Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩

ত্যাগ করেছেন স্বামী, স্ত্রীর ‘ঠাঁই’ বারান্দায়

থানায় যাওয়ার ‘অপরাধে’ গত ৬ মার্চ সর্বাণীকে বেধড়ক মারধর করা হয়, এমনকী হাতে কামড়েও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

বারান্দায় সর্বাণী চন্দ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বারান্দায় সর্বাণী চন্দ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

স্বামী তাঁর সঙ্গে থাকতে চান না। শ্বশুর-শাশুড়ির দাবি, শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে তাঁকে! রাজি না হওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়েছে জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বেলঘরিয়া পশ্চিমপল্লির বাসিন্দা সর্বাণী চন্দ। থানায় যাওয়ার ‘অপরাধে’ গত ৬ মার্চ সর্বাণীকে বেধড়ক মারধর করা হয়, এমনকী হাতে কামড়েও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

ওই দিনই লালবাজারের দ্বারস্থ হন সর্বাণী। তাঁর দাবি, অভিযোগ জানিয়ে ফেরার পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে থাকা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অভিযোগ, থানায় যাওয়ার ‘অপরাধে’ শ্বশুরবাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বাড়ির বারান্দায় কোনও মতে দিন কাটছে তাঁর। এমনকী, তাঁকে বাড়ির শৌচাগারও ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এক জন মহিলা বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না। নানা ভাবে নিগৃহীতা হচ্ছেন। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘সর্বাণীর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। রাতবিরেতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে দায় কে নেবে?’’

সর্বাণীদেবীর কথায়, ‘‘বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার উপায় নেই। এ ভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?’’ যদিও সর্বাণীর শাশুড়ি আলোকরানি চন্দের দাবি, ‘‘কেউ বউমাকে মারেনি। ঘরে থাকুক না, কে মানা করেছে?’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকে আমাদের সমস্যায় ফেলেছে। এখন সেই কাজের শাস্তি পাচ্ছে।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, ২৪ বছর আগে বেলঘরিয়ার সঞ্জয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সোদপুরের সর্বাণীর। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন তাঁরা। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে বাড়িছাড়া সঞ্জয়। সর্বাণী ও সঞ্জয়ের এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। বছর কয়েক আগে বিয়ে হয়ে যায় সর্বাণীর নাবালিকা মেয়ের। তবে বর্তমানে এক কন্যাকে নিয়ে পিত্রালয়ে ফিরে এসেছে সে। সর্বাণীর অভিযোগ, ফিরে আসার পর থেকেই দাদু-দিদার মতো মেয়েও মাকে বাড়িছাড়া করতে চায়। আর সর্বাণীর ছেলে চায়, অন্য কোথাও ভাড়াবাড়িতে চলে যাক মা।

Advertisement

কামারহাটি পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে পাকা বাড়ি সর্বাণীদের। বেশ কয়েকটি ঘর নিয়ে থাকেন শ্বশুর-শাশু়ড়ি। আগে একটি ছোট ঘরে থাকতেন সর্বাণীরা। এখন সেই ঘরেও তালা পড়ে গিয়েছে।

মলয় সামন্ত নামে এক প্রতিবেশী জানান, সর্বাণীর শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। লাভ হয়নি। মলয়বাবুর কথায়, ‘‘সর্বাণীর শ্বশুর-শাশুড়ির এলাকায় প্রভাব রয়েছে। কাউন্সিলরের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর রূপালি সরকার বলেন, ‘‘সর্বাণী নন, ওঁর শাশুড়ি আমার কাছে অভিযোগ করতে এসেছিলেন। পুলিশে যেতে বলেছি।’’ বেলঘরিয়া থানায় যোগাযোগ করা হলে এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ নিয়েছি। ব্যাপারটা দেখছি! উনিই তো লালবাজারে চলে গেলেন!’’ যদিও স্থানীয়দের দাবি, জানুয়ারি থেকে বারবার থানায় গিয়ে কাজ না হওয়ায় লালবাজারে গিয়েছিলেন সর্বাণী। তবে ওই মহিলাকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে রাজ্যের মহিলা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খোঁজ করে দেখছি। আমরা ওঁর পাশে রয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.