Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Watgunge Murder Case

খুনের আগে কী হয়েছিল দুর্গার সঙ্গে? আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন ‘রিহ্যাব’ থেকে পালানো স্বামী

টাকার জন্য দুর্গাকে নীলাঞ্জন খুন করেছেন, তা মানতে চাননি তাঁর স্বামী। তা হলে কেন খুন করা হল দুর্গাকে? দুর্গার বোনের দাবি, তাঁর দিদিকে কোনও দিনই সহ্য করতে পারতেন না ভাসুর নীলাঞ্জন।

image of durga

টাকার জন্য় খুন করা হয়নি দুর্গাকে, দাবি তাঁর স্বামী ধরণীধর সরখেলের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৬
Share: Save:

খুনের আগে কী ঘটেছিল দুর্গার সঙ্গে? কী হয়েছিল ওয়াটগঞ্জের ওই বাড়িতে? আনন্দবাজার অনলাইনকে সে সব জানালেন নিহত দুর্গা সরখেলের স্বামী ধরণীধর সরখেল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে দাদা নীলাঞ্জন সরখেলের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল ধরণীধরের। তার পর থেকে ধরণীধরের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ধরণীর দাবি, খুনের সময় তিনি ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। তার আগে সাড়ে চার হাজার টাকা দাদাকে ফিরিয়েও দিয়েছিলেন। টাকার জন্য দুর্গাকে তাঁর দাদা নীলাঞ্জন খুন করেছেন, তা মানতে চাননি। তা হলে কেন খুন করা হল দুর্গাকে? দুর্গার বোন বেবি সাউয়ের দাবি, তাঁর দিদিকে কোনও দিনই সহ্য করতে পারতেন না ভাসুর নীলাঞ্জন। ইতিমধ্যেই নীলাঞ্জন গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইনকে ধরণীধর জানিয়েছেন, তিনি অতিরিক্ত নেশা করতেন। সেই কারণে ১২ মাস পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিলেন। দাদা নীলাঞ্জনই পাঠিয়েছিলেন তাঁকে। দুর্গার আর এক বোন সারদা রায়ের দাবি, ভ্রাতৃবধূ না জানিয়েই ভাইকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন নীলাঞ্জন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন, ভাল আছেন। ধরণীধরের কথায়, ‘‘১২ মাস রিহ্যাবে ছিলাম। দাদা পাঠিয়েছিলেন। নেশা করতাম। রোজ মদ খেতাম।’’ ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক আবাসিকের মৃত্যুর পর গত সোমবার সকালে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেই সময় সেখানকার গেট খোলা ছিল। সেই সুযোগে সেখান থেকে পালিয়ে যান ধরণীধর। তিনি জানিয়েছেন, পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে সোজা পৌঁছেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। সেখানে খাওয়াদাওয়া করার পর সোমবার বিকেলে যান ওয়াটগঞ্জের বাড়িতে। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই রাতেই খুন হন দুর্গা।

ধরণীধর নিজেই স্বীকার করেন যে, সোমবার দাদা নীলাঞ্জনের পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। তার পর বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ৩০০ টাকার মদ কিনে খেয়েছিলেন। মত্ত অবস্থায় আবার চলে যান নিজের শ্বশুরবাড়িতে। সোমবার রাতে সেখানেই ছিলেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমি চোর নই। আমি রেলকর্মী।’’

সারদার দাবি, টাকা চুরির কথা জানতে পেরে তাঁর দিদিকে হেনস্থা করেন নীলাঞ্জন। সারদার কথায়, ‘‘দিদির ভাসুর বলেন, তোমার মায়ের বাড়িতে রয়েছে ভাই। সেখান থেকে টাকা নিয়ে এসো। দিদি বলেন, এত দিন যেতে দাওনি! এখন কেন যাব?’’ সারদা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে দিদিকে দেখা করতে দিতেন না নীলাঞ্জন। তাঁদের ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর দিদির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নীলাঞ্জন দেখা করতে দেননি। কিন্তু সোমবার রাতে জোর করে দুর্গাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন নীলাঞ্জন। সারদার দাবি, সোমবার রাত ৯টায় যখন ওয়াটগঞ্জের বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন দুর্গা, তখন তার ভিডিয়ো তুলে রাখেন নীলাঞ্জন। কেন, তা অবশ্য জানাতে পারেননি তিনি। সারদা বলেন, ‘‘সোমবার রাতে দিদি আমাদের বাড়ি এসে টাকা নিয়ে যায় জামাইবাবুর থেকে। সাড়ে চার হাজার টাকা। বাস ছিল না রাতে। ভাই সাইকেলে চাপিয়ে পদ্মপুকুরে বাড়ির কাছে ছেড়ে আসে।’’

সারদার দাবি, রাতে বাড়ি ফিরে ছেলের হাত দিয়ে নীলাঞ্জনকে টাকা ফিরিয়ে দেন দুর্গা। তাঁর দাবি, রাত ১১টার সময় ১৫ বছরের ছেলেকে দুধ দিয়েছিলেন দুর্গা। তার পর জেঠু নীলাঞ্জনের সঙ্গে ঘুমোতে গিয়েছিল সে। তাঁর দিদি সাধারণত শাশুড়ির সঙ্গে ঘুমাতেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ছেলে ঘুম থেকে উঠে মায়ের খোঁজ করে। তখন নীলাঞ্জন জানান, বাবাকে খুঁজতে গিয়েছে তার মা। এর পরেই দুপুর নাগাদ ওয়াটগঞ্জের পরিত্যক্ত ওই ব্যারাক থেকে উদ্ধার হয় দুর্গার খণ্ডিত দেহ।

দুর্গার পরিবারের অভিযোগ, তন্ত্রসাধনা করতেন নীলাঞ্জন। আগেও সেই তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে দুর্গার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁর ভাসুর। হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন দুর্গা। দুর্গার স্বামীও এই তন্ত্রসাধনার কথা মেনে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, আসানসোলে এক মামার কাছে গিয়ে তন্ত্রসাধনা শিখেছিলেন দাদা। তাঁদের ছেলের যখন দু’বছর বয়স, তখন পক্ষাঘাত হয়েছিল দুর্গার। যেমনটা জানিয়েছেন সারদা। সে সময় ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ঠাকুমা। সেই থেকে ওয়াটগঞ্জের বাড়িতে ঠাকুমা, জেঠু, পিসির কাছেই মানুষ ছেলে। দুর্গা এবং তাঁর স্বামী থাকতেন সাঁতরাগাছির কোয়ার্টারে। ধরণীধর জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর আগে নীলাঞ্জন ফোন করে তাঁদের বাড়ি ফিরে আসতে বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে দেখভালের লোক দরকার।

বেবি আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, ছেলেকে কাছে পাবেন বলেই ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন দুর্গা। কারণ, তাঁর ভাসুর ছেলের সঙ্গে দুর্গাকে মিশতে দিতেন না। হুমকিও দিতেন। তবে জামাইবাবুর কোনও দোষ নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু মদ খেতেন। এ ছাড়া কোনও দোষ ছিল না।’’ বেবির অভিযোগ, ভাসুর নীলাঞ্জনই খুন করেছে তাঁর দিদিকে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম থেকে দিদিকে পছন্দ করতেন না নীলাঞ্জন। জামাইবাবু প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর পরিবার মানেনি। ওঁরা ব্রাহ্মণ। বড়লোক ছিল। আমরা অবাঙালি। আমরা গরিব।’’ বেবি আরও জানিয়েছেন, দুর্গাকে তাঁর স্বামী ভালবাসতেন। সেটা সহ্য করতে পারতেন না ভাসুর। অভিযোগের সব দিকই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE