Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Sealdah Station

বাড়ছে খদ্দের, আশায় বুক বাঁধছে পাইস হোটেল

শিয়ালদহ এলাকায় আশপাশের দোকান, বাজার সবই খোলা রয়েছে। ফলে খদ্দের যে একেবারে নেই, তা নয়।

শিয়ালদহের এক পাইস হোটেলে। ছবি: সুমন বল্লভ

শিয়ালদহের এক পাইস হোটেলে। ছবি: সুমন বল্লভ

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০২:৫৬
Share: Save:

করোনার কারণে লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধের জেরে গত কয়েক মাস ব্যবসায় লাভের মুখ দেখেননি। ট্রেন না চলায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে দোকানে খেতে আসা লোকেদের সংখ্যা। অভিশপ্ত সেই সব দিন কি তা হলে এ বার শেষ হতে চলেছে? আজ, বুধবার থেকে লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার খবরে এমনটাই ভাবছেন শিয়ালদহ স্টেশনের আশপাশের ফুটপাতে বসা ছোট পাইস হোটেল এবং শিয়ালদহ উড়ালপুলের নীচে থাকা ছোট ছোট খাবারের দোকানের মালিকেরা।

মঙ্গলবার শিয়ালদহে এনআরএস হাসপাতালের গা ঘেঁষে ফুটপাতের উপরে একটি পাইস হোটেলের চেয়ার-টেবিলে বসে দুপুরে মাছ-ভাত খাচ্ছিলেন কয়েক জন। তাঁদের খাওয়ার তদারকি করতে করতে ওই হোটেলের মালিক রাজবাহাদুর সিংহ বললেন, ‘‘ভরদুপুরে ফাঁকা পাইস হোটেলের এমন দৃশ্য তো গত কয়েক মাস ধরে দেখে আসছি। অথচ আগে এই সময়ে এত খদ্দের থাকতেন যে, সকলকে বসতেও দেওয়া যেত না। এক জন খেয়ে চেয়ার ছাড়লে তবেই আর এক জন খেতে বসতে পারতেন। এখন ডেকে ডেকেও খদ্দের পাই না।’’

শিয়ালদহ এলাকায় আশপাশের দোকান, বাজার সবই খোলা রয়েছে। ফলে খদ্দের যে একেবারে নেই, তা নয়। তবে লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে যে সেই খদ্দেরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে, তা গত কয়েক মাসে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন ওই সমস্ত খাবারের হোটেলের মালিকেরা। রাজবাহাদুরের কথায়, ‘‘এমন অনেকেই আমাদের হোটেলে প্রতিদিন খেতেন, যাঁরা ট্রেনে করে রোজ শহরে আসতেন। আর কাজ সেরে এখানে খেয়ে বাড়ি ফিরতেন। সব মিলিয়ে সারা দিনে ৫০০ জনেরও বেশি খদ্দের হত। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় গত কয়েক মাসে এত খদ্দের এক দিনও হয়নি।”

আরও পড়ুন: গ্রিন করিডরে হাসপাতালে প্রসূতি

শিয়ালদহ এলাকার আর একটি পাইস হোটেলে কী কী পদ মিলবে, তার দাম-সহ ঝোলানো রয়েছে মেনু। কিন্তু করোনার কারণে তাতে লেখা পদের সব ক’টি যে এত দিন বানানো হচ্ছিল না, তা অকপটে জানাচ্ছেন মালিক কার্তিক দে। কারণ, ট্রেন না চলায় গত কয়েক মাস ক্যানিং থেকে কাজেই আসতে পারেননি তাঁর প্রধান রাঁধুনি! তবে কার্তিকবাবুর আশা, ট্রেন চললে আসবেন রাঁধুনি, আসবেন খদ্দেররাও। তাঁর কথায়, “এই ক’মাস তো খদ্দেরের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। তাই তাঁদের সামলাতে বাড়ির লোকেরাই হোটেলটা চালিয়ে নিয়েছি। দুই খুড়তুতো ভাই হোটেল চালাতে সাহায্য করেছেন আমায়।”

লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার সিদ্ধান্তে খুশি শিয়ালদহ চত্বরে কাজে আসা মানুষেরাও। ট্রেন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে গত কয়েক মাস বাসে করেই কাজে আসতে হচ্ছিল অনুপম হাজরাকে। শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর সংলগ্ন এলাকায় তাঁর জামাকাপড়ের দোকান রয়েছে। দুপুরে পেট ভরাতে ভরসা স্থানীয় পাইস হোটেলগুলিই। বলছেন, ‘‘এখন খদ্দের কম বলে খাবারের পদের সংখ্যাও কমে গিয়েছে। মাছ বলতে শুধুই চারাপোনা আর রুই। ট্রেন চললে খেতে আসা লোকের সংখ্যা বাড়বে। তা হলে হয়তো আরও পদ রান্না করবে।’’
শিয়ালদহ এলাকার আর একটি খাবারের হোটেলের মালিক নিভা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার জানাচ্ছেন, প্রাক্ করোনা পর্বে রুই-কাতলা থেকে শুরু করে পমফ্রেট, ইলিশ, পাবদা, ট্যাংরা— সব ধরনের মাছই মিলত তাঁর হোটেলে। কিন্তু সংক্রমণের কারণে খদ্দের কমে যাওয়ায় রকমারি মাছের পদ তো বটেই, এমনকি হোটেলটাও বন্ধ রেখেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘সাত মাস তো হোটেল বন্ধ ছিল। ট্রেন চলবে জেনে হোটেল খুলেছি। ট্রেন চলতে শুরু করলে পুরনো খদ্দেররাও ফিরবেন। তখন পমফ্রেট-ইলিশ-পাবদাও ফিরবে মেনুতে।’’

ট্রেনের চাকা চলতে শুরু করলে চেনা মুখগুলির সঙ্গে পুরনো আত্মীয়তাও ফিরবে বলে আশাবাদী আর একটি খাবারের হোটেলের কর্মী সুভাষ দাস। বলছেন, ‘‘চেনা মানুষগুলোর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কটাও যেন কেড়ে নিয়েছে করোনা। আবার ট্রেন চালু হলে ওঁরা ফের খেতে আসতে শুরু করবেন। টানা কয়েক মাস পরে ফের ওঁদের দেখা পাওয়াটাও এক পরম প্রাপ্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sealdah Station Local Train Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE