রীতিমতো পেশাদারি কায়দায় খুন করে পালিয়েছিল তারা। নাম ভাঁড়িয়ে বিভিন্ন হোটেলে লুকিয়েও ছিল। এমনকী নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে ধরা পড়েও নিজেদের আসল নাম ফাঁস করেনি! এত কিছু করেও শেষরক্ষা হল না। সোনাগাছির নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দফতরের কেয়ারটেকার কবিতা রায়কে খুনে ধরা পড়ে গেল দুই কিশোরী।
গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ শুক্রবার জানান, কবিতাদেবীকে খুন করার পরে ওই দুই কিশোরী নীলমণি মিত্র স্ট্রিটে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোম থেকে পালায়। শুক্রবার শিলিগুড়ির একটি হোম থেকে তাদের পাকড়াও করে দার্জিলিঙের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করা হয়েছিল। লালবাজারের খবর, বোর্ডের নির্দেশে রাতেই দুই কিশোরীকে নিয়ে কলকাতামুখী দার্জিলিং মেলে চেপেছেন তদন্তকারীরা। উদ্ধার হয়েছে কবিতাদেবীর এবং নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির মোবাইল ফোন। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘যে ভাবে খুন করে ঠান্ডা মাথায় পালিয়েছিল ওরা, তাতে আমরা যারপরনাই বিস্মিত। এমন কাজ তো পাকা মাথার অপরাধীরা করে!’’
৩১ অক্টোবর বৌবাজারের যৌনপল্লি থেকে বনগাঁর বাসিন্দা দুই কিশোরীকে উদ্ধার করে নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে রাখা হয়। পুলিশ জেনেছে, হোমে আসা ইস্তক নানা রকম আপত্তি জুড়ছিল তারা। খাওয়াদাওয়াও করতে চায়নি। ভাইফোঁটার দিন দুপুরে হোমের কেয়ারটেকার কবিতাদেবী যখন রান্না করছিলেন, সে সময়ে তাঁকে নোড়া দিয়ে আঘাত করে খুন করে দুই কিশোরী। তার পরে সংস্থার টাকা হাতিয়ে হাওড়া স্টেশনে যায় এবং মালদহ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে চেপে পৌঁছয় মালদহে। সেখান থেকে অসমগামী একটি ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। দিন কয়েক শিলিগুড়ির বিভিন্ন হোটেলে গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পরে গত সোমবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে তাদের আটক করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তারা। কথাবার্তায় অসঙ্গতি মেলায় ওই দু’জনকে হোমে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, হোমের কর্তাদের কাছে নিজেদের পরিচয় ফাঁস করেনি দুই কিশোরী। ফলে তদন্তকারীরা ওদের খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু শিলিগুড়ির ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি সরকারের ‘মিসিং চাইল্ড’ পোর্টালে দুই কিশোরীর তথ্য জানাতেই নড়ে বসেন কলকাতার তদন্তকারীরা। শিলিগুড়ির পুলিশের মাধ্যমে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে দুই কিশোরীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় লালবাজার। তার পরেই তাদের ধরতে শিলিগুড়ি রওনা দেয় বড়তলা থানার একটি দল।
গোড়া থেকেই তদন্তকারীদের একাংশ বলে আসছিলেন, এই খুনের সঙ্গে ওই দুই কিশোরী জড়িত। এ দিন লালবাজারের কর্তারা দাবি করেছেন, এখনও পর্যন্ত দুই কিশোরী ছাড়া বাকি কারও জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। তবে আরও বিশদে জানতে দুই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলা হবে।