Advertisement
E-Paper

দুর্গন্ধ-আবর্জনায় ‘নরক’ হাসপাতালের শৌচালয়

দুর্গন্ধ তেমন না থাকলেও বিড়ালের উৎপাতে শৌচালয়ে যাওয়াটাই সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০২:১৫
এমনই অবস্থা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। নিজস্ব চিত্র

এমনই অবস্থা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। নিজস্ব চিত্র

ওয়ার্ডের সামনের লম্বা বারান্দার দু’পাশে অস্থায়ী শয্যা পেরিয়ে শেষ প্রান্তে পৌঁছনোর কয়েক পা আগেই থমকে যেতে হয়। দুর্গন্ধে শ্বাস নিতেও সমস্যা হয় সেখানে। নাকে রুমাল বেঁধে কোনও ভাবে একটু এগোলেই বেসিন। তার নীচে ছড়িয়ে উচ্ছিষ্ট খাবার। পাশেই এক চিলতে শৌচালয়। ঢুকলেই চোখে পড়বে ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন। তারই মধ্যে শৌচকর্ম সারছেন গর্ভবতী ও সদ্যোজাতের মায়েরা। শৌচালয়ের সেই বীভৎস পরিস্থিতি সইতে না পেরে বেরিয়েই বমি করে ফেলছেন কেউ কেউ। তাও ছড়িয়ে থাকছে দরজার আশপাশে। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের ছবিটা এ রকমই।

দুর্গন্ধ তেমন না থাকলেও বিড়ালের উৎপাতে শৌচালয়ে যাওয়াটাই সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে। শৌচালয়ে ঢোকার মুখেই উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলার জায়গা। তা ঘিরেই দিনভর গোটা সাতেক বিড়ালের আনাগোনা। অভিযোগ, কোনও রোগী শৌচালয়ে ঢুকতে গেলেই তাঁদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিড়ালের দল।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের শৌচালয়ে আবার দরজাই ঠিকমতো বন্ধ হয় না। ফলে রোগীরা শৌচালয়ে ঢুকলে পরিজনকে দরজার সামনে দাঁড়াতে হয়। অতি অপরিচ্ছন্ন সেই শৌচালয়ের দরজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেও অসুস্থ বোধ করেন অনেকে। চারপাশে পোকা ও মাছিতে ভর্তি সেই শৌচালয় যে একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য, তা নিয়ে বারবার বলেও লাভ হয় না, অভিযোগ বেশ কিছু রোগীর।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের শৌচালয় হল বাতিল জিনিস জমানোর জায়গা। শৌচালয়ের পাশেই পড়ে থাকে প্লাস্টিকের ড্রাম, মরচে ধরা লোহা। শৌচালয়ের মেঝে ভরে থাকে ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিনে। সেই শৌচালয়ই ব্যববার করতে বাধ্য হন স্ত্রীরোগ বিভাগের রোধীরা।

এমন সব শৌচালয় থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ে রীতিমতো কাঁটা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীনেরা। রোগীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য-বিধির বালাই নেই কোথাও।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন সাবিনা বিবি। সন্তানসম্ভবা সাবিনা জানান, দুপুর বা রাতে খাবারের শেষে শৌচালয় যেতেই তাঁর ভয় করে! তিনি বলেন, ‘‘দুর্গন্ধে শ্বাস নেওয়াও কষ্ট। খাওয়ার পরে শৌচালয়ের আশপাশে গেলেই বমি হয়।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগের শৌচালয়ের।

হাসপাতাল পরিষ্কারের পাশাপাশি কুকুর-বিড়ালের উৎপাত কমানোর দিকেও নজর দিলে শান্তিতে রাতে ঘুমতে পারতেন বলে জানাচ্ছেন এনআরএসের এক সদ্যোজাতের মা রিয়া কর্মকার। চিকিৎসক তাঁকে দু’দিন হাসপাতালে থাকতে বলেছেন। অভিযোগ, সন্তান জন্মের পরে প্রথম রাতে একটুও ঘুমতে পারেননি রিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চার জন্য ভয় লাগে! বিছানায় রেখে গেলে বিড়াল যদি আঁচড়ে দেয়!’’ আরজিকরের রোগীদের আর্জি, মরচে প়ড়া লোহার জিনিস সরিয়ে, স্যানিটারি ন্যাপকিন ফেলার ব্যবস্থা করলে শৌচালয়ের পরিবেশ কিছুটা ব্যবহারোপযোগী হয়।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যে ওয়ার্ডে গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যোজাতেরা থাকে, সেখানে পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বিশেষত, সন্তান প্রসবের পরে মা পরিচ্ছন্ন জায়গায় না থাকলে সংক্রমণ হতে পারে। অপরিচ্ছন্ন শৌচালয় সেই ঝুঁকি বাড়ায়।

সরকারি হাসপাতাল কেন সংক্রমণের আতুড়ঘর হয়ে উঠছে? হাসপাতালের কর্তা থেকে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ মহল, স্পষ্ট জবাব মেলেনি কারও কাছেই। হাসপাতালের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরিচ্ছন্নতার দিকে যথেষ্ট নজরদারি বেড়েছে। কর্মীরা দিনে একাধিক বার শৌচালয় পরিষ্কার করছেন। শৌচালয় ব্যবহার সম্পর্কে রোগীদের একাংশের ধারণা নেই। রোগীদেরও শৌচালয় পরিষ্কার ভাবে ব্যবহারে করতে হবে।

তবে, স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের বাইরে রং করার কাজ সহজ। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে মানুষকে বোঝানো এবং লাগাতার তাতে নজর রাখা কঠিন। তাই বাইরে ঝকঝক করলেও অনেক সময়ে ভিতরে সমস্যা থেকে যাচ্ছে। তবে কর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নজরদারির কাজও চলছে।’’

Hospitals Garbage Toilets
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy