Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বাড়ি ভেঙে মৃত্যু চলছেই

ঘটনাস্থল এ বার উত্তর কলকাতার টালা থানার ৭৫/১বি বিটি রোড। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ ওই ঘটনায় পূজাকুমারী গুপ্ত (১৭) নামে এক কিশোরী গুরুতর জখম হয়। পাড়ার লোকজন উদ্ধার করে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অঘটন: দুর্ঘটনার পরে বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দিচ্ছেন পুরসভার কর্মীরা। শনিবার, টালায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অঘটন: দুর্ঘটনার পরে বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দিচ্ছেন পুরসভার কর্মীরা। শনিবার, টালায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২২
Share: Save:

বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে ফের মৃত্যু হল শহরে। তিন মাসে এ নিয়ে ন’জন। ঘটনাস্থল এ বার উত্তর কলকাতার টালা থানার ৭৫/১বি বিটি রোড। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ ওই ঘটনায় পূজাকুমারী গুপ্ত (১৭) নামে এক কিশোরী গুরুতর জখম হয়। পাড়ার লোকজন উদ্ধার করে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর জুড়ে এই মুহূর্তে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা হাজার তিনেক। একের পর এক দুর্ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে ওই সব বাড়ির বাসিন্দাদের। অথচ, এ ব্যাপারে যাদের ভূমিকা সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাদের বিশেষ হেলদোল নেই। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনের ঘটনার পরে জানিয়েছেন, ওই এলাকায় আরও কয়েকটি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, অবিলম্বে ওই সব বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের বার করে দিতে হবে।

কী ঘটেছিল শুক্রবার রাতে? পূজার বড় দাদা, পেশায় অটোচালক সন্দীপ জানান, শুক্রবার বিকেলে তিনি ও তাঁর মা কাঁকিনাড়ায় মাসির বাড়ি যান। রাতে সেখানেই ছিলেন। শুক্রবার রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে তাঁর বাবা ও ভাই বাড়ির সামনে রাস্তায় অটোর ভিতরেই ঘুমোচ্ছিলেন। বোন ছিল ঘরের ভিতরে। আচমকা বা়ড়ি ধসে পড়ার আওয়াজে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। পাড়ার লোকজনের সাহায্যে পূজাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। সন্দীপের বাবা ও ছোট ভাইও অটো চালান।

মৃত পূজাকুমারী গুপ্ত

সন্দীপের অভিযোগ, তাঁদের ভাড়া বাড়ির ছাদে শুক্রবার বিকেলে এক দল লোক উঠেছিল বটগাছের শিকড় কাটার জন্য। তাঁর অনুমান, সুরকির ছাদের ভিতর থেকে বটের শিকড় সরিয়ে ফেলার জন্যই ছাদ আলগা হয়ে যায় এবং ধসে পড়ে গোটা বা়ড়ি। টিনের চালের নীচে থাকতেন তাঁরা। ছাদের কংক্রিট টিনের চালে পড়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

শনিবার পুলিশ জানায়, ওই বাড়িটি বহু পুরনো। মাসখানেক আগেও ওই বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছিল। শুক্রবার রাতে টহলদার পুলিশ দুর্ঘটনার খবর জানায় পুরসভার কন্ট্রোল রুমে। সেখান থেকে খবর যায় এক নম্বর বরো অফিসের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। রাতেই পুরসভার ডেমোলিশন স্কোয়াডের কর্মীরা গিয়ে ওই বাড়ির বাকি অংশ ভাঙার কাজ শুরু করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, তিন কাঠা জমি জুড়ে তৈরি ওই বাড়ির মালিকানা নিয়ে দুই শরিকের মধ্যে আদালতে মামলা চলছে। তবে, বাড়িটি যে বিপজ্জনক, এক শরিকের তরফে টালা থানা ও পুরসভার এক নম্বর বরো অফিসে বছর কয়েক আগে তা জানানো হয়েছিল। স্থানীয় বরো সূত্রের খবর, ২০০১ সালে সেখানে ‘সাবধান! বিপজ্জনক বাড়ি’ লেখা নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্যস, ওই পর্যন্তই।

ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?

পুর অফিসারদের কথায়, নোটিস টাঙানোর পরে মানবিক কারণেই কাউকে জোর করে ওই সব বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হত না এতকাল। গত সেপ্টেম্বরে পাথুরিয়াঘাটায় বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হুঁশ ফেরে পুরসভার। এর পরেই নতুন আইন করে রাজ্য সরকার।

কী করতে পেরেছে পুরসভা এখনও পর্যন্ত? বিল্ডিং দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, আইন প্রয়োগের জন্য একটা স্কিম করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাড়ির মালিক বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়লে ১০০ শতাংশ ছাড় পাবেন। তবে, তার আগে ওই বাড়ি ‘কনডেম্ড’ (বসবাসের অযোগ্য) বলে ঘোষণা করতে হবে। পুরসভা বিজ্ঞাপন দিয়ে এ সব জানালেও তেমন সাড়া মেলেনি। অন্য যুক্তিও দেখাচ্ছেন বাড়ির মালিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, বাড়ি বিপজ্জনক। সেখানে থাকাটা যে ঝুঁকির, সে কথা পুরসভাই বলছে। অথচ, ওই বাড়িতে ব্যবসায়ী থেকে ভাড়াটে, সবাই বছরের পর বছর থাকার অনুমতি পেয়ে যাচ্ছেন। রেন্ট কন্ট্রোলে টাকাও জমা পড়ছে। এ সব বন্ধ না হলে বিপজ্জনক বাড়ি কেউ ছাড়তে চাইবেন না।

এ দিনের ভেঙে পড়া বাড়ির মালিকপক্ষ কুমার পরিবার সূত্রে খবর, বাড়ি সারানোর জন্য তাঁরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভাড়াটেরা ঘর খালি না করায় তা সম্ভব হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BT Road House Collapsed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE