Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

জ্বরের রোগীর ঠাঁই নেই বেসরকারিতে

ডেঙ্গির আতঙ্ক হাসপাতালে ভর্তির চাহিদা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জ্বর হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছেন।’’

জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড়। বেলেঘাটা আই ডি কলেজ হাসপাতালে। ছবি: শৌভিক দে

জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড়। বেলেঘাটা আই ডি কলেজ হাসপাতালে। ছবি: শৌভিক দে

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৩
Share: Save:

দিন কয়েক ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। পাড়ার চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রক্তের নমুনা পরীক্ষা করায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে সল্টলেকের বাসিন্দা পঁচাত্তর বছরের এক বৃদ্ধার। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় চিকিৎসক পরামর্শ দেন হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি। দ্রুত ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট’ করতে হবে। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিজনেদের জানান, শয্যা নেই। তাই ভর্তি করা যাবে না। ফের বৃদ্ধাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় পরিবার।

পাটুলির বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তি চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন, দিনে একাধিক বার বমি হচ্ছে। ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের গিয়ে ভর্তি হতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করার পরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। তার পরে তিনি জানান, হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। তাই তাঁকে ভর্তি করা যাবে না।

শহর জুড়ে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ফি-দিন বাড়ছে। ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি-আতঙ্ক। এর মধ্যেই একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। শনিবার মুকুন্দপুর থেকে সল্টলেক— একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে এমন বহু ঘটনা নজরে পড়েছে। যেমন, মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়লেও এ দিন হাসপাতাল আক্রান্তকে ভর্তি নেয়নি। জানানো হয়েছে, বাড়িতে থেকে চিকিৎসা সম্ভব।

রোগীর পরিজনদের একাংশের অভিযোগ, ডেঙ্গি বা অন্য জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা বিশেষ ব্যয়বহুল নয়। তাই বেসরকারি হাসপাতাল আক্রান্তদের ভর্তি করতে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমনকী রক্ত পরীক্ষা করাতেও বেসরকারি হাসপাতাল সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলছেন রোগীর পরিজনেরা। তাঁদের দাবি, বহির্বিভাগে চিকিৎসককে দেখানোর পরে জ্বরে আক্রান্তের রক্ত পরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে গেলে, তাঁরা ফিরিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে মনে করছেন, ডেঙ্গি নিয়ে বিতর্ক এড়াতেই রক্ত পরীক্ষায় অনীহা প্রকাশ করছেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

যদিও এই সব অভিযোগ মানতে নারাজ অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, হাসপাতালে শয্যার অভাবের জন্য অনেক সময় রোগী ফেরাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। ই এম বাইপাসের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘প্রচুর রোগীর চাপ চলছে। ভর্তির সুবিধার জন্য বিভাগ ভিত্তিক বেড রাখা হচ্ছে না। শুধুমাত্র পুরুষ ও মহিলা পিছু বেডের হিসেব রাখা হচ্ছে। এর পরেও চাপ কমানো যাচ্ছে না। অন্য বিভাগের শয্যা ক্রিটিকাল কেয়ার এবং মেডিসিনে রাখা হয়েছে। এর পরেও কিছু রোগীকে ফেরাতে বাধ্য হচ্ছি।’’

ডেঙ্গির আতঙ্ক হাসপাতালে ভর্তির চাহিদা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জ্বর হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছেন। তাই ভর্তির চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু জ্বর হলে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করানো যায়। এমনকি ডেঙ্গি আক্রান্তেরও বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো যায়। ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে চিকিৎসকেরা অবশ্যই ভর্তি করছেন। রোগীর পরিজনেদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তির থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার উপরে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হোক।’’

বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র তরফে এম পি মেহতা বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় অনেক সময় হাসপাতাল রোগী ফেরাতে বাধ্য হচ্ছে। তবে, কোনও রোগীর পরিবার যদি নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ জানান তা হলে সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। সংগঠনের পরবর্তী বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE