Advertisement
E-Paper

আলো-জলের দেখা নেই, বিভীষিকার দিন রিজেন্ট এস্টেটে

একে গরম, তায় অন্ধকার। এর উপরে জল নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০২:৩২
বিপজ্জনক: আমপানের দাপটে ভেঙে রাস্তার উপরে ঝুলছে বিদ্যুতের খুঁটি। সোমবার, দক্ষিণ শহরতলির রিজেন্ট এস্টেটে। ছবি: সুমন বল্লভ

বিপজ্জনক: আমপানের দাপটে ভেঙে রাস্তার উপরে ঝুলছে বিদ্যুতের খুঁটি। সোমবার, দক্ষিণ শহরতলির রিজেন্ট এস্টেটে। ছবি: সুমন বল্লভ

দু’দিন ধরে কাজ করে চলেছেন সিইএসসি-র ঠিকাকর্মীরা। গাছ কেটে পরিষ্কার করছেন পুরসভার কর্মীরা। তবুও, ঝড় থেমে যাওয়ার পাঁচ দিন পরেও বিদ্যুৎ এবং জলহীন দক্ষিণ শহরতলির রিজেন্ট এস্টেট এলাকা। সোমবার দুপুর পর্যন্ত

সেখানে পড়ে রয়েছে উপড়ে যাওয়া গাছ। গত বুধবার ঝড় শুরুর আগে সেই যে বিদ্যুৎ গিয়েছে, আর আসার নাম নেই।

রিজেন্ট এস্টেটে ফ্ল্যাটের সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশো। সরকারি আবাসনও রয়েছে। বুধবারের ঝড়ে এলাকায় শতাধিক গাছ পড়েছে। ভেঙে পড়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭টি বাতিস্তম্ভ। সূত্রের খবর, তার পর থেকেই অন্ধকারে বাসিন্দারা। একে গরম, তায় অন্ধকার। এর উপরে জল নেই। এই ত্র্যহস্পর্শে দুর্বিষহ অবস্থা তাঁদের। অনেকেই জেনারেটর ভাড়া করে পাম্প চালিয়ে জল তুলছেন। এ দিন এস্টেটের একটি অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ এলেও বাকি অংশে পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। এই ভাবে কত দিন চলবে, পুরসভা বা সিইএসসি— কারও কাছেই স্পষ্ট উত্তর নেই।

রিজেন্ট এস্টেটের বাসিন্দা, একটি ওষুধ সংস্থার কর্মী মোহিত লোহিয়া এই পরিস্থিতিতে স্ত্রী-ছেলেকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে এসেছেন। কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়নি বৃদ্ধা মাকে। মোহিত জানান, টানা পাঁচ দিন আলো-জল নেই। চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ মোবাইল। দেড় হাজার টাকায় প্রতিদিন জেনারেটর ভাড়া করে জল তুলতে হচ্ছে।

রিজেন্ট এস্টেটে একটি চারতলা আবাসনে থাকেন স্কুলশিক্ষিকা মুন রায়। বাড়িতে ৯০ বছরের দিদিশাশুড়ি ছাড়াও রয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ি, মাসিশাশুড়ি এবং মেসোশ্বশুর। সকলেই সত্তরোর্ধ্ব। মুন বলেন, ‘‘ঝড়ের প্রকোপ দেখেই আঁচ করেছিলাম কী হতে চলেছে। তাই এই বয়স্ক মানুষগুলির কথা ভেবে কিছু জল সঞ্চয় করে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, দু’দিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কোথায় কী? ওই জল নিমেষে শেষ। প্রথম দিকে পুরসভার গাড়ির জল রিজার্ভারে ঢেলে হাতে হাতে তুলেছি। কিন্তু চারতলায় এত জনের জলের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় বলে বাধ্য হয়েছি জেনারেটর ভাড়া নিতে। এর মধ্যে আবার একটি পাম্প খারাপ হয়ে গিয়েছে।’’ ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার থেকে পুরসভা, থানা এবং সিইএসসি-র সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও সুরাহা হয়নি। পুরসভার তরফে এক জনের ফোন নম্বর দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এলাকার আর এক বাসিন্দা প্রসেনজিৎ রক্ষিতের অভিযোগ, তাঁরা নিজেরাই অধিকাংশ গাছ কেটে সরিয়েছেন। শেষে বিদায়ী কাউন্সিলর জানান বিষয়টি সিইএসসি-কে বলতে। সেই মতো শনিবার কাজ শুরু করে তারা। কিন্তু সেই কাজে টালবাহানা হচ্ছে বলে দাবি রিজেন্ট এস্টেট আবাসিক কমিটির প্রাক্তন সভাপতি সুদীপ দেবচৌধুরীর। তাঁর অভিযোগ, সিইএসসির কর্মীরা প্রথমে জানান, পোস্ট আনতে হবে। কিন্তু তার জন্য গাড়ি নেই। পরে আবার জানান, গাড়ি থাকলেও তেল নেই। এই টানাপড়েনেই দু’দিন কেটে গিয়েছে।

এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গলিতে পড়ে আছে গাছের গুঁড়ি। এক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর কাজ করছেন সিইএসসির কর্মীরা। অধিকাংশ জায়গায় এখনও ঝুলছে বিদ্যুতের তার।

রিজেন্ট এস্টেটের উল্টো দিকে শ্রীকলোনির বাসিন্দারাও বুধবার থেকে আলো-জলহীন অবস্থায় রয়েছেন। এক বাসিন্দা প্রশান্ত ধর জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে পুরসভার কল থেকে তাঁদের জল নিতে হচ্ছে। একই অবস্থা শ্রীকলোনির বাকি অংশে।

পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম অবশ্য জানিয়েছেন, যাদবপুরের বিভিন্ন এলাকায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য সিইএসসি-কে বলা হয়েছে। সিইএসসি-র তরফে দাবি করা হয়েছে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।'

আরও পড়ুন: আলো চাই, তাই বাইকে চেপে ‘ছিনতাই’ কর্মীদের

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy