E-Paper

সবুজ পাতা এবং কাশির ‘ইমোজি’ আসলে গাঁজার গোপন বার্তা, নিরীহ মেসেজে লুকিয়ে মাদক রহস্য

চলতি বছরে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসের আগে মেসেজিং অ্যাপে সন্তানদের গোপন কথোপকথন নিয়েই সতর্ক হতে বলছে পুলিশ। স্কুল-কলেজের অভিভাবকদের সঙ্গেও আলোচনা করবে কলকাতা পুলিশ।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩ ০৬:০৭
illegal drugs.

—প্রতীকী ছবি।

সবুজ পাতা এবং কাশির ‘স্মাইলি’। মনে হবে, মজার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। কিন্তু, না। মাদক কারবারে এটাই গাঁজার গোপন কথা। তেমনই এমডিএমএ মাদক বোঝাতে আছে ক্যাপসুল এবং লজেন্সের ছবি। হেরোইন বোঝাতে ‘সিরিঞ্জ’। কোকেন, মাশরুম-সহ অন্য সব মাদকের জন্যও আলাদা আলাদা ইমোজি।

চলতি বছরে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসের আগে মেসেজিং অ্যাপে সন্তানদের এমন গোপন কথোপকথন নিয়েই সতর্ক হতে বলছে পুলিশ। গত এক বছরে পুণেতে একাধিক ধরপাকড়ের পরে বিশেষ চিহ্নের বিষয়টি সামনে এসেছে। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, যা কলকাতাতেও ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস থেকে এক সপ্তাহব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচি চলবে। যেখানে গোপন কথোপকথন প্রসঙ্গে স্কুল-কলেজের অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করতে চলেছেন কলকাতা পুলিশ ও মাদক দমন শাখার তদন্তকারীরা।

তবে ‘নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো অব ইন্ডিয়া’-র (এনসিবি) কলকাতা শাখার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য এখন পরিস্থিতি এমন যে, রাখে প্রযুক্তি মারে কে! এনসিবি-র আঞ্চলিক অধিকর্তা রাজেশচন্দ্র শুক্ল বললেন, ‘‘ভারত সরকারের মাদক-মুক্ত দেশ গড়ার বার্তাকে সামনে রেখেই কাজ করছি আমরা। গত কয়েক মাসে ধরপাকড় হয়েছে। মাদক কারবারের বড় মাথাকে সম্প্রতি ধরা হয়েছে। কিন্তু, ডার্ক ওয়েবের মতো কিছু প্রতিবন্ধকতা এখনও রয়েছে।’’

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে ‘কুরিয়র’ পরিষেবা যত উন্নত হয়েছে, ততই ওই পথে বিদেশ থেকে শহরে মাদক আনানো বেড়েছে। এর পরে সেই মাদকই প্লাস্টিকের পুতুলের পেটে, গাড়ির সিট বেল্টে মুড়িয়ে, কখনও বা জুতোর হিলে পাচার হচ্ছে। কখনও মেক-আপের পাউডার ফেলে সেই বাক্সেই প্রসাধনী সামগ্রী হিসাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায়। যা আনাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার হচ্ছে ‘ডার্ক ওয়েব’। মাদক কারবারিদের বেশির ভাগই টর ব্রাউজ়ার দিয়ে ডার্ক ওয়েবে ঢুকছে। যা গোপন ইন্টারনেট ব্যবস্থা। টর ব্রাউজ়ারে ব্যবহারকারীর আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস গোপন থাকে। এই পদ্ধতিতে ডার্ক ওয়েবে ঢুকলেই হাতে আসে মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, পর্নোগ্রাফির মতো জিনিস। আইপি অ্যাড্রেস গোপন থাকায় যিনি বরাত দিচ্ছেন, তাঁকে ধরা এখনও অসম্ভব।

এনসিবি-র এক কর্তা বললেন, ‘‘এই কারণেই কিছু দিন আগে কুরিয়র সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সন্দেহ হলেই কুরিয়র খুলে দেখা বা মাদক দমনে কাজ করছে যে সমস্ত সরকারি সংস্থা, তাদের জানাতে বলা হয়েছে।’’ কলকাতা পুলিশের মাদক দমন শাখার এক অফিসার বললেন, ‘‘এর সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছে নানা মেসেজিং অ্যাপ। তাতে এমন সব ব্যবস্থা রয়েছে যে, নির্দিষ্ট সময়ের পরে কথোপকথন নিজেই মুছে যাবে। সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলিতেও ঘুরছে এমন মেসেজিং অ্যাপ। যা থেকে কথোপকথনের হদিস পাওয়া খুব কঠিন।’’

এই পরিস্থিতিতে ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র (এনসিআরবি) তথ্য চিন্তা বাড়িয়েছে আরও। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত দু’দশকে দেশে নার্কোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্টেন্সেস (এনডিপিএস) আইনে অভিযোগ দায়েরের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৯৮ শতাংশ! ১৮ অনূর্ধ্বদের মধ্যে এর বৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি! দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি আসক্তি আফিম জাতীয় নেশা, শুঁকে নেশা এবং ঘুমের ওষুধ জাতীয় নেশায়। তা হলে উপায় কী? মাদক দমনে নিযুক্ত সবক’টি সংস্থাই জানাচ্ছে, মাদক বিরোধী লড়াই কোনও একটি দিনের ব্যাপার নয়, কাজ চালিয়ে যেতে হবে বছরভর। আর মাদক বিরোধিতার মূলমন্ত্র হওয়া উচিত, পরিবারের সকলের মধ্যে সচেতনতার প্রসার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Illegal drugs Kolkata police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy