Advertisement
E-Paper

কোলে তিন মাসের দগ্ধ শিশু, ওয়ার্ড খুঁজতেই এক ঘণ্টা ঘুরপাক খেলেন মা

সুহানা খাতুন নামে ওই শিশু বৃহস্পতিবার দুপুরে গরম জলের বালতিতে প়ড়ে যায়। পুড়ে যায় কাঁধ, বুক-সহ শরীরের একাধিক অংশ। সুহানার মা জাহানারা প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে এসএসকেএমে যান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩১
হয়রানি: পুড়ে যাওয়া সুহানা খাতুনকে কোলে নিয়ে মা। নিজস্ব চিত্র

হয়রানি: পুড়ে যাওয়া সুহানা খাতুনকে কোলে নিয়ে মা। নিজস্ব চিত্র

পায়ে হেঁটে মিনিট চারেক। কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ৩০০ মিটার দূরে রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ে পৌঁছতে ঘণ্টাখানেক লাগল ভাঙড়ের এক মায়ের। বৃহস্পতিবার মাস তিনেকের দগ্ধ শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে হল তাঁকে। অভিযোগ, জরুরি বিভাগের কর্মী, নিরাপত্তা রক্ষী-সহ একাধিক জনকে ওয়ার্ড টিকিট দেখিয়েও নির্দিষ্ট ভবনে পৌঁছনোর পথ ওই মা— জাহানারা বিবি জানতে পারেননি।

অথচ এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিভাগের পথ দেখানোর জন্য একাধিক কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। কেন ওঁদের হয়রানি হল, তা খতিয়ে দেখা হবে। তার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ একই কথা হাসপাতালের সুপার রঘুনাথ মিশ্রেরও। তাঁর বক্তব্য, অ্যালেক্স ওয়ার্ডে অগ্নিদগ্ধ শিশুদের রাখা হয়। তাই জরুরি বিভাগ থেকেই সরাসরি ওই ওয়ার্ডে পাঠানোর কথা।

সুহানা খাতুন নামে ওই শিশু বৃহস্পতিবার দুপুরে গরম জলের বালতিতে প়ড়ে যায়। পুড়ে যায় কাঁধ, বুক-সহ শরীরের একাধিক অংশ। সুহানার মা জাহানারা প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে এসএসকেএমে যান। টিকিট করান জরুরি বিভাগ থেকে। জাহানারার বক্তব্য, তাঁদের রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ে যেতে বলা হয়। জরুরি বিভাগ থেকে ওই বিল্ডিংয়ে যেতে মিনিট চারেক লাগে। তবে কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে, তা জাহানারা জানতেন না। অভিযোগ, জরুরি বিভাগের কর্মীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘সামনে এগিয়ে যাও।’ এরপরে নার্স-সহ একাধিক ব্যক্তিকে জাহারারা প্রশ্ন করলেও দিশা পাননি। প্রায় ঘণ্টা খানেক ঘুরপাক খাওয়ার পরে কার্ডিয়োভাস্কুলার বিভাগের পিছনে নির্দিষ্ট বিল্ডিং খুঁজে পান তাঁরা।

তবে রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ে গিয়ে জাহানারা জানতে পারেন, মেয়েকে নিয়ে যেতে হবে ‘লাল বাড়ি’তে, অ্যালেক্স ওয়ার্ডে। তাঁর দাবি, কর্তব্যরত নার্সকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বাইরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেই সব পেয়ে যাবেন। ফের শুরু ঘুরপাক। জাহানারা শুক্রবার বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে চারটে থেকে ঘুরেছি। একটা বাড়ি খুঁজে পেলাম। সেখানে গিয়ে বলল, আর এক জায়গায় যেতে হবে। হাসপাতালের দু’দিকে লাল বাড়ি আছে। কোনটায় যাব বুঝতে পারছিলাম না। নীল শার্ট পরা (নিরাপত্তা এবং হাসপাতাল কর্মীরা নীল রঙের শার্ট পরেন) অনেককেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কেউ ঠিক করে কিছু বলছিল না।’’ শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অন্য এক রোগীর আত্মীয় ওয়ার্ড ফাইল দেখে বুঝতে পারেন, মেন বিল্ডিংয়ে যেতে হবে। তাঁর সাহায্যেই নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে পৌঁছন জাহানারারা।

তবে সুহানার মায়ের অভিজ্ঞতা ব্যতিক্রম নয়। হাসপাতালে বড় ব্যানারে পথ-নির্দেশ থাকলেও রোগীদের পরিবারের একাংশের দাবি, তা এত জটিল যে বোঝা মুশকিল। হাসপাতালের কোনও কর্মীকে প্রশ্ন করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তর মেলে না। কর্তৃপক্ষ জানান, পথ-নির্দেশ সরল ও সোজা করার চেষ্টা হচ্ছে।

এ ছাড়াও প্রশ্ন, দগ্ধ শিশুকে ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করার সময় কেন হাসপাতাল কর্মী থাকবেন না? সংক্রমণের ঝুঁকি তো থাকেই। সেই দায় কার? তা ছাড়া কোনও রোগীর পরিজন নিরক্ষর হলে তাঁকে পথ নির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব কি হাসপাতালের নয়? সংক্রমণের প্রশ্নে হাসপাতালের এক কর্তা শুধু বলেন, ‘‘ঝুঁকি তো থাকেই। তবে জরুরি বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে নিয়ে যেতে হলে সম্পূর্ণ সংক্রমণ এড়ানোর ব্যবস্থা এখনও নেই।’’

Ronald Ross Building SSKM Burn Child
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy