Advertisement
E-Paper

শাসকের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’ ব্যাপক ভাঙচুর

দু’দিন বাদেই কালীপুজো। রবিবারের সন্ধ্যায় তাই এলাকাতেও ছিল তুমুল ব্যস্ততা। প্রত্যেকেই নিজেদের মণ্ডপে পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত। কিন্তু রাত সাড়ে দশটা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত এলাকায় যা ঘটল, তার কথা বলতে গিয়েই শিউরে উঠছেন শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫৫
তাণ্ডবের পরে। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

তাণ্ডবের পরে। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

দু’দিন বাদেই কালীপুজো। রবিবারের সন্ধ্যায় তাই এলাকাতেও ছিল তুমুল ব্যস্ততা। প্রত্যেকেই নিজেদের মণ্ডপে পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত। কিন্তু রাত সাড়ে দশটা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত এলাকায় যা ঘটল, তার কথা বলতে গিয়েই শিউরে উঠছেন শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাসিন্দারা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ হঠাৎই এলাকায় হাজির হয় একদল যুবক। প্রত্যেকের হাতে লাঠি, বাঁশ। মুখে অশ্রাব্য ভাষা, অকথ্য গালিগালাজ। দু’দলে ভাগ হয়ে শ্যামবাজার স্ট্রিট এবং শ্যামপুকুর স্ট্রিটে শুরু হয় ভাঙচুর। পরপর কাচ ভাঙতে থাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছোট-বড় প্রায় ৩০টি গাড়ির। ছোড়া হয় ইট-পাটকেলও। দোকানের জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। আসবাবপত্র ছুড়ে ফেলা হয় রাস্তায়। ভাঙচুর হয় ক্লাবঘরের জিনিসপত্র। বাদ যায়নি মণ্ডপও। বাঁশ ভেঙে, আলোকসজ্জা ভেঙেচুরে ছ়ড়িয়ে দেওয়া হয় রাস্তায়। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। তাদের লক্ষ করেও ইট ছোড়া হতে থাকে। জখম হন পাঁচ-ছ’জন পুলিশকর্মী ও স্থানীয় কয়েক জন যুবক। শেষমেশ সোমবার ভোরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কীসের জেরে এই ঘটনা? পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার ওই সময়ে শ্যামপুকুরের কানা রাজাবাগান বস্তির এক ব্যক্তি ও এক মহিলা একটি মিষ্টির দোকানের পাশে বসেছিলেন। সেই সময় পাশ দিয়ে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে ছ’নম্বর বস্তির দিকে কালীপ্রতিমা নিয়ে যাচ্ছিলেন কিছু যুবক। অভিযোগ, ওই সময়েই এক দল অন্য টিটকিরি মারা নিয়ে বচসার শুরু। তখন পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই প্রতিমা ছ’নম্বর বস্তিতে চলে যায়। অভিযোগ, পরে কানা রাজাবাগান বস্তির ওই দু’জন ছ’নম্বর বস্তিতে গিয়ে ফের প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে ঝামেলা চলাকালীন ঠেলাঠেলিতে পড়ে গিয়ে আহত হন ওই মহিলা। তাঁরা পুলিশকে অভিযোগ জানান। এর পরে বস্তি থেকে লোকজন এনে শ্যামপুকুর স্ত্রিট ও শ্যামবাজার স্ট্রিটে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ঘটনা বলে পুলিশ এই ঘটনায় তেমন হস্তক্ষেপ করেনি। যদিও কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, ‘‘ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই পরিস্থিতি সামলাতে সক্রিয় হয় পুলিশ। তদন্ত চলছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় দু’পক্ষের মোট ৯ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে সুব্রত দত্ত নামে এক ব্যক্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরজিকরে ভর্তি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এবং স্বতঃপ্রণোদিত আর একটি— দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সুভাষ পাল এবং সঞ্জীব ঘোষ নামে দু’জনকে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতিমা আনতে গিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি খোকন দাসের লোকজন। তাদের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয় মন্ত্রী শশী পাঁজার অনুগামী বলে পরিচিত স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রসূন ঘোষের অনুগতদের। সোমবার সকাল থেকেই এলাকায় উপস্থিত ছিলেন প্রসূনবাবু। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি খোকন দাসের লোকজন ভয় দেখিয়ে এলাকা দখল করতে চাইছে। কাল রাতে তাণ্ডব চালিয়েছে তাঁরাই।’’ তৃণমূলের এক মেয়র পারিষদের প্রত্যক্ষ মদতেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর অভিযোগ। থানায় এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এলাকার রাজনৈতিক মহল সূত্রে খবর, গত পুরসভা নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে প্রসূনবাবুকে তৃণমূলের প্রার্থী করার পিছনে প্রধান ভূমিকা ছিল মন্ত্রী শশী পাঁজার। কিন্তু সিপিআইয়ের প্রার্থী করুণা সেনগুপ্ত তাঁকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে ফের এলাকার কাউন্সিলর হন। প্রসূনবাবুর অনুগামীদের দাবি, খোকনবাবুর অসহযোগিতা এবং মদতেই প্রসূনবাবু পরাজিত হয়েছিলেন। এ দিনের ঘটনা এই দুই গোষ্ঠীর কোন্দলেরই বহিঃপ্রকাশ বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।

অন্য দিকে, ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা খোকনবাবু। তাঁর অনুগামী সন্দীপন বিশ্বাস নামে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘প্রসূন ঘোষকে খোকনদাই দলের হাইকমান্ডের অনুমতি নিয়ে প্রার্থী করিয়েছিলেন। প্রসূন জিততে না পারায় বাইরে থেকে লোক এনে এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছেন।’’ তিনি জানান, তাঁদের লোকজন মার খেলেও অভিযোগ পর্যন্ত জানাতে দেয়নি পুলিশ।

এই ঘটনা নিয়ে কি বলছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব? মন্ত্রী শশী পাঁজাকে বারবার ফোন বা এসএমএস করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনও উত্তর দেননি। তৃণমূল নেতা তথা মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘এলাকায় বহিরাগত ঢোকা বন্ধের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না হলে এ ধরনের ঘটনা রোখা কঠিন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এ নিয়ে আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।’’

তবে যে গোষ্ঠীরই লড়াই হোক না কেন, এলাকার এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের এক জন, সৌরীন সিংহ বলেন, ‘‘এই অবস্থায় আদৌ আর এ পাড়ায় কালীপুজো হবে কি না, কে জানে!’’

TMC Inter clash vandalism Shyampukur Street
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy