ফাঁকা সব্জি বাজার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
বাতিল নোট নিয়ে বুধবার দিনভর ছিল প্রবল আতঙ্ক। কলকাতার অনেক বাজারেই ৫০০ টাকার নোট দেখলে কেউ জিনিস বিক্রি করতে চাননি। বিক্রেতাদের অধিকাংশেরই উত্তর ছিল- ভাঙানি কোথায় পাব!
বৃহস্পতিবার কিছুটা হলেও তার উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছে কলকাতার বিভিন্ন বাজারে। দোকানে জমে থাকা আলু, সব্জি, মাছ তো আর দিনের পর দিন মজুত করে রাখা যায় না। তাই অনেকেই ৫০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দিয়ে জিনিস বিক্রি করে ঘর খালি করেছেন। তবে বিক্রিবাটা হলেও বুধবারের থেকেও এ দিন উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রতিটি বাজারের হাল ছিল বেশ করুণ। ক্রেতা নামমাত্র। মাছের বাজারে মাছ প্রায় নেই বললেই চলে। সব্জিও তথৈবচ। যার কাছে যেটুকু ছিল, তাই বিক্রি করে ঘরে টাকা তুলতে হয়েছে। আর সেই সুযোগে কিছু মানুষ ৫০০ টাকার নোট ভাঙাতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।
নাগেরবাজার উড়ালপুলের নীচে রোজ মাছ বিক্রি করেন অসিত মণ্ডল। এ দিন প্রায় কেজি পনেরো ছোট-বড় ভেটকি মাছ নিয়ে বসেছিলেন। দাম ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি। অসিতবাবুই জানালেন, সকাল থেকে যত ক্ষণ তাঁর কাছে ৫০০-র নোট ভাঙিয়ে দেওয়ার মতো টাকা ছিল, তত ক্ষণ যাঁরাই এসেছেন তাদেরই মাছ বিক্রি করেছেন। কাউকে ফিরিয়ে দেননি। কিন্তু বেলা বাড়তেই ১০০ টাকার নোট শেষ। ফলে দোকানের মাছ দোকানেই পড়ে। তাঁর আফশোস, আড়তে ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট নিয়ে নিচ্ছে। ফলে মাছও কিনতে পেরেছেন। কিন্তু খুচরো বাজারেই যত সমস্যা। তা-ও এখান ওখান থেকে ১০০ টাকার নোট জোগার করে সকালের দিকে মাছ বিক্রি করেছেন। না হলে সংসার চালানো সমস্যা হয়ে যেত বলে তিনি জানান।
বিভিন্ন সূত্রে এ দিন খোঁজ নিয়ে যা জানা গিয়েছে তাতে সল্টলেক, মানিকতলা, লেক মার্কেট, যাদবপুর, টালিগঞ্জ- প্রায় প্রতিটি বাজারেই ব্যবসায়ীদের একাংশ ৫০০ টাকার নোট নিতে বাধ্য হয়েছেন। পরিবর্তে ক্রেতাদের একটু বেশি টাকার মাল কিনতে হয়েছে। সব্জি বাজারে অবশ্য বড় বাতিল নোট চলেনি। মুদিখানা ও মাছ বাজারেই ক্রেতারা কিছুটা হলেও টাকা ভাঙাতে পেরেছেন। অধিকাংশ বাজারেরই ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির যুক্তি অনেকটা একই রকম। তাঁদের কথায়, ব্যবসায়ীরা দোকান খুললে প্রথম দিকে ৫০-১০০ টাকার কিছু বিক্রি হচ্ছে। ওই ভাবে কিছু টাকা হাতে জমলে তবেই ৫০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দিয়ে জিনিস বিক্রি করা হয়েছে। তাতে উভয়েরই লাভ হয়েছে। দোকানদারদেরও মাল বিক্রি হয়েছে, আবার ক্রেতারাও হাতে দু-তিনটে করে ১০০ টাকার নোট পেয়েছেন।
যেমন মানিকতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দাস জানিয়েছেন, বুধবার ব্যবসায়ীরা কিছুটা দ্বন্দ্বে ছিলেন। বেশি ৫০০, ১০০০ টাকার নোট হলে যদি ব্যাঙ্কে জমা দিতে গিয়ে সমস্যা হয়। বৃহস্পতিবার সেই ভাবনটা অনেকটাই বদলেছে। যে সমস্ত ক্রেতা একটু বেশি টাকার মাছ বা অন্য জিনিস কিনেছে, তাদের ৫০০, ১০০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রভাতবাবুর দাবি, তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, ভাঙানি করে দেওয়ার সুযোগ থাকলে ক্রেতাদের না ফেরাতে। যাঁরা বেশি টাকার জিনিস কিনবেন, তাদের খুচরো করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অন্য দিকে হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারের সম্পাদক সৈয়দ আনওয়ার মকসুদ জানিয়েছেন, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই তারা আড়তে ৫০০-১০০০ টাকার নোট নিয়ে এলে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। কারণ তাঁরা মাছ কিনতে না পারলে খুচরো বাজারে আবার সমস্যা হবে না। যারা বেশি মাছ কেনেন, তাদের ধারে মাছ দেওয়া হচ্ছে। তবে বাতিল নোটের সমস্যার কারণে অনেক ব্যবসায়ীই মাছ কিনছেন না। ফলে বাজারেও মাছের আকাল রয়েছে বলে তিনি বলেন।
এ দিন সকালে বাঙুর, লেকটাউন, সল্টলেকের কয়েকটি ব্লকের বাজার-সহ মানিকতলা ও দক্ষিণের লেকমার্কেট, গড়িয়াহাট বাজার ঘুরেও দেখা গিয়েছে বেশ ফাঁকা। ক্রেতা কম থাকায় ব্যবসায়ীরাও খোশগল্পে মশগুল। পরিচিত কোনও ক্রেতা ঢুকলে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিয়ে ঠাট্টা-মসকরা করা হয়েছে। কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছে, ৫০০ টাকা কেজি গলদা কিনলে ১০০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দেবে। ক্রেতাদের ঢুকতে দেখলেও মুরগির দোকানের অনেককে চিৎকার করে বলতে শোনা গিয়েছে, দু’ কেজি চিকেন কিনলেই ৫০০ টাকা ভাঙিয়ে দেওয়া হবে। তবে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি সামান্য হলেও বদলাবে। কারণ এ দিন অনেকেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পেরেছেন। একই সঙ্গে এটিএমও খুলে যাচ্ছে। ফলে খুচরোর আকাল কিছুটা হলেও কমবে।
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন, নতুন নোট হাতে পেতেই স্বস্তির নিশ্বাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy