Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাবার ‘ক্লাস কেটে’ সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন

সেই তিনি, আজকের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।

যুগলে: নোবেল প্রাপ্তির খবর পাওয়ার পরে বস্টনের বাড়িতে এস্থার এবং অভিজিৎ। ছবি: এএফপি

যুগলে: নোবেল প্রাপ্তির খবর পাওয়ার পরে বস্টনের বাড়িতে এস্থার এবং অভিজিৎ। ছবি: এএফপি

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

বন্ধুদের চাপে পড়ে বাবার ‘ক্লাস কেটে’ সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালে, নিউ এম্পায়ার হলে। সিনেমার নাম ছিল ‘স্টার ওয়ার’। সে দিনই কলেজে অর্থনীতির ক্লাস ছিল তাঁর বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাবার ক্লাস ফাঁকি দেওয়া নিয়ে গোড়ায় কিছুটা আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের চাপে তা ধোপে টেকেনি। কিছুটা অনিচ্ছা নিয়েই তিনি গিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে।

সেই তিনি, আজকের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। যে খবরে উচ্ছ্বসিত তাঁর সহপাঠীরা। স্কুল থেকে কলেজ, সকলেই আজ তাঁদের প্রিয় ‘ঝিমা’র কথা বলতে ব্যস্ত। ঝিমা, অর্থাৎ অভিজিৎ বিনায়কের ডাকনাম। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে তাঁর সহপাঠী অভিজিৎ পাঠক জানালেন, একেই তাঁদের দু’জনেরই নাম অভিজিৎ। তায় অভিজিৎ বিনায়কের নামটা ছিল বেশ বড়। তাই ঝিমা বলে ডাকতে সুবিধা হত। আর সেই সময়ে সাউথ পয়েন্ট থেকে ভর্তি হয়েছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক-সহ একঝাঁক ছাত্র।

তারাও সবাই তাঁকে ঝিমা বলে ডাকতেন। তাই কলেজের নতুন বন্ধুরাও অভিজিৎ বিনায়ককে ওই নামে ডাকতে শুরু করেন।

সাউথ পয়েন্টের সহপাঠীদের সঙ্গে অভিজিৎ।

স্মৃতিচারণ করতে করতে অভিজিৎবাবু এ দিন জানালেন, চুপচাপ স্বভাবের ছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক। ঝোঁক ছিল পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রতি। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘বব ডিলান বলে যে এক জন গায়ক আছেন, তা আমি জেনেছিলাম অভিজিতের থেকেই। বিদেশি সিনেমা নিয়েও ওর আগ্রহ ছিল। মনে আছে, কলেজ স্ট্রিটে আমেরিকান সেন্টারে ও আমাকে সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। দেখেছিলাম চার্লি চ্যাপলিনের ‘মডার্ন টাইমস’ এবং ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’।’’ অভিজিৎবাবুরা যখন প্রেসিডেন্সিতে অর্থনীতি পড়ছেন, তখন সেখানে বিভাগীয় প্রধান অভিজিৎ বিনায়কের বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘বিভাগীয় প্রধানের ছেলে বলে

ঝিমার আচরণে কোনও দিন অন্য রকম কিছু পাইনি। বরং কলেজে বাবাকে এড়িয়েই চলত।’’

অভিজিৎবাবু আরও জানান, তাঁদের দু’জনেরই হাতের লেখা খুব খারাপ ছিল। অভিজিৎ বিনায়ক শুধু প্রেসিডেন্সিতেই নয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে এক বার অভিজিৎবাবু বন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এত খারাপ লেখা নিয়ে তিনি কী করে এত ভাল ফল করছেন। উত্তরে অভিজিৎ বিনায়ক তাঁকে জানান, কেউ এক জন তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন পরীক্ষার খাতায় বড় বড় অক্ষরে লিখতে। যাতে হাতের লেখা খারাপ হলেও পরীক্ষক বুঝতে পারেন। অভিজিৎবাবু জানালেন, তাঁর স্ত্রী চন্দনা প্রেসিডেন্সির অর্থনীতি বিভাগেই তাঁদের সহপাঠী। চন্দনাদেবীর সঙ্গেই ক্লাসে এক বেঞ্চে বসতেন

অভিজিৎ বিনায়ক।

পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অভিজিৎবাবুর স্মৃতিচারণ, ‘‘তখন অভিজিতেরা থাকতেন মহানির্বাণ রোডে। সেখানে কত বার গিয়েছি। অভিজিতের মা-বাবা দু’জনেই খুব ভাল রান্না করতেন। এখন শুনি অভিজিৎও খুব ভাল রান্না করতে পারে।’’ বন্ধুর এমন সাফল্যের খবর শুনে ইতিমধ্যেই তাঁকে ই-মেল করে রেখেছেন অভিজিৎবাবু।

প্রেসিডেন্সি কলেজে অভিজিৎ বিনায়কের আর এক সহপাঠী, বর্তমানে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের চিফ জেনারেল ম্যানেজার (মুম্বই) কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার সেখান থেকে উচ্ছ্বসিত হয়ে ফোনে বললেন, ‘‘ওর এটা প্রাপ্য ছিল।’’ কৃষ্ণেন্দুবাবু জানালেন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও উর্দু ভাষায় আগ্রহ ছিল অভিজিৎ বিনায়কের। অন্য পড়ুয়ার মতো ক্লাসে ভুল করলে তাঁকে বাবার কাছে

বকুনি খেতে দেখেছেন তাঁরা। তেমনই ফুটবল খেলতে না পারলেও এগারো জনের ‘টিম’ না হওয়ায় অভিজিৎ বিনায়ককে ফরোয়ার্ড হিসেবেও খেলতে নামতে হত।

সাউথ পয়েন্ট স্কুলে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একই ক্লাসে, একই সেকশনে পড়েছিলেন অভিজিৎ বিনায়কের সহপাঠী শর্মিলা দে সরকার। শর্মিলাদেবী এখন ওই স্কুলেরই বায়োলজির শিক্ষিকা। বললেন, ‘‘অভিজিৎ ভাল ফুটবল খেলত। আমাদের ক্লাসে একই সেকশনে পড়তেন চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষও। আমাদের ব্যাচের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। অভিজিৎ অবশ্য ওই গ্রুপে নেই। আগামী বছর পুনর্মিলন উৎসব। সেখানে ওকে ডাকতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhijit Vinayak Banerjee Nobel Prize
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE