Advertisement
E-Paper

ভিন্ন অভিজ্ঞতার স্বাদ নয়া থিয়েটারে

ফেসবুক-টুইটার-ওয়েব সিরিজের যুগে দর্শকের সামনে এ ভাবেই ভিন্ন অভিজ্ঞতার জগৎ খুলে দিচ্ছে ‘ইমার্সিভ থিয়েটার’। যেখানে দর্শক নাটক দেখছেন ঘুরে ঘুরে। ছুঁয়ে নিচ্ছেন নাটকের সেট।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪২
অন্য রকম: ‘স্লিপ নো মোর’ নাটকের একটি দৃশ্য। মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে নাটক দেখছেন দর্শকেরা।

অন্য রকম: ‘স্লিপ নো মোর’ নাটকের একটি দৃশ্য। মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে নাটক দেখছেন দর্শকেরা।

রাজার সভাঘরের পরিবেশ তৈরি হয়েছে প্রেক্ষাগৃহে। দর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট আসন নেই। তবু সেখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নাটক দেখছেন তাঁরা। কখনও কোনও বাড়িতে ডাক পড়ছে দর্শকদের। সেখানে ঘরে-অলিন্দে চলছে অভিনয়— হত্যার ষড়যন্ত্র, দম্পতির রোমান্স বা পারিবারিক টানাপড়েন। ‘অদৃশ্য’ দর্শকের সামনে তরতরিয়ে এগোচ্ছে নাটক।

আর তাই দেশে-বিদেশে জনপ্রিয়তা বাড়ছে এর। কলকাতার দর্শকেরাও চেখে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন এই থিয়েটারের স্বাদ।

কতটা আলাদা এই ‘ইমার্সিভ থিয়েটার’? নাট্য সমালোচক আনন্দ লাল বলছেন, ‘‘এটা অনেকটা নাটক আর ফাইন আর্টসের মধ্যে ফিউশন। যেখানে সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশ তৈরি করে নেওয়া হয়। কখনও কম্পিউটার গ্রাফিক্সে তৈরি হয় ভার্চুয়াল পরিবেশ। মিউজিয়াম বা ডিজনিল্যান্ডের মতো জায়গা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদেশে এমন থিয়েটার হয়ে থাকে।’’

ইতিহাস বলছে, ‘ইমার্সিভ থিয়েটারের’ সূচনা দু’দশক আগে, লন্ডনের পাঞ্চড্রাঙ্ক থিয়েটার কোম্পানির হাত ধরে। তাদের নাটক দেখতে দর্শকেরা ঢুকতেন মুখোশ পরে। ‘স্লিপ নো মোর’ নাটকে শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ অভিনয় করেছিল তারা, নিউ ইয়র্কের এক পরিত্যক্ত হোটেলে। রাশিয়ার এক ইমার্সিভ থিয়েটার সংস্থা আবার দর্শকদের সামনে অজানা গ্রামের ভাষা তুলে আনত। ব্রাজিলের নাট্যব্যক্তিত্ব অগস্ত বোয়ালের নাটকে সরাসরি দর্শকদের প্রস্তাব দেওয়া হত অভিনয়ে শরিক হতে! সেই সঙ্গে বদলে বদলে যেত গল্পের প্লট। এখন বিদেশে হাসপাতাল, পুরনো হোটেল-বাড়ি, পরিত্যক্ত কারখানা বা নাইট ক্লাবে দর্শকদের টেনে আনছেন পরিবেশকেরা। সেখানে দর্শক কখনও ‘অদৃশ্য’, আবার কখনও নাটকের মধ্যেই তাঁদের দেওয়া হচ্ছে খাবার বা পানীয়। বাদ নেই ভারতও। আনন্দবাবুর কথায়, ‘‘বছর কুড়ি আগে পদাতিক নাট্যদলের হয়ে একটি হলঘরে রাজার সভাঘরের সেট তৈরি করেছিলেন সঞ্চয়ন ঘোষ। মাত্র ৫০-৬০ জন দর্শকের সামনে হওয়া সেই নাটক তো ইমার্সিভ থিয়েটারই।’’

টরন্টোর ঐতিহাসিক ক্যাম্পবেল হাউসে ইমার্সিভ থিয়েটার ‘হগটাউন’ দেখার অভিজ্ঞতা ঋদ্ধ করেছিল শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়কে। খানিক সেই ধাঁচেই শহরের দর্শকের জন্য গত বছর নাটক নিয়ে আসেন তিনি। নাম ‘৩২, অশ্বিনী দত্ত রোড’। দক্ষিণ কলকাতার ৩২ নম্বর অশ্বিনী দত্ত রোডের বাড়ির ঘর-অলিন্দ-বৈঠকখানা জুড়ে হয় সেই নাটক। সুজয়প্রসাদের কথায়, ‘‘এক পরিচিতের পুরনো আমলের এই বাড়িতে এসে মনে হয়েছিল, এখানেই নাটক করতে চাই। তবে ভিন্ন পরিবেশ তৈরি না করে সব কিছু ঠিক যেমন আছে, তেমন ভাবেই নাটক করছি।’’ এ বার দর্শকদের জন্য আবার ফিরছে সেই নাটক। ঠিকানা না বদলালেও বদলে যাচ্ছে গল্পের চরিত্ররা। এ বারেও হয়তো দরজা খুলবেন নাটকের কোনও চরিত্র, দর্শকদের নিয়ে যাবেন

বৈঠকখানায়, তার পরে ঘরে ঘরে আপন ছন্দে এগোতে থাকবে গল্প— পারিবারিক টানাপড়েন, সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি, দম্পতির মধ্যে টেনশন, যৌন-রাজনীতি...।

আর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া? সুজয়প্রসাদ বলছেন, ‘‘অনেককে কাঁদতে দেখেছি। এক দম্পতি জানিয়েছিলেন, পরের দিনও তাঁদের ইচ্ছে হয়েছিল বাড়িটিতে গিয়ে দেখতে, নাটকের চরিত্ররা কী করছে।’’ তবে এমন থিয়েটারে অভিনবত্ব থাকলেও তা বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক নয় বলেই জানাচ্ছেন আনন্দবাবু। কারণ, এখানে দর্শকের সংখ্যা হাতে গোনা। সেই সঙ্গে সেট তৈরির খরচও বিপুল। তবে শহরে দিনে দিনে এমন থিয়েটারের জগৎ প্রসারিত হলে প্রেক্ষাগৃহ না-পাওয়ার মতো সমস্যা মিটতে পারে বলে মত নাট্য ব্যক্তিত্বদের একাংশের। নান্দীকারের তরফে সোহিনী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘দর্শক সংখ্যা বেশি বলে এখনই এই ধরনের নাটক করার কথা ভাবছি না। তবে ভবিষ্যতে আমাদের নিজস্ব ইনস্টিটিউট তৈরির কথা আছে। সেটা হলে এই ধাঁচের আর্টের দিকে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।’’

Immersive Theater Theatre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy