Advertisement
E-Paper

ফুটপাত জুড়ে হকার, হেঁটে যাওয়াই দায়

দক্ষিণের গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট, দেশপ্রিয় পার্ক, রাসবিহারী মোড়, বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে গোলপার্ক— সর্বত্রই ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার ছবিটা একই রকম।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
সমস্যা: গড়িয়াহাটের কাছে এখনও প্লাস্টিকে ঢাকা ফুটপাত। নিজস্ব চিত্র

সমস্যা: গড়িয়াহাটের কাছে এখনও প্লাস্টিকে ঢাকা ফুটপাত। নিজস্ব চিত্র

নামেই ফুটপাত। অথচ, পা ফেলে পাশাপাশি হাঁটারও জো নেই। কারণ, পসরা সাজিয়ে দু’পাশে বসে আছেন হকারেরা। পথচারীদের কেউ কোনও কারণে থমকে দাঁড়ালে থেমে যেতে হচ্ছে পিছনে হেঁটে আসা ভিড়কেও।

দক্ষিণের গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট, দেশপ্রিয় পার্ক, রাসবিহারী মোড়, বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে গোলপার্ক— সর্বত্রই ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার ছবিটা একই রকম। ব্যবসা যত বাড়ে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ে দোকানের বহর। খদ্দের টানতে রাস্তা আটকে চলে দোকান বড় করার প্রতিযোগিতা।

শনিবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের পরে পুরসভার চাপের মুখে গড়িয়াহাট চত্বরে শাসক দল প্রভাবিত ‘ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়ন’ তার সদস্যদের ফুটপাতে মালপত্র রাখতে বারণ করেছে। বিকিকিনির পরে রাতে মালপত্র রাখার বিকল্প জায়গা খোঁজার জন্য সবাইকে দিন দশেকের মতো সময় দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ। পাশাপাশি, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে অ-দাহ্য কোনও পদার্থের তিন দিক খোলা ছোট আকারের শেড তৈরির প্রস্তাবও পুরসভাকে দিয়েছেন দেবরাজেরা। তাতে বড় দোকানের মুখ যেমন ঢাকা পড়বে না, তেমন রাস্তাও অনেকটা খোলা থাকবে। তবে ওই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় প্রকাশ করেছেন হকারদেরই একাংশ। গড়িয়াহাট চত্বরে শাড়ির দোকান রয়েছে, এমন এক হকার বলেন, ‘‘এখন ব্যবসার সিজন। সে কথা ভেবে অনেকেই প্রচুর মালপত্র তুলেছি। কিন্তু তার সবটা রাখার জায়গা গোডাউনে হয় না। ফলে ফুটপাথেই ট্রাঙ্কে রাখতে হয়।’’

রাসবিহারী মোড়ের কাছে ফুটপাতে হকারদের দাপটে যাতায়াতের জায়গা নেই। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

গড়িয়াহাটে ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ী সংলগ্ন বড় দোকানের প্যাসেজে মালপত্র জমা করে রাখেন। আবার অনেক বড় দোকানও ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের রাতে নিজেদের জায়গায় মালপত্র রাখার সুযোগ দেয়। বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ভাড়া হিসেবে মোটা টাকা আদায় করে তারা। পুড়ে যাওয়া ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি চত্বরেই এমন নজির রয়েছে।

কিন্তু নিজেদের ব্যবসার ক্ষতি করে এই ব্যবস্থা কেন মেনে নেন বড় ব্যবসায়ীরা?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, রাজনীতির ছাতার তলায় থাকা জোটবদ্ধ হকারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এক ধরনের আপসে রাজি হয়ে যান তাঁরা।

গড়িয়াহাট চত্বরে এমন ব্যবসায়ীও রয়েছেন, যাঁদের দোকান হয়তো ছিল ঘিঞ্জি বাজারের ভিতরে। তাই বিক্রি বাড়াতে পরে তাঁরা রাস্তায় হকার হিসেবে দোকান খুলেছেন। অনেকে আবার ৩০-৪০টি দোকানকে দৈনিক ভাড়ার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েও টাকা আয় করেন বলে অভিযোগ।

গড়িয়াহাট চত্বরে ‘ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়ন’ ছাড়া আরও দু’টি ইউনিয়ন রয়েছে। তবে ব্যবস্থাপনা মোটের উপরে সর্বত্রই এক রকম। এর মধ্যে শুধু গড়িয়াহাট মোড় কেন্দ্রিক ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সদস্যই ১৪৬০ জন। পূর্বে বালিগঞ্জ এবং পশ্চিমে ট্রায়াঙ্গুলার পার্কও ওই ইউনিয়নের পরিধির মধ্যে পড়ে।

বালিগঞ্জ স্টেশন এবং রাসবিহারী মোড় সংলগ্ন ফুটপাতও খাবার-সহ নানা রকম স্টলে ঠাসা। দু’জায়গাতেই ফুটপাতের রেলিং থেকে সামনে থাকা দোকান পর্যন্ত ত্রিপল টাঙিয়ে ব্যবসা করছেন বিক্রেতারা।

এর মধ্যে কয়েকটি জায়গায় ফুটপাতের মধ্যে কেরোসিন স্টোভ বা গ্যাস জ্বালিয়ে প্রায় দিনরাত খাবারের দোকানও চলছে। যা নিয়ে কোনও ধরপাকড় নেই। দক্ষিণে যাদবপুর, বাঁশদ্রোণী বা বাঘা যতীনে হকারদের দাপট ততটা না বাড়লেও সরকারি উদ্যোগে কয়েকটি জায়গায় হকারদের পৃথক বসার স্টল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। স্টল রয়েছে গড়িয়া স্টেশন চত্বরেও।

কিন্তু ওই সমস্ত জায়গায় হকারের সংখ্যা গড়িয়াহাটের মতো এতটা বেশি নয় বলেই সমস্যা তুলনায় কম বলে মনে করছেন হকারদের একাংশ।

Hawker Illegal Occupancy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy