান জানানো— চোখে পড়ে না তত। হাজরা মোড়ের কাছে, যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের পাশেই ‘গোস্বামী ধাম’-এর সদস্যরা এই কাজটি করে আসছেন দীর্ঘকাল ধরে। এ বাড়ির দুর্গাপুজো ‘অম্বিকা পূজা’ নামে খ্যাত, বৈষ্ণব ঐতিহ্য অনুসারী এ পুজোয় মহিষাসুর ‘বধ’ নেই, আছে আসুরিক সত্তার রূপান্তর, পরম ভক্ত হয়ে ওঠা। প্রতিমার চালচিত্রও অন্য রকম। পরিবারের পূর্বজ প্রণয়কৃষ্ণ গোস্বামী ছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত সারস্বত, এই পুজোর রজতজয়ন্তী বর্ষে তাঁর নামাঙ্কিত সম্মানে ভূষিত হলেন জগন্নাথ-গবেষক সেখ মকবুল ইসলাম। ‘প্রতিভা গোস্বামী সম্মাননা’ পেলেন চিত্রশিল্পী উজ্জ্বল গোস্বামী।

স্মরণিক

প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক ছিলেন কাত্যায়নীদাস ভট্টাচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে রেকর্ড নম্বর-সহ প্রথম, অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের অতি প্রিয় এই ছাত্র আমৃত্যু চর্চা করেছেন পাশ্চাত্য ও ভারতীয় দর্শন নিয়ে। ২০২০-তে আমেরিকার ‘সোসাইটি ফর ইন্ডিয়ান ফিলসফি অ্যান্ড রিলিজিয়ন’ তাদের জার্নালে প্রকাশ করে তাঁর ছ’টি অপ্রকাশিত প্রবন্ধ: ‘রিলিজিয়াস কনশাসনেস’, ‘নেসেসিটি অব রিলিজিয়ন’, ‘কন্টেম্পোরারি ট্রেন্ডস ইন দ্য ফিলসফি অব লাইফ’ ইত্যাদি। ৯ অক্টোবর বিকেল ৫টায়, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার গোলপার্কের বিবেকানন্দ হল-এ তাঁর নামাঙ্কিত পঞ্চম স্মারক বক্তৃতা, বলবেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। বিষয়: ‘যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে’।

বৈচিত্রের শ্রী

প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁর আরাধনা ঘরে ঘরে। ভাদ্র, পৌষ ও চৈত্রের সংক্রান্তি তিথিতেও হয় শস্য-সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পুজো। কোজাগরী পূর্ণিমা আর দীপাবলি-অমাবস্যার বিশেষ পুজো তো আছেই। এক সময় গৃহশিখরেও লক্ষ্মীর মূর্তি বসাতেন কলকাতাবাসীরা, একটি নমুনা এখনও দেখা যাবে শশিভূষণ দে স্ট্রিটে (ছবিতে বাঁ দিকে)। গৃহে গৃহে পুজো পান বলেই কি আলাদা করে এ শহরে লক্ষ্মীর মন্দির নেই তেমন? কলাগাছের ডোঙা দিয়ে তৈরি বাণিজ্যতরীর পুজো থেকে শুরু করে নারকেলকে শাড়ি পরিয়ে লক্ষ্মীরূপে পূজা— নানা লোকাচার মিশে আছে লক্ষ্মীপুজোয়। চিত্রিত সরায় লক্ষ্মীর আবাহন, তাতেও কত না ভিন্নতা। শোভাবাজার দেব বাড়ির গোপীনাথ ভবনে কোজাগরী পূর্ণিমায় গৃহলক্ষ্মী রাধারানিই পুজো পান লক্ষ্মীরূপে (ডান দিকের ছবি), একশো আট পদ্মে। লক্ষ্মীলাভ তথা রুটি-রুজির বিচিত্র পথের মতো লক্ষ্মীপুজোর রীতিতেও বৈচিত্র অন্তহীন।

স্মৃতির শহর

৯৫ বছর আগের কলকাতায় বেরিয়েছিল ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বই কলিকাতায় চলাফেরা: সেকালে আর একালে। দেবেন্দ্রনাথের পৌত্র, হেমেন্দ্রনাথ-তনয় সে বইয়ে তারও ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগের কলকাতায় জীবন-যাত্রার তুলনা করেছিলেন তাঁর সময়ের সঙ্গে: চিৎপুর রোডে তেল ও গ্যাসের আলো পেরিয়ে বিজলিবাতির উদ্ভাস, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের পাশে ‘পাদপথ’-এর বিস্তৃতি, মেছুয়াবাজারে কাফ্রিদের আনাগোনা, আপার সার্কুলার রোডে আবর্জনাবাহী রেলগাড়ি, বিডন স্ট্রিটের মোড়ে ঠাকুর-ভাসান দেখার ভিড়, ধর্মতলার মোড় থেকে ভবানীপুর খিদিরপুর বাগবাজার শ্যামবাজার যাওয়ার ঠিকাগাড়িতে গাড়োয়ানের হাঁকডাক, আরও কত কী। প্রায় একশো বছর পরে আজকের কলকাতার সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে চমক লাগে: কতটা বদলেছে, একই রয়ে গেছেই বা কী কী! চমৎকার বইটি পুনঃপ্রকাশ করল ‘বিচিত্রপত্র’। সঙ্গের ছবিটি অবশ্য আজকের কলকাতার, বই থেকে।

রসনাতৃপ্তি

ডুমুর পোস্ত, কচুপাতা বাটা-চিংড়ি ভাপা, বেলের মোরব্বা দিয়ে কেক। আর যদি বলা হয় এই সব পদের মূল উপকরণ পাওয়া গেছে রান্নাঘরের পাশেই, আর সেই রান্নাঘর সাবেক আলিপুর সংশোধনাগার, অধুনা আলিপুর মিউজ়িয়মের তিন নম্বর সেল চত্বর— সবাই নড়েচড়ে বসবেন। পুজোর ক’দিন আগে ‘অটাম আর্ট ফেয়ার’ উপলক্ষে, কলকাতার দুর্গাপুজো সম্পর্কে বিদেশিদের ঔৎসুক্য নিরসনে এই উদ্যোগ করেছিল ‘মাস আর্ট’। পুজো সংক্রান্ত নানা শিল্পের সঙ্গে পরিচয়, বাংলার খাদ্য-সংস্কৃতির টুকরো ঝলকও অতিথিরা পেলেন সুমেরু মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুড স্টুডিয়ো’তে। দেওয়াল-ঘেরা বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে থাকা গাছপালার অনেক নতুন খবর জানা গেল: আমের প্রজাতিই নাকি ডজনের বেশি, এ ছাড়াও কলা বেল কাঁঠাল ডুমুর কচু বাতাবি পেয়ারা। তা থেকে তৈরি সুখাদ্যেই উৎসবের রসনাতৃপ্তি!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja Jorasanko Thakur Bari Bijaya Dashami

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy