Advertisement
E-Paper

গুরুত্ব রামসার এলাকায়, ‘দখল’ থেকে বাঁচবে শহরের ফুসফুস?

২০২২-২৩ সালে পরিবেশ খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৪৭৮ কোটি টাকা, সেখানে বর্তমান বাজেটে তা করা হয়েছে ৩০৭৯.৪০ কোটি। অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৮
A Photograph of Kolkata Wetlands

গত বছরের তুলনায় ২০২৩-’২৪ সালের বাজেটে পরিবেশ খাতে প্রায় ২৪% বাড়তিবরাদ্দ করা হয়েছে। ফাইল ছবি।

জলাভূমি বুজিয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছে। তার উপরে তৈরি হয়েছে বেআইনি নির্মাণ। কোথাও গড়ে উঠেছে সারিবদ্ধ দোকান। কোথাও আবার পাঁচতলা বহুতল। অনেক জায়গায় মাছের ভেড়ি বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে পুরোপুরি। ২০০২ থেকে ২০২১, এই দু’দশকে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি বোজানো সংক্রান্ত এমন ৩৫৮টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে পুলিশে। যদিও পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রামসার সাইটে বেআইনি নির্মাণের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। তাই বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর বাজেট বক্তৃতায় দেশের রামসার এলাকা সংরক্ষণের উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে যে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি দখলদার ও বেআইনি নির্মাণের হাত থেকে ‘পরিত্রাণ’ পাবে তো?

এই প্রশ্ন ওঠা অপ্রাসঙ্গিকও নয়। কারণ, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে একের পর এক মামলা হয়েছে। সেখানে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারকে পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন এই জলাভূমিতে যাতে কোনও ভাবে বেআইনি নির্মাণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অথচ, এই জলাভূমির রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা রাজ্য পরিবেশ দফতরের অধীনস্থ নোডাল সংস্থা ‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’-এর অভ্যন্তরীণ রিপোর্টই জানাচ্ছে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে এই এলাকায়বসতি, নির্মাণের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। যার ফলে জলাভূমি এলাকার জলে এবং মাটিতে উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ভারী ধাতব পদার্থের পরিমাণ। শহরের অপরিশোধিত তরল বর্জ্য জলাভূমিতে এসে মেশার কারণে যে বিপদ বাড়ছে ক্রমাগত।

পরিবেশ দফতর সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি যে সমস্ত মৌজা জুড়ে বিস্তৃত, সেখানে জনসংখ্যা গত ২০ বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলাভূমির ৩৭টি মৌজার মধ্যে কোনও কোনওটিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনঘনত্ব ৪৫০০ জন। যা স্বাভাবিক ভাবেই চাপ তৈরি করছে ওই এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে। যদিও রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বেআইনি নির্মাণ রোধে রাজ্য সরকার সব পদক্ষেপ করছে। অনেক বেআইনি নির্মাণইতিমধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত পুলিশি অভিযান চালানো হচ্ছে।’’

উল্লেখ্য, গত বছরের তুলনায় ২০২৩-’২৪ সালের বাজেটে পরিবেশ খাতে প্রায় ২৪% বাড়তিবরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২২-’২৩ সালে যেখানে পরিবেশ খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৪৭৮ কোটি টাকা, সেখানে বর্তমান বাজেটে তা করা হয়েছে ৩০৭৯.৪০ কোটি। অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে। এ দিন অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, জলাভূমি সংরক্ষণে স্থানীয় গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই আগামী তিন বছরে জলাভূমি সংরক্ষণ করে ইকো-পর্যটনের সুযোগ এবং সেই সূত্রে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের আয়ের সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্তু কেন্দ্র বা রাজ্য যত আশ্বাসই দিক, দখলদারদের হাত থেকে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি বাঁচানো যাবে তো? বুধবারের বাজেট ফের উসকে দিয়েছে সেই প্রশ্নই।

Union Budget 2023 Indian Budget 2023-24 Wetlands
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy