Advertisement
E-Paper

‘বান্টি’ উধাও, ‘বাবলিকে’নিয়ে ফাঁপরে হাসপাতাল

কর্পোরেট হাসপাতালের খরচ জোটাতে রোগীর পরিবারের হন্যে হয়ে ঘোরার ঘটনা আকছার শোনা যায়। এ বার তারই উলটপুরাণ। যার সাক্ষী থাকল শহরের নামী কর্পোরেট হাসপাতাল।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৪

কর্পোরেট হাসপাতালের খরচ জোটাতে রোগীর পরিবারের হন্যে হয়ে ঘোরার ঘটনা আকছার শোনা যায়। এ বার তারই উলটপুরাণ। যার সাক্ষী থাকল শহরের নামী কর্পোরেট হাসপাতাল। এ ক্ষেত্রে এক রোগীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায়ে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে তাদেরই!

বরং এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে, সাড়ে তিন লক্ষের বেশি টাকা বকেয়া থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট রোগীকে পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করতে পারছেন না তাঁরা। এখনও পর্যন্ত হাসপাতালকে এক পয়সাও না-দিয়ে গত পঁচিশ দিন ধরে এসি কেবিনে রাজার হালেই রয়েছেন তিনি। চার বেলা খাবার আসছে। দিব্যি সারা দিন হাসিমুখে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর টাকার কথা শুনলে হাসিমুখেই বলছেন, ‘‘টাকা তো নেই!’’ আর বেলেঘাটা কানেক্টর অঞ্চলের ওই হাসপাতালের কর্তারা এই জানুয়ারি মাসেও কপালের ঘাম মুছে বলছেন, ‘‘হাসপাতালের ইতিহাসে এমন রোগীর পাল্লায় কখনও পড়েছি বলে মনে পড়ছে না।’’

এ হেন রোগীর নাম শ্রীপর্ণা ভট্টাচার্য। বাড়ি ঢাকুরিয়ার শরৎ ঘোষ গার্ডেন রোডে। স্বামীর নাম কণিষ্ক ভট্টাচার্য। পুলিশের খাতায় জুয়াচুরির জন্য একাধিক বার ওই দম্পতির নাম উঠেছে। জেলও খেটেছেন দু’জনে। পাড়ায় তাঁরা ‘বান্টি-বাবলি’ নামে পরিচিত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, স্বামী-স্ত্রীর এই জুটি তাঁদের রীতিমতো ঘোল খাইয়ে ছাড়ছে!

গত ১৮ ডিসেম্বর আসন্নপ্রসবা শ্রীপর্ণাকে ওই হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসেন কণিষ্ক। ভর্তি করেন দামি কেবিনে। ওই দিনই গভীর রাতে সিজার করে তাঁর পুত্রসন্তান হয়। ২১ ডিসেম্বর তাঁকে ছুটি দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু বাচ্চাটির জন্ডিস ধরা পড়ায় তাকে আরও তিন দিন নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। ২৫ ডিসেম্বর তাঁদের বাড়ি যাওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালের অভিযোগ, ‘‘আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু’’ করে দেরি করতে থাকেন শ্রীপর্ণা-কণিষ্ক। ১ জানুয়ারির পর থেকে কণিষ্ক উধাও হয়ে যান। বন্ধ করে দেন মোবাইল ফোনও। সদ্যোজাত-সহ নামী হাসপাতালের দামি কেবিনে থেকে যান শ্রীপর্ণা।

এর পরেই হাসপাতাল বেকায়দায় পড়ে। শ্রীপর্ণা জানিয়ে দেন, তাঁর কাছে কোনও সঞ্চয় নেই। হাসপাতাল চাইলে তাঁকে আর বাচ্চাকে রাস্তায় বার করে দিতে পারে। আরও জানান, স্বামীর বেআইনি কাজকর্মের জন্য আত্মীয়স্বজনেরাও কেউ সম্পর্ক রাখেন না। তাঁদের সাড়ে সাত বছরের একটি ছেলে আছে। স্বামী-ছেলে নিয়ে তিনি ঢাকুরিয়ায় বাপের বাড়িতে থাকেন। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর মা রাখী বসু রায় ও বাবা শ্যামল বসু রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, জামাইয়ের লাগাতার কুকীর্তিতে তাঁরা তিতিবিরক্ত। মেয়েও জামাইয়ের কথায় চলে। এমন মেয়ের জন্য একটি পয়সাও তাঁরা খরচ করবেন না। তাই হাসপাতাল থেকে নিয়েও আসবেন না।

রাখীদেবীর কথায়, ‘‘জামাই অমানুষ। মেয়ে তার কথায় নাচে। আমাদের মানসম্মান সব গিয়েছে। আমার স্বামীর কিছু দিন আগে সেরিব্রাল হয়েছে। আমাদের আর কোনও সঞ্চয় নেই। হাসপাতাল ওদের সঙ্গে যা পারে করুক।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘কোনও আত্মীয় ছাড়া রোগীকে আমরা এমনি ছেড়ে দিতে পারি না। তা ছাড়া একটা মানবিক ব্যাপারও রয়েছে। আবার পুলিশ দিয়ে যদি বাড়ি পাঠিয়ে দিই, তা হলে আমাদের সাড়ে তিন লক্ষ টাকা লোকসান। তাই কী করব ভেবে না-পেয়ে মা আর বাচ্চাকে প্রায় এক মাস হল হাসপাতালেই রেখে দেওয়া হয়েছে। মা দামি কেবিনে ছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে শুধু জেনারেল বেডে আনা হয়েছে।’’

যাকে নিয়ে এত কিছু, সেই শ্রীপর্ণা বুধবার ১১ জানুয়ারি হাসপাতালে বসে হাসিমুখেই বললেন, ‘‘এই হাসপাতালেই আমার বড় ছেলে হয়েছিল। তখন এক আত্মীয় ৭৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এ বার তেমন কাউকে জোগাড় করতে পারলাম না। এখন মনে হচ্ছে, কোনও সরকারি হাসপাতালে গেলেই হত।’’

আর তার পরেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাচ্চা হয়ে গিয়েছে। আমার যাওয়ারও জায়গা নেই। বর পালিয়েছে। এখন হাসপাতাল রাখলে থাকব, বার করে দিলে বেরিয়ে যাব। টাকা দিতে পারব না।’’

Married Couple Fraud Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy