Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাড়ার মেয়ের তৈরি গয়নায় সাজবে প্রতিমা

একটি বারোয়ারি পুজোয় এবার কালীপ্রতিমার গায়ে উঠতে চলছে স্থানীয় বাসিন্দা এক তরুণীর তৈরি গয়না। উদ্দেশ্য, সেই তরুণীকে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করা।

প্রতিমার গয়না নিয়ে মহুয়া সর্দার। নিজস্ব চিত্র।

প্রতিমার গয়না নিয়ে মহুয়া সর্দার। নিজস্ব চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:১৪
Share: Save:

সচরাচর এমনটা হয় না।

পুজো নিয়ে প্রতিযোগিতার যুগে উদ্যোক্তারা প্রতিমার গায়ে সোনা-হীরের কয়েক কোটির গয়না পরান। সেখানে একটি বারোয়ারি পুজোয় এবার কালীপ্রতিমার গায়ে উঠতে চলছে স্থানীয় বাসিন্দা এক তরুণীর তৈরি গয়না। উদ্দেশ্য, সেই তরুণীকে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করা।

মানিকতলার কাছে রামমোহন রায় রোড তরুণ সংঘের পুজোর ২৬ তম বর্ষে এ ভাবেই কালীপ্রতিমার আরাধনায় মেতেছেন উদ্যোক্তারা। জৌলুসে নয়, মানুষকে ভালোবাসলেই যে ঈশ্বরের সেবা করা যায়— সামাজিক ভাবে যেন সেই বার্তাই দিতে চাইছেন উদ্যোক্তারা। তাই প্রতিমার গয়না তৈরির সুযোগ দেওয়া হয়েছে পা়ড়ারই মেয়ে মহুয়া সর্দারকে। উদ্যোক্তারা চাইছেন মহুয়ার তৈরি গয়নার একটি স্টলও মণ্ডপের পাশে রাখতে। যাতে সেই গয়না বিক্রি করে মহুয়া ব্যবসা দাঁড় করানোর পথে কয়েক পা এগোতে পারেন।

মণ্ডপের কাছেই হরিনাথ দে রোডের বাসিন্দা মহুয়া। কলা বিভাগে স্নাতক। সেলাই, কম্পিউটার, বিউটিশিয়ানের কোর্স— এত কিছু শিখেও কর্মজীবনে দিশা খুঁজে পাননি পঁচিশ বছরের মহুয়া। শেষে বড়বাজারে গিয়ে গয়না তৈরির কথা ভাবেন। স্বামী অরুণবাবু বইয়ের দোকানের কর্মচারী। স্ত্রীকে কাজে উৎসাহ দেন সব সময়। মহুয়ার কথায়, ‘‘পাড়া থেকে এ ভাবে উৎসাহ পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করছি।’’

আর দিন দু’য়েকের মধ্যেই মহুয়ার তৈরি গয়না পাঠানো হবে কুমোরটুলিতে। প্রতিমাশিল্পী সেই গয়না প্রতিমার গায়ে পরাবেন। বিশাল হার ছাড়াও থাকবে চুড়ি, কানের দুল। তুলে ধরা হবে দারিদ্রের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা এক তরুণীর প্রচেষ্টা।

হরিনাথ দে রোডে মহুয়ার বাড়ির আট ফুট বাই দশ ফুট ঘরে এখন তাই চলছে কর্মযজ্ঞ। শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে জোর কদমে। চিলতে ঘরে খাট জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হরেক রকমের পুথি, মালা, কানের দুল। সেখানে বসেই এক মনে কালীঠাকুরের মালা গেঁথে চলেছেন মহুয়া সর্দার। ঘরের বাইরে ডাঁই করে রাখা ডেকরেটর্সের জিনিসপত্র।

মহুয়া জানান, গত কয়েক মাস ধরে নিরলস পরিশ্রম করে ৬০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গয়না তৈরি করেছেন তিনি। এই প্রথম দোকানে সেই গয়নার পসরা সাজাবেন এক পুত্র সন্তানের মা মহুয়া।

পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা সবিতাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পুজোর বাজেট মেরেকেটে ২ লক্ষ টাকা। পাড়ার বাসিন্দারা সাধ্য মতো চাঁদা আর বিজ্ঞাপন তোলার চেষ্টা করছেন। প্রতিমাকে গয়না পরানো আমাদের কাছে বিলাসিতা। এমন সময় মহুয়ার খবরটা কানে আসে। তখনই ঠিক করি, মায়ের পুজোতে পাড়ার মেয়ের তৈরি গয়না পরাব।’’

মহুয়াকে তার লক্ষ্যে এগিয়ে দিতে পাড়ার বাসিন্দা স্বর্ণালি মিশ্র, অর্পিতা ঘোষদের মডেল বানানো হয়েছে। মহুয়ার তৈরি করা গয়না পরিয়ে তাঁদের ফোটোশুট করা হয়েছে। মণ্ডপে টাঙানো থাকবে স্বর্ণালিদের সেই ছবি। পাশে থাকবে গয়নাও। দর্শনার্থীদের গয়না পছন্দ হলে মণ্ডপের পাশের স্টল থেকে তা কিনতে পারবেন।

মহুয়ার সাহায্য করে এভাবে কালীসেবা করতে চাইছে তরুণ সংঘ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Idol Jewellery Handicraft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE