Advertisement
E-Paper

বধূর মৃত্যুতে নির্যাতনে অভিযুক্ত স্বামী

শনিবার সমর্পিতা দত্ত বর্ধনের (৩৩) দেহ গঙ্গা থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে নরেন্দ্রপুর থানায় এমনই অভিযোগ দায়ের করলেন তাঁর বাবা-মা। তাঁদের আরও অভিযোগ, ন’বছর বিয়ের পরেও স্ত্রীকে কোনও হাতখরচ দিতেন না স্বামী। উল্টে চলত মানসিক অত্যাচার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৯
সমর্পিতা দত্ত বর্ধন।

সমর্পিতা দত্ত বর্ধন।

এক প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে এনেছিলেন স্ত্রী। অভিযোগ, ১২০ টাকা খরচ করে স্ত্রী কেন বিরিয়ানি কিনতে গেলেন, তা নিয়ে স্বামী অফিস থেকে ফিরেই শুরু করেছিলেন ঝগড়া। এমনকি, স্ত্রীকে মারধর করেন বলেও অভিযোগ।

শনিবার সমর্পিতা দত্ত বর্ধনের (৩৩) দেহ গঙ্গা থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে নরেন্দ্রপুর থানায় এমনই অভিযোগ দায়ের করলেন তাঁর বাবা-মা। তাঁদের আরও অভিযোগ, ন’বছর বিয়ের পরেও স্ত্রীকে কোনও হাতখরচ দিতেন না স্বামী। উল্টে চলত মানসিক অত্যাচার। আর তা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তাঁদের মেয়ে। গত বুধবার থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সমর্পিতা। জামাই সায়নেন্দ্র নারায়ণ বর্ধনের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন সমর্পিতার বাবা-মা। রবিবার সায়নেন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি বুঝতেই পারছি না আমার স্ত্রী স্কুল থেকে কী ভাবে, কার সঙ্গে গঙ্গায় গেল। সেটাই আমার কাছে রহস্য।’’ স্ত্রীর সঙ্গে বচসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কিছুই হয়নি। কোনও গোলমাল হয়নি।’’ সমর্পিতার মা-বাবার অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না দাবি করে বলেন, ‘‘স্ত্রীর দেহ নেওয়ার জন্য সকাল থেকে থানার বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। শুনলাম, শ্বশুরবাড়ির তরফে দেহ নিতে চাওয়া হয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার ঢালুয়ার বাসিন্দা সমর্পিতা গত বুধবার সকালে ছেলেকে লেক থানা এলাকার একটি স্কুলে দিতে গিয়েছিলেন। তাঁদের বছর ছ’য়েকের ছেলে ওই স্কুলের নার্সারি টুয়ের ছাত্র। কিন্তু তার পরে সমর্পিতা আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁর মোবাইলও বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর স্বামী সায়নেন্দ্র নারায়ণ বর্ধন বুধবার বিকেলে লেক থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কিন্তু সমর্পিতার খোঁজ মেলেনি।

সমর্পিতার ভাই একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তিনি চিংড়িঘাটায় ভাড়া থাকেন। দিদির খোঁজ না মেলায় বৃহস্পতিবার তিনি সায়নেন্দ্র ও এক আত্মীয়ের সঙ্গে লালবাজারের মিসিং পার্সনস স্কোয়াড এবং হোমিসাইড বিভাগে যোগাযোগ করেন। এ দিকে, মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার শিলিগুড়ি থেকে চলে আসেন সমর্পিতার বাবা এবং মা। তাঁরা শনিবার নরেন্দ্রপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মেয়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই বাড়ি ছেড়েছে। সমর্পিতার বাবা স্বপনকুমার দত্ত রবিবার জানান, তিনি জামাইয়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্রপুর থানা শুধু নিখোঁজ ডায়েরিই নেয়। শনিবার সকালে উত্তর বন্দর থানা গঙ্গা থেকে এক মহিলার দেহ উদ্ধার করেছিল। ওই সন্ধ্যায় তাঁর স্বামী ও বাপের বাড়ির লোকজন দেহটি সমর্পিতার বলে শনাক্ত করেন। এর পরেই সমর্পিতার বাপের বাড়ির লোকজন ফের নরেন্দ্রপুর থানায় যান। তবে তাঁদের অভিযোগ, লিখিত ভাবে জানালেও নরেন্দ্রপুর থানা কোনও তদন্ত শুরু করেনি।

সমর্পিতার বাপের বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে তাঁরা দেখাশোনা করে নিউ জলপাইগুড়ির বাসিন্দা সায়নেন্দ্রর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। মেয়ে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছিলেন। সায়নেন্দ্র পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি সল্টলেকের একটি সংস্থায় কর্মরত। সমর্পিতার বাপের বাড়ির অভিযোগ, স্ত্রী সামান্য কিছু টাকা খরচ করলেই নানা ভাবে মানসিক অত্যাচার করতেন সায়নেন্দ্র। অত্যাচার এতটাই বেড়েছিল যে সমর্পিতা আগে দু’বার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলেও যেতে চেয়েছিলেন। সমর্পিতার পরিবারের দাবি, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে স্বামীকে ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে থাকবেন, তা বুঝতে না পেরে মিটমাট করে নেওয়ার কথা বলেন তাঁরা। কিন্তু অত্যাচারের মাত্রা যে আরও বেড়েছে, তা তাঁরা বুঝতে পারেননি বলেই রবিবার দাবি করেছেন সমর্পিতার বাপের বাড়ির সদস্যরা।

উত্তর বন্দর থানার পুলিশ জানিয়েছে, তারা অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক ভাবে মৃতার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।

Death Woman torture
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy