Advertisement
০২ মে ২০২৪
Indian Museum

Indian Museum: সংরক্ষিত প্রত্নসম্ভার সামনে আনছে জাদুঘর

জাদুঘর সাধারণ দর্শকদের জন্য সম্প্রতি সামনে আনে সম্ভবত শাহজাহানের ১২.৭ সেন্টিমিটার লম্বা, ৩.৫ সেন্টিমিটার চওড়া একটি পানপাত্র।

দুষ্পাপ্র্য: বিভিন্ন উপলক্ষে এমনই সব প্রত্ন-ঐশ্বর্য দর্শকদের সামনে আনছে জাদুঘর।

দুষ্পাপ্র্য: বিভিন্ন উপলক্ষে এমনই সব প্রত্ন-ঐশ্বর্য দর্শকদের সামনে আনছে জাদুঘর। ছবি জাদুঘর সূত্রে প্রাপ্ত।

অলখ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ০৬:২০
Share: Save:

কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর বা সংগ্রহশালায় যত প্রত্নবস্তু রয়েছে, তার সব প্রদর্শন কক্ষে রাখার মতো জায়গা নেই। যে কোনও প্রাচীন বস্তু রাখতে গেলে নিয়মমতো ন্যূনতম যে জায়গা লাগে, তা অত বড়ভবনটিতেও কুলিয়ে ওঠে না। তাই সেগুলির বেশির ভাগই বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত জায়গায় তোলা থাকে। জাদুঘরের অধিকর্তা অরিজিৎ দত্তচৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের এক লক্ষ আট হাজার প্রত্নবস্তু রয়েছে। তার সব প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা খুব শক্ত।’’ তবে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনও না কোনও অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে বেছে বেছে তার কিছু দর্শকদের সামনে আনা হবে।

যেমন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৩৭তম জন্মদিবস উপলক্ষে দর্শকদের জন্য সামনে আনা হয়েছিল হরপ্পা সভ্যতার বিখ্যাত ইউনিকর্নের ছবি দেওয়া সিলমোহর। ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম পেপে একটি গ্রাম থেকে তথাগত বুদ্ধের দেহাবশেষ সযত্নে ধরে রাখা একটি কারুকার্যখচিত আধার আবিষ্কার করেছিলেন। দীঘনিকায়ের মহাপরিনিব্বান সূত্র থেকে জানা যায়, তথাগত তাঁর পরিনির্বাণের পরে তাঁর দেহাবশেষ রক্ষা করতে আনন্দের উৎসাহে সাড়া দেননি। কিন্তু পরে দ্বিতীয় পন্থা হিসেবে তথাগত বলেছিলেন, ‘চক্রবর্তী রাজাগণের মতোই দেহ ভস্মীভূত হলেদেহাবশেষ সংগ্রহ করে চতুর্মহাপথে স্তূপ নির্মাণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পার।’ বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, দ্রোণ বুদ্ধের দেহাবশেষ বিভিন্ন আধারে ভাগ করেছিলেন। তেমনই একটি আধার কলকাতার জাদুঘরেও রয়েছে। সেটি জাদুঘর সম্প্রতি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে। আবার, ১৮৭৯ সালে আলেকজ়ান্ডার কানিংহাম পুন্ড্রনগরকে মহাস্থান বলে চিহ্নিত করেন। কে এন দীক্ষিত সেই মহাস্থানগড় থেকে বিখ্যাত লিপিটি উদ্ধার করেন। সেটিও সম্প্রতি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সামনে এনেছিলেন এই বছরেই।

জাদুঘর সাধারণ দর্শকদের জন্য সম্প্রতি সামনে আনে সম্ভবত শাহজাহানের ১২.৭ সেন্টিমিটার লম্বা, ৩.৫ সেন্টিমিটার চওড়া একটি পানপাত্র। ওই পানপাত্রের গায়ে যে পান্নাগুলি রয়েছে, সেগুলি সম্ভবত আনা হয়েছিল সাইবেরিয়া থেকে। নাদির শাহ থেকে শুরু করে আহমেদ শাহ দুরানি ও গভর্নর জেনারেল ডালহৌসি-সহ নানা হাত ঘুরে তা পৌঁছয় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের হাতে। শাহজাহানের পিতামহ মুঘল বাদশাহ আকবরের আগরা টাঁকশাল থেকে বার হওয়া বেশ কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা, জাহাঙ্গিরের স্বর্ণমুদ্রাও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সামনে এনেছিলেন। পুরাতাত্ত্বিক রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের গর্ব এই প্রাচীন ভারতীয় সংগ্রহশালা, যেখানে বিভিন্ন গুরুত্তপূর্ণ প্রত্নসম্পদ সংরক্ষিত আছে, সেগুলির কিছু অংশ জনসমক্ষে প্রকাশ পেলে এক দিকে যেমন সাধারণ মানুষের প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে জ্ঞান বাড়বে, তেমনই গবেষকেরাও উপকৃত হবেন।’’

জাদুঘরের শিক্ষা অধিকর্তা সায়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতির সম্পর্ক গভীর করতেই আমাদের এই উদ্যোগ। সেই সঙ্গে আমরা অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করি, তাতে অনেকে জাদুঘরে এসে আমাদের সম্ভার দেখতে পান। আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শন প্রত্নসম্ভার এ ভাবেই তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Museum Artifact
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE