তখনও ঘুম ভাঙেনি। রবিবার সকাল ৫টা নাগাদ মোবাইল বাজতেই ধড়মড় করে উঠে বসলাম। ফোন করেছিলেন সহকর্মী সোমনাথ। বলল, বাগড়ি মার্কেট পুড়ে গিয়েছে। যেখানে প্রায় ১৫ বছর ধরে কাজ করছি, সেই মার্কেট পুড়ে গিয়েছে! মাথা কাজ করছিল না। ফোন রেখে জামাকাপড় বদলেই বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় দেখি, ভোর পৌনে ৪টেয় মিসড কল। ফোন করেছিলেন আর এক সহকর্মী।
বাড়িতে মা অসুস্থ। মাসে প্রায় আড়াই হাজার টাকার ওষুধ লাগে। মেয়ে বরাহনগর রাজকুমারী গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ের পড়াশোনার জন্য ‘টিউশন ফি’ বাবদ মাসে খরচ প্রায় তিন হাজার টাকা। আমার রোজগারের টাকায় পুরো সংসার চলে। সামনেই আবার পুজো।
ক্যানিং স্ট্রিটে পৌঁছনো ইস্তক পুড়ে যাওয়া বাড়িটির দিকে চেয়েছিলাম। একটাই প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, এর পর গোটা সংসারটা কীভাবে চলবে? কী করব, কীভাবে চালাব? পুজোর সময় কত রকম পরিকল্পনা করেছিলাম। মেয়েকে কথা দিয়েছিলাম, পুজোর চারটে দিনই শহরের পুজো মণ্ডপে ঘুরে বে়ড়াব। এখন ভাবছি, পকেটে টাকা না থাকলে খাব কী?
পুজোর সাতদিন আগে বোনাসও পেতাম। এ বছর পুজো অক্টোবরের মাঝামাঝি। তাই বোনাস সামনের মাসের গোড়ায় পাওয়ার কথা ছিল। সেই বোনাসের টাকায় পরিবারকে নিয়ে কালীপুজোর ছুটিতে ঘুরতে যাব ভেবেছিলাম। এই অবস্থায় বোনাসও হয়তো পাব না।
আরও পড়ুন: আগুন নেভাতে সেনা ডাকবে কি না, ভেবেই পেল না মন্ত্রিগোষ্ঠী!
ভাবছিলাম, দোকানটা তো পুড়ে গেল চোখের সামনেই। কিছুই করতে পারলাম না। দু’বছর আগে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য দোকানের মালিকের কাছে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন বাজার কর্তৃপক্ষ। পুরো ব্যবস্থাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ধুনো দিলেই তো ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠত। শনিবার কী হল?
কী হবে এবার? ১৫ বছর ধরে বড়বাজারের যে চেনা পথ ধরে দোকানে আসতাম, সেই পথ ধরে আবার আসতে পারব তো!
(লেখক বাগড়ি মার্কেটের দোতলায় ওষুধের দোকানের কর্মচারী)