Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ISKCON

ISKCON Rathyatra: থমকে ভক্ত গ্যারির যাত্রা-সাজ, ইস্কনের রথহীন রথযাত্রা

সাবেক বড়বাড়ির শতাব্দীপ্রাচীন রথেও ভক্তি বা আড়ম্বর ছিল ঠিকই। তবে তা কখনওই সামগ্রিক ভাবে কলকাতার রথ হয়ে উঠতে পারেনি।

কোভিড আবহে সোমবার রথের বদলে ট্রেলারে তিন বিগ্রহ।

কোভিড আবহে সোমবার রথের বদলে ট্রেলারে তিন বিগ্রহ। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২১ ০৬:১৯
Share: Save:

রথচক্রে বোয়িং ৭৭৭ বিমানের চাকা। তবে তারাও বৃদ্ধ হয়েছে। ইস্কনের আচার্যদের কত সাধ ছিল, এই ২০২১-এ সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা বসবে রথযাত্রার রথচক্রে। রথযাত্রায় কলকাতার আকাশে থাকবে ড্রোনচালিত এক অতিকায় হনুমান, যার খরচ দেড় কোটি টাকা। ১৫০টি দেশে ইস্কনের ১২০০ মন্দিরের বাছাই ভক্তেরাও শোভাযাত্রায় যোগ দেবেন, এমনটা প্রায় ঠিকই হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় ইস্কনের রথের অর্ধশতক পূর্তির বছরে সে স্বপ্ন অধরাই থাকল।

ইস্কন বা হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের পুরোধা, অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের জন্মস্থান এই কলকাতায় প্রথম রথ চলে ১৯৭১ নাগাদ। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিক থেকে আমেরিকায় সান ফ্রান্সিসকো এবং নিউ ইয়র্কের পথে রথ নামিয়ে তখন সাহেব-মেমদেরও চমকে দিচ্ছেন তিনি। তা হলে কলকাতাই বা বাদ থাকে কেন!

সাবেক বড়বাড়ির শতাব্দীপ্রাচীন রথেও ভক্তি বা আড়ম্বর ছিল ঠিকই। তবে তা কখনওই সামগ্রিক ভাবে কলকাতার রথ হয়ে উঠতে পারেনি। আমেরিকা-ফেরত প্রৌঢ় প্রভুপাদ তথা পূর্বাশ্রমের অভয়চরণ দে কলকাতাকে সেই রথ উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কোভিড-চক্রে এ বার সেই রথযাত্রার সুবর্ণজয়ন্তীতে কিন্তু রথ বার করারই ঝুঁকি নিতে পারলেন না ইস্কন কর্তৃপক্ষ।

১৯৮৬ সালে পথে ইস্কনের রথ।

১৯৮৬ সালে পথে ইস্কনের রথ। ফাইল চিত্র।

তবে ইস্কনের আজকের রথ পথে নামে কলকাতায় রথযাত্রা শুরুর কয়েক বছর বাদে। প্রভুপাদ তত দিনে দেহ রেখেছেন। তাঁর আমেরিকান শিষ্য, ডিগ্রিধারী ইঞ্জিনিয়ার জয়ানন্দ প্রভুই আমেরিকার রথ তৈরির ভার নিয়েছিলেন। জয়ানন্দের হাতে তৈরি আর এক ইঞ্জিনিয়ার-ভক্ত গ্যারি উইলিয়াম রবার্ট তথা মায়েশ্বর প্রভু কলকাতার রথ তৈরির ভার পেলেন। ইস্কনের পুরনো সদস্যদের মনে আছে, কলকাতার অসমান রাস্তা, এবড়োখেবড়ো ট্রামলাইনে মসৃণ রথযাত্রা কম চ্যালেঞ্জের ছিল না। ১৯৭৮-এ রথের কলকব্জা বিগড়ে গিয়েছিল। কলকাতা পুলিশ রথ টানতে ক্রেন পাঠায়। কিন্তু ভক্তেরাই ক্রেন টেনে নিয়ে যান। তবে আর কখনও থমকাতে হয়নি। বরং শহর কলকাতা তাজ্জব বনে দেখেছে, কোল্যাপসিবল রথধ্বজার চমৎকারিতা। মাথার উপরে গাছের বেয়াড়া ডাল বা ট্রামলাইনের তার দেখলে তা চট করে মাথা নিচু করে আবার একটু বাদেই নিরাপদ অবস্থায় উন্নত শির হয়ে উঠছে। শ্রীক্ষেত্র পুরীর আদলে রথ তৈরি হলেও কলকাতার রথের বিশেষত্ব, জগন্নাথের বড়দা বলভদ্রের রথ তালধ্বজই মাথায় সব থেকে উঁচু ৩৮ ফুট। জগন্নাথের নন্দীঘোষ ৩৬ ফুট, সুভদ্রার দর্পদলন ৩৪ ফুট। ইস্কনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস বলছিলেন, “২০২১-এ মায়েশ্বর প্রভুকে দিয়েই রথ সংস্কারের পরিকল্পনা ছিল। সুখোইয়ের চাকাও ভাবা হয়েছিল। কিন্তু জগন্নাথের ইচ্ছা অন্য রকম।’’

সোমবার রথই বেরোয়নি শহরে। অতিমারিতে ভক্তদের আসতে বারণ করেছিল ইস্কন। একটি ট্রেলারে চড়িয়ে অ্যালবার্ট রোডের মন্দির থেকে গুরুসদয় দত্ত রোডের ইস্কন ভবনে এনে তিন বিগ্রহকে রাখা হয়েছে। রাধারমণবাবু বলছিলেন, “অন্যান্য বার রথযাত্রা ও উল্টোরথে কলকাতায় চার লক্ষ লোকের ভিড় হয়। সাত দিন ব্রিগেডের মাঠে রথ রাখা থাকে। তখনও সব মিলিয়ে ১৬ লক্ষ লোক রথ দেখতে ভিড় করেন।’’ ইস্কনের ভক্ত হিসেবে গাড়ি সংস্থা ফোর্ডের কর্ণধার উইলিয়াম ফোর্ড তথা অম্বরীশ দাসকেও ঘন ঘন দেখেছে বাংলা। অন্য বার রথযাত্রায় প্রণব মুখোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে চিত্রতারকাদের গ্ল্যামার-ছটায় মেতে উঠেছে কলকাতা। সুবর্ণজয়ন্তীতেও সেই পরম্পরায় ছেদ পড়ল। যা জগন্নাথের ইচ্ছা বলেই হাসিমুখে মানছেন ভক্তেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ISKCON Rathayatra 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE