E-Paper

জমা জলে রাস্তার গর্ত বোঝা দায়, প্রাণ হাতে যাতায়াত বন্দরের রাস্তায়

জানা গিয়েছে, বন্দর এলাকায় ৩২টি রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার পরেপ্রতিটি রাস্তা পরিদর্শন করা হয়েছিল। এর পরে‌ বড় অংশের রাস্তা ‘পেভার ব্লক’ দিয়ে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৬:৫১
বেহাল: কোথাও রাস্তার বিশালাকার গর্তে জমেছে জল, কোথাও আবার পিচ উঠে এবড়োখেবড়ো অবস্থা।

বেহাল: কোথাও রাস্তার বিশালাকার গর্তে জমেছে জল, কোথাও আবার পিচ উঠে এবড়োখেবড়ো অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এমনই বেহাল দশা বন্দর এলাকার বিভিন্ন রাস্তার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

রাস্তার মাঝ বরাবর কয়েক মিটার জুড়ে তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। বৃষ্টির জমা জলে সে সবেরগভীরতাও বোঝা দায়। অবস্থা এমনই বড় গাড়ি তো দূর, মোটরবাইক-সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করাও কার্যত দুষ্কর। বিকল্প কোনও উপায় না থাকায় ওই রাস্তা দিয়েই ছোট-বড়গাড়ি নিয়ে যেতে গিয়ে প্রায়ই নানা দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ। কোনও সময়ে রাস্তার মাঝে গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে আটকে যাচ্ছে, কখনও রাস্তার কারণে বিকল হচ্ছে গাড়ি।

টানা কয়েক সপ্তাহের বৃষ্টিতে বন্দর এলাকার কোল বার্থ রোড, কোল্ড ডক ডিপোরোডের অবস্থা এখন এমনই ভয়াবহ। ওই সব রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন কমবেশি ১০-১২টি গাড়ি রাস্তাতেই আটকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। শুধু ওই দু’টিরাস্তা নয়, তারাতলা রোড, খিদিরপুর রোডেরও একই অবস্থা। জায়গায় জায়গায় বেহাল হয়ে রয়েছে হাইড রোডও। এই রাস্তাগুলির উপরে নির্ভরশীল বন্দর এলাকারবাসিন্দাদের দাবি, কয়েক মাস ধরে খানাখন্দে ভরে গিয়েছে বন্দরের একাধিক রাস্তা। যার ফলেপ্রতিদিন কার্যত প্রাণ হাতে করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। খিদিরপুর, মোমিনপুর, মহেশতলার বাসিন্দারা সব থেকে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।বন্দরের রাস্তা দিয়ে রোজ যাতায়াতকারী, প্রসূন হালদার নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘কয়েকটি রাস্তা গ্রামের রাস্তাকেও হার মানাবে।আগে তা-ও কোনও মতে যাতায়াত করা যেত। কিন্তু টানা বৃষ্টির ফলে এখন সেই অবস্থাও নেই।গাড়ি নিয়ে তো দূর, হেঁটে যেতেও ভয় লাগে।’’

বন্দর এলাকার বেহাল রাস্তার কারণে তিন বছর আগে প্রাণ গিয়েছিল পুর প্রতিনিধিরামপেয়ারি রামের পুত্রের। রিমাউন্ট রোড ধরে নিজের গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার পথে সারবোঝাই একটি লরি উল্টে গাড়ির উপরে পড়ে। গাড়ির ভিতরেই পিষে যানরামকিঙ্কর রাম (৩৬)। প্রাথমিক ভাবে রাস্তার মাঝে বিরাট গর্ত থাকায় সেখানে চাকা পড়ে সারবোঝাই লরিটি উল্টে গিয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে।ওই দুর্ঘটনার পরে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বন্দর কর্তৃপক্ষ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে বন্দরের একাধিক রাস্তা মেরামতির কাজেও হাত দেওয়া হয়। রাস্তার স্থায়িত্ব বাড়াতে পিচের বদলে ‘পেভার ব্লক’ দিয়ে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়।

জানা গিয়েছে, বন্দর এলাকায় ৩২টি রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার পরেপ্রতিটি রাস্তা পরিদর্শন করা হয়েছিল। এর পরে‌ বড় অংশের রাস্তা ‘পেভার ব্লক’ দিয়ে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বন্দর সূত্রের খবর, রাস্তা মেরামতির জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। যার অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। হাতে গোনা যে ক’টি রাস্তা খারাপ, বর্ষার পর সেগুলিরও মেরামতির কাজ শুরু হবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। এমনকি, মেরামতির পরেও যে রাস্তাগুলির কয়েকটি জায়গায় ‘পেভার ব্লক’ উঠে গিয়েছে, সেগুলিও মেরামতির কাজ চলছে। বন্দরের জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয়কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি রাস্তায় গত কয়েক মাস ধরে পুরসভার তরফে পাইপলাইনের কাজ করা হচ্ছিল। ফলে সেখানে পুনরায় মেরামতির কাজ শুরু করা যায়নি। এক সপ্তাহ হল আমরা রাস্তাগুলি হাতে পেয়েছি। ইতিমধ্যেই দরপত্র ডেকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বৃষ্টি থামলেই দ্রুত রাস্তা মেরামত করে দেওয়া হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Road condition Port area

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy