Advertisement
E-Paper

নির্ঘণ্ট থেকে ঠাকুর দেখা, ভরসা নেটই

সদ্য কলেজে ঢুকেছে পায়েল, স্বর্ণালী, প্রদীপ্তরা। শহরের অলিগলি ঠিক মতো চিনেই উঠতে পারেনি এখনও। কিন্তু পুজোও তো এসে পড়েছে! অতএব, পুজোর পথঘাট চিনতে শুরু হল ইন্টারনেট ঘাঁটা। কলকাতার দুর্গাপুজো বলে সার্চ করতেই একের পর এক ওয়েবসাইট! কারও নাম ‘অমুক অনলাইন’ তো কারও নাম ‘তমুক পুজো ডট কম’।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২২

সদ্য কলেজে ঢুকেছে পায়েল, স্বর্ণালী, প্রদীপ্তরা। শহরের অলিগলি ঠিক মতো চিনেই উঠতে পারেনি এখনও। কিন্তু পুজোও তো এসে পড়েছে! অতএব, পুজোর পথঘাট চিনতে শুরু হল ইন্টারনেট ঘাঁটা। কলকাতার দুর্গাপুজো বলে সার্চ করতেই একের পর এক ওয়েবসাইট! কারও নাম ‘অমুক অনলাইন’ তো কারও নাম ‘তমুক পুজো ডট কম’। ফেসবুকও বাদ যায় না। ক্লাবগুলির নিজস্ব পেজ তো রয়েইছে, কোনও কোনও পুজো পাগল আবার সব ক্লাবকে নিয়ে এসেছেন একই পাতায়।

বছর দশেক আগেও কলকাতায় ঠাকুর দেখতে বেরোনো মফস্সলের উঠতি ছেলেমেয়েদের ভরসা ছিল খবরের কাগজের ‘কাটিং’। পুজোর দিনগুলিতে খবরের কাগজের পাতায় ঠাকুর দেখার হালহকিকত দেওয়া থাকত। কেউ বা খেটেখুটে জোগাড় করত কলকাতা পুলিশের ম্যাপ। ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের হাত ধরে সেই ছবিটাই বদলে গেল। পুজোয় মণ্ডপে-মণ্ডপে ঘোরার রাস্তা খুঁজতে ইন্টারনেটকেই এখন সহজ মাধ্যম বলে মনে করে নবীন প্রজন্ম। আর সেই হাওয়াতেই বদলেছে পুজোর চরিত্রও।

অনেকেই বলছেন, উৎসবের মরসুমে মহানগরের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে এখন আর ম্যাপের জন্য হা-পিত্যেশের প্রয়োজন নেই। রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতেই হাতের স্মার্টফোনে দেখে নেওয়া যাবে শহরের ম্যাপ। কোন পুজোয় আগের বছরে কী রকম মণ্ডপ, প্রতিমা হয়েছিল, দেখে নেওয়া যাবে তা-ও। মিলবে উত্তর, মধ্য, দক্ষিণ, বেহালা, সল্টলেক ধরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের পুজোর হালহকিকত। ম্যাপ ধরে নাম-ঠিকানা খুঁজে দেবে

ওই ওয়েবসাইট। পুজোর নানা পুরস্কারের খুঁটিনাটি কিংবা কোন পুজো গত বছর কত পুরস্কার পেয়েছে, হদিস দেবে তারও।

পুজো ময়দানের খবর, কেউ কেউ এই ওয়েবসাইট খুলে রেখেছেন নিখাদ ভালবাসা থেকে, কেউ বা কিছুটা বাণিজ্যিক স্বার্থেই। এমনই এক গল্প শোনালের প্রবীণ ধানুকা নামে এক তরুণ। বছর চারেক আগে বেহালার পুজো দেখতে গিয়েছিলেন প্রবীণ। দক্ষিণ শহরতলির অলিগলিতে কুলকিনারা না পেয়ে শেষে এক রিকশাচালককে ৩০০ টাকা দিয়ে হাতেগোনা কয়েকটা ঠাকুর দেখেন। পেশায় সফটওয়্যার ওই তরুণ সে দিন হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন, পুজোর সময় পথ হারাব বলে পথে নামার উপায় নেই। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই প্রবীণ তৈরি করে ফেলেছেন পুজো দেখার এক ওয়েবসাইট। বছর চারেকের মধ্যে ওয়েবসাইটের বহর বেড়েছে। গত বছরের পুজোয় হাজার পাঁচেক লোক প্রতিদিন ঢুকেছেন সেই ওয়েবসাইটে। প্রবীণের ওয়েবসাইটে এখন শহরের বারোয়ারি পুজো তো রয়েইছে, দেখা মেলে বনেদি বাড়ির সাবেক প্রতিমারও। এ ছাড়া রয়েছে আর্কাইভ। ইচ্ছা হলে পুরনো পুজোর প্রতিমাও দেখে ফেলা যাবে সেখানে।

পুজো সংক্রান্ত আর একটি ওয়েবসাইটেও পুজো দেখার বন্দোবস্ত রয়েছে। রয়েছে কলকাতার বাস-ট্রাম-মেট্রোর রুট, সময়সূচি। সেই সঙ্গে আছে উৎসবের দিনে কোথায় পেট্রোল পাম্প মিলবে, এমনকী তড়িঘড়ি টাকা পেতে এটিএমের হদিসও। পুজোর পাঁজি থেকে দুর্গার উৎসরহস্য মায় পুজোর ফর্দও ওই ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, যত দিন যাচ্ছে, ততই জনপ্রিয় হচ্ছে এই সব ওয়েবসাইট। তাই প্রতি বছরই সেগুলির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে পুজো কমিটিগুলি। বস্তুত, ইন্টারনেটের যুগে ওয়েবসাইটের হাত ধরে জনপ্রিয় হচ্ছে পুজোগুলিও। হাতিবাগানের কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো কমিটির কর্তা সোমেন দত্তের বক্তব্য, “আমরা উত্তর কলকাতার পুরনো পুজো। কিন্তু ওয়েবসাইটের হাত ধরে নতুন করে আমাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।”

কিছু কিছু ওয়েবসাইট দেখলে চমকেও উঠতে পারেন আমজনতা। এত পেশাদার মনোভাব নিয়ে যে পুজোর বিজ্ঞাপন করা যায়, তা ভাবতেই পারেন না অনেক প্রবীণেরাই। শহরে কোন শিল্পীর কাজ কী রকম, তারও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে ওয়েবসাইট। পুজোকর্তারা বলছেন, হাতেগোনা দু’একটি শিল্পীর নামই বেশি ঘোরে। কিন্তু নতুন অনেক শিল্পীর কাজও যে ফেলনা নয়, তা এই ওয়েবসাইট দেখলেই বোঝা যাবে।

পুজোর রমরমা বেড়েছে ফেসবুকেও। বছর দুয়েক আগে থেকেই ফেসবুকে নিজেদের প্রচার শুরু করেছিল ক্লাবগুলি। সারা বছর পুজোর ছবি-ট্যাগলাইন পোস্ট করে প্রচার চালায় তাঁরা। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, পুজো কমিটিগুলির পাশাপাশি এই প্রচারে নেমেছেন আরও অনেকেই। সব্য ভট্টাচার্য নামে এক কলেজপড়ুয়ার কথায়, “আমরা বন্ধুরা দলবেঁধে সামাজিক কাজে নেমেছিলাম। তার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবেই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে ফেসবুক পেজ চালু করি।”

ফেসবুকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পুজো পরিক্রমা সংক্রান্ত পেজগুলিও। উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়তেই একের পর এক ছবি পোস্ট হচ্ছে সেগুলিতে। কোথাও প্রতিমার গায়ে সদ্য মাটি পড়ছে, কোথাও বা মণ্ডপের কাজ চলছে। সেই পেজে বিভিন্ন পুজো কমিটিও নিজেদের বিজ্ঞাপন দিয়ে কৃতিত্ব জাহির করেছে।

বছর সাতেক আগেও উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ত বিশ্বকর্মা পুজোর পরে। পাড়ায় পাড়ায় বাঁশ, তেরপলের সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে পড়ত পুজোর মেজাজও। এখন তো দশমী পেরোতে না পেরোতেই ফের পুজোর বাজনা বাজে। মেজাজ জমতে শুরু করে পয়লা বৈশাখ থেকেই। ওয়েবসাইট-ফেসবুকে উপচে পড়ে পুজোর ছবি।

সৌজন্য অনলাইন!

kuntak chattopadhyay online puja internet kolkata news online kolkata news puja festival durga puja puja porikarama method
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy