Advertisement
০১ মে ২০২৪
Illegal Construction

বেআইনি নির্মাণই যেন আইন বন্দর এলাকার সর্বত্র

পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু ওই দু’টি বাড়ি নয়, বন্দর এলাকা, অর্থাৎ ১৫ নম্বর বরোয় গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজে বেশির ভাগ বাড়িই পুর বিধি মেনে তৈরি হয়নি।

A Photograph representing a building which has ben build Illegally

পুর বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে পুলিশের সাহায্য নিতে হয়। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:৪৭
Share: Save:

বন্দর এলাকার পাহাড়পুর রোডে দু’টি বহুতল বাড়ি একটি অন্যটির দিকে হেলে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, ওই দু’টি বাড়ির চারতলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমোদন ছিল। নিয়ম ভেঙে পাঁচতলা তোলা হয়েছে। বুধবার পুরসভার তরফে হেলে পড়া একটি বহুতলের কিছুটা অংশ ভাঙা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকায় বৃহস্পতিবার বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ ছিল। আজ, শুক্রবার ফের ওই হেলে পড়া বাড়ি দু’টির বেআইনি অংশ ভাঙার কাজ হবে।

প্রশ্ন উঠেছে, গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ওই বহুতল দু’টি যে আইন ভেঙে বিপজ্জনক ভাবে তৈরি হয়েছে, তা কি পুরসভা জানত না? পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু ওই দু’টি বাড়ি নয়, বন্দর এলাকা, অর্থাৎ ১৫ নম্বর বরোয় গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজে বেশির ভাগ বাড়িই পুর বিধি মেনে তৈরি হয়নি। খোদ বরো চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীলের কথায়, ‘‘পুরসভার অনুমোদন নেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত তলা তৈরি করা হয়। ফলে বিপদ বাড়ে।’’ বন্দর এলাকায় বেআইনি নির্মাণ থামানো যাচ্ছে না কেন? বরো চেয়ারম্যানের সাফাই, ‘‘বেআইনি নির্মাণ থামাতে পুলিশ, প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’’

পুর বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে পুলিশের সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু, ওই সমস্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশও এগোয় না। দিনকয়েক আগে পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়ে পুরসভার পরিবেশ বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ার ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে ঘেরাও করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষমেশ পুলিশের হস্তক্ষেপে তিনি ঘেরাওমুক্ত হন। পুরসভা জানাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়েও পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকায় বিল্ডিং বিভাগের প্রতিনিধিদের ফিরে আসতে হয়। সম্প্রতি ‘টক টু মেয়র’-এ এক নাগরিক পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বেআইনি বাড়ি ভাঙার জন্য পুলিশবাহিনী পেতে বিল্ডিং বিভাগ সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে চিঠি লিখবে। তাতে কাজ না হলে পুর কমিশনার পুলিশ কমিশনারকে জানাবেন। এর পরেও পুলিশ সহযোগিতা না করলে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।’’ ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ থামছে না। মেয়র নিজে বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্বে। প্রশ্ন উঠেছে, মেয়র দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা কমছে না কেন? যদিও মেয়রের দাবি, আগের তুলনায় বেআইনি নির্মাণ অনেক কমেছে। পুরসভা যথাযথ ব্যবস্থাও নিচ্ছে। কিন্তু, বাস্তব পরিস্থিতি কি তা বলছে?

এ দিকে, মাসখানেক ধরে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক চলায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে পর্যাপ্ত পুলিশবাহিনীও পাওয়া যাচ্ছে না। পুরসভা পুলিশের সাহায্য চাইলেও পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে তারা আপাতত পিছু হটেছে। বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, মানবিক কারণেই এখন পুলিশের উপর দিয়ে আর কিছু বলা যাচ্ছে না। কিন্তু, ভাঙার অপেক্ষায় থাকা বাড়ির তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে প্রতিদিন।

পুলিশ সূত্রের খবর, বেলেঘাটার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এমনই একটি বাড়ি ভাঙার কথা ছিল বেশ কিছু দিন আগে। কিন্তু, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা জানিয়ে সেই বাড়ি ভাঙার কাজ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয় পুলিশের তরফে। এমনও বলা হয়েছে, ওই বাড়িতে কোনও পরীক্ষার্থী থাকলে তার সমস্যা হতে পারে। আপাতত বাড়িটি ভাঙার কাজ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই অনুরোধ গিয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট, বৌবাজার এবং কাশীপুর এলাকার বেশ কিছু বাড়ির জন্য।

বিল্ডিং বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘আইনি পথে কোনও বহুতল ভাঙার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে বাড়ির মালিকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানাতেও চিঠি দিয়ে জানানো হয়। এই কাজে যে হেতু গন্ডগোলের ঝুঁকি থাকে, তাই পুলিশি নিরাপত্তা না পেলে এগোনো যায় না। এখন পরীক্ষার কথা বলে পুলিশ কাজ পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করছে, তাই এগোনো যাচ্ছে না।’’লালবাজারের এক কর্তার যদিও মন্তব্য, ‘‘মানবিক কারণেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিন্তু, এর জন্য যদি পুরসভার কাজে সমস্যা হয়, তা হলে এই ধরনের অনুরোধ আর না পাঠানোর বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Construction Kolkata port
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE