Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসা ‘না পেয়ে’ মৃত ডাক্তারি ছাত্রই, উত্তাল হাসপাতাল

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় এত দিন তাঁদের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতেন সাধারণ মানুষ। এ বার তাঁরাই প্রশ্ন তুললেন হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে।

পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। (ইনসেটে) রীতেশ অগ্রবাল।— নিজস্ব চিত্র।

পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। (ইনসেটে) রীতেশ অগ্রবাল।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৭
Share: Save:

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় এত দিন তাঁদের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতেন সাধারণ মানুষ। এ বার তাঁরাই প্রশ্ন তুললেন হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে। জানালেন, নিজেদের কলেজেই বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে এক সতীর্থের মৃত্যু তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে।

দুর্ঘটনার পরে হাসপাতালে আনা হলে হামেশাই আহতকে ফেলে রাখা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে অবস্থার অবনতি ঘটা বা মৃত্যুর নজিরও মেলে আকছার। সরকারি হাসপাতালে এর জেরে বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়। কিন্তু মঙ্গলবার সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটল কিছুটা অন্য চেহারায়। এক মেডিক্যাল পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ওই কলেজেরই ফাইনাল ইয়ারের পড়ুয়া রীতেশ জায়সবালের মৃত্যু হয় সোমবার সকালে। এক বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সহপাঠীদের অভিযোগ, টানা সাত ঘণ্টা রীতেশের কার্যত কোনও চিকিৎসাই হয়নি। এ দিন ন্যাশনালের অধ্যক্ষ ও সুপারের ঘরে টানা বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তার আগে ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে চলে তাঁদের বিক্ষোভ। পরে সুপারের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ উঠলেও পড়ুয়ারা জানান, তাঁরা এর শেষ দেখে ছাড়বেন। চিকিৎসায় গাফিলতির জন্য সার্জারি বিভাগের তিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিকে দায়ী করেছেন তাঁরা।

মেডিক্যাল পড়ুয়াদের তরফে প্রীতি শর্মা বলেন, ‘‘রীতেশের শরীরের বাইরে খুব বেশি আঘাত ছিল না। আঘাতটা ছিল ভিতরে। সেটাই বোঝেননি ওই তিন জন। কোনও সিনিয়র ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে স্রেফ বিনা চিকিৎসায় ওকে ফেলে রেখে দিয়েছিলেন। একটা সিটি স্ক্যান হলে হয়তো বোঝা যেত, ওর শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হয়তো ওকে বাঁচানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাটা নেওয়া যেত। কিন্তু সেই সুযোগটাই আসেনি।’’

রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ন্যাশনালের সার্জারি বিভাগে যে তিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি ডিউটিতে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। প্রীতি জানান, কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে দু’দিন সময় চেয়েছেন। তাঁরা এই দু’দিন আর বিক্ষোভের পথে যাবেন না। কিন্তু দু’দিন পরেও কোনও ব্যবস্থা না হলে তাঁরা লাগাতার আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। প্রয়োজনে আইনি সাহায্যও নেবেন। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে এই মুহূর্তে তাঁরা কর্মবিরতির কথা ভাবছেন না। এ দিন দুপুরে ন্যাশনালের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশো পড়ুয়া অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ক্লাস বয়কটও করেন তাঁরা।

সরকারি হাসপাতালে গুরুতর আহত বা মুমূর্ষু রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিকিৎসা না করে ফেলে রেখে দেওয়ার ঘটনা তো নতুন নয়। আগে তাঁরা সরব হননি কেন? মেডিক্যাল পড়ুয়াদের একটা বড় অংশই সমস্বরে জানিয়েছেন, সহপাঠীর মৃত্যু তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে।

ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে কোনও মৃত্যুই অত্যন্ত দুঃখজনক। নিজেদের কলেজের কোনও পড়ুয়ার ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। কেন রীতেশের মৃত্যু হল, যথাযথ চিকিৎসায় তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হত কি না, সবটাই তদন্ত করে দেখা হবে। এ জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে। বৃহস্পতিবার তার রিপোর্ট জমা পড়বে। কোনও ক্ষেত্রে সামান্য গাফিলতির প্রমাণ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE