Advertisement
E-Paper

জেলের নজরদারিতেই কি ফাঁক, উঠছে প্রশ্ন

অনেকগুলি কারণই উঠে আসছে কারা-কর্তাদের কথায়। এক, কারা দফতরের একাংশের কর্তারা জানাচ্ছেন, বছর চারেক আগে ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা শিফ্‌ট ডিউটি পরিবর্তন এর পিছনে অন্যতম কারণ। আগে কারারক্ষীদের ডিউটি ভাগ করা ছিল দিনে-রাতে মোট সাতটি শিফ্‌টে।

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৬

২০১৪ সালের ৮ অগস্ট।

আলিপুর জেল থেকে পালায় তিন বন্দি। আদিগঙ্গার পাড় ধরে, ওয়াচ টাওয়ারের গা ঘেঁষে, পাঁচিল টপকে।

২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি।

আলিপুর জেল থেকে পালাল তিন বাংলাদেশ বন্দি। ঠিক একই জায়গা থেকে, একই ভাবে।

এ বার শুধু একটাই নতুনত্ব। সে বার ভোর তিনটে নাগাদ শেষ বন্দি পাঁচিল থেকে নীচে ঝাঁপ দিতেই কয়েকটি রাস্তার কুকুর চেঁচিয়ে ওঠে। তাতেই সম্বিৎ ফেরে ওয়াচ টাওয়ারে ডিউটিতে থাকা পুলিশদের। পাগলা ঘণ্টি বেজে ওঠে জেলের। এ বার শীতের রাতে কুকুর ছিল না। তাই ঘুণাক্ষরে টের পায়নি কাকপক্ষীও। ভোর ছ’টায় জেলের ভিতরে গুণতির সময়ে ধরা পড়ে তিন বন্দি উধাও।

প্রায় সাড়ে তিন বছরের তফাতে বন্দি পালায়। ঠিক একই রাস্তা ধরে, একই ভাবে। কিন্তু কারা দফতরের টনক নড়ে না। এমনটা হয় কী ভাবে?

অনেকগুলি কারণই উঠে আসছে কারা-কর্তাদের কথায়।

এক, কারা দফতরের একাংশের কর্তারা জানাচ্ছেন, বছর চারেক আগে ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা শিফ্‌ট ডিউটি পরিবর্তন এর পিছনে অন্যতম কারণ। আগে কারারক্ষীদের ডিউটি ভাগ করা ছিল দিনে-রাতে মোট সাতটি শিফ্‌টে। দিনে দু’টি শিফ্‌ট, সন্ধ্যা ছ’টা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ট মোট পাঁচটি শিফ্‌ট ছিল। ৬টা থেকে ৯টা, ৯টা থেকে ১১টা, ১১টা থেকে রাত ১টা, ১টা থেকে ৩টে এবং ৩টে থেকে সকাল ৬টা। এই ব্যবস্থা বদলায় ২০১৩ সালে। এখন ডিউটি তিনটে শিফ্‌টে— সকাল ৬টা থেকে দুপুর দেড়টা, দেড়টা থেকে রাত ১০টা। তার পরে ভোর ছ’টা পর্যন্ত। নতুন শিফ্‌ট ডিউটির কারণে রাত দুটো থেকে রাজ্যের প্রতি জেলই কার্যত বন্দিদের কাছে মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে। এক কারা-কর্তার তির্যক উক্তি, ‘‘প্রতি দিনই এ রাজ্যের প্রতিটি জেলে বন্দি পালানোর ঘটনা যে ঘটে না, সেটাই আশ্চর্যের।’’

অন্য অংশের কারা-কর্তারা এর পিছনে অবশ্য কারারক্ষীদের গাফিলতিকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘ব্রিটিশ আমলের নিয়মে কি জেল থেকে বন্দি পালায়নি? আসলে রক্ষীরা নিজেদের কাজ ঠিকমতো পালন করলে এত সমস্যা হয় না।’’ আর এক কর্তার প্রশ্ন, ‘‘এত দিন ধরে দু’-তিন জন বন্দি মিলে গরাদ কাটল। জেলে এক জন রক্ষীর দায়িত্বে গরাদ ঠিক আছে কি না, তা দেখা। তিনি প্রতি দিন তা পরীক্ষা করলে কি এত বড় ঘটনা তাঁর চোখ এড়িয়ে যেত?’’

আলিপুর জেলের ৬ এবং ৭ নম্বর ওয়াচ টাওয়ারের মধ্যের এলাকা একটু একটেরে। জেলের ছাপাখানা ও রান্নাঘরের পিছনের এই অংশের বাইরে খালপাড়ের রাস্তাতেও ভিড় কমই থাকে। তিন বছর আগে ঠিক এই এলাকা দিয়েই বন্দি পালিয়েছে। তার পরেও এখানে সিসি ক্যামেরা বসানো হল না কেন? কেনই বা বাড়ানো হল না নজরদারি, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। কারা-কর্তারা মানছেন, মার্চ মাসের মধ্যেই আলিপুর জেল বারুইপুরে উঠে যাওয়ার কথা। তাই সার্বিক ভাবে আলিপুর জেলের নিরাপত্তা নিয়ে ঢিলেমি ছিল। এমনকী, এই জেলে মোবাইল-জ্যামার চালালে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্য সচিবের বাড়িতে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। সে জন্য বন্ধ রয়েছে জেলের মোবাইল জ্যামারও।

গাফিলতি যেখানে

• রাত দু’টোর পরে নিরাপত্তায় ঢিলেমি

• ধরা পড়ল না গরাদ কাটার প্রক্রিয়া

• আধ ঘণ্টার অপারেশন, টের পেল না কেউ

• টের পেল না ওয়াচটাওয়ারের পুলিশও

• তিন বছরের তফাতে একই জায়গা, টনক নড়েনি

• আশপাশে থাকেন ভিভিআইপি-রা, চলে না মোবাইল-জ্যামার

কলকাতা পুলিশের কর্তারা জানাচ্ছেন, গাফিলতি রয়েছে কর্মীদের নজরদারিতেও। রাত দুটোর পর থেকে ওয়াচ টাওয়ারের পুলিশও ঘুমিয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ। কার্যত তাদের নাকের ডগা দিয়েই পালিয়েছে তিন বন্দি।

কলকাতার তিন জেলে খাগড়াগড় কাণ্ড-সহ বেশ কিছু মামলায় ধৃত একাধিক বাংলাদেশি দাগি অপরাধী রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জেল পালানোর অভিযোগ আছে। এই ঘটনায় ওই বন্দিদের নিয়ে আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের গোয়েন্দারা।

jail surveillance Alipore Jail
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy