নারকেলডাঙায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে কলকাতার মেয়রের পরিদর্শনের পরে সংঘর্ষ ছড়িয়েছিল। দু’পক্ষের হাতাহাতিতে নাম জড়িয়েছিল পুরপ্রতিনিধির অনুগামী এবং ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশের। রবিবারের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় পুরপ্রতিনিধি-সহ একাধিক জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুরপ্রতিনিধির অনুগামীদের তরফেও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দলই কার্যত প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
শনিবার রাতে নারকেলডাঙা থানা এলাকার ক্যানাল ওয়েস্ট রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে যায় খালপাড়ের ৪০টিরও বেশি ঝুপড়ি, মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। এর পরে রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সামনেই স্থানীয় ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি শচীন সিংহের বিরুদ্ধে সরব হন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি এমন হয় যে, মেয়রকে তড়িঘড়ি এলাকা ছাড়তে হয়। তিনি চলে যাওয়ার পরেই গোটা এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুরপ্রতিনিধির অনুগামী ও ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। কিছু ক্ষণের জন্য রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা।
পুলিশ সূত্রের খবর, মহম্মদ শাহনওয়াজ় নামে এক যুবক নারকেলডাঙা থানায় পুরপ্রতিনিধি শচীন এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে লাঠি, রড নিয়ে হামলা ও মারধরের অভিযোগ করেছেন। যদিও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন এক মহিলাও। সেখানে তিনি যৌন হেনস্থা, মারধর-সহ সোনার হার ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগে নাম রয়েছে পুরপ্রতিনিধির বিরোধী গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত পাপ্পু, হায়দার নওয়াজ়-সহ একাধিক জনের। যদিও হায়দার বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে এলাকাতেই ছিলাম না। আমাদের ফাঁসাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাদের নামে অভিযোগ করেছেন পুরপ্রতিনিধি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরাও একই দল করি। পুরপ্রতিনিধি এলাকায় একাধিক বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত। বার বার তার প্রতিবাদ করেছি। তাই উনি ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।’’
যদিও পুরপ্রতিনিধি বাকি অভিযুক্তদের দুষ্কৃতী বলে দাবি করে বলেন, ‘‘ওদের বিরুদ্ধে এলাকায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানেও ওদের বেআইনি গুদাম ছিল। বছরের পর বছর এলাকা থেকে তোলা তুলত। আমি সব বন্ধ করায় উদ্দশ্যেপ্রণোদিত ভাবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ভুল বুঝিয়ে এ সব করাচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।’’
পুরপ্রতিনিধি এবং বিরোধী গোষ্ঠীর এই কোন্দলে এলাকা উত্তপ্ত থাকলেও আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট হয়নি। পুলিশ, দমকলের তরফে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘তদন্ত চলছে। নমুনা সংগ্রহও হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আগুন লাগার কারণ স্পষ্ট হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)