Advertisement
E-Paper

চাপেই কি মত বদল? প্রশ্ন যাদবপুরের অন্দরেই

যাদবপুর সূত্রের খবর, সেদিন দু’টি বৈঠক হয়। প্রথমে আলোচনা হয় আচার্য-রাজ্যপালের বক্তব্য নিয়ে। প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা হয় দ্বিতীয় বৈঠকে। সেখানে ২৭ জুনের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।

সুপ্রিয় তরফদার ও স্যমন্তক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৩
অনেকেই বলছেন, পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের জেরেই এই সিদ্ধান্ত বদল। —ফাইল চিত্র।

অনেকেই বলছেন, পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের জেরেই এই সিদ্ধান্ত বদল। —ফাইল চিত্র।

ব্যবধান মাত্র ছ’দিনের। তাতেই মতটা ঘুরে গেল একেবারে ১৮০ ডিগ্রি!

প্রবেশিকা পরীক্ষার পক্ষে মত দিলেন কর্মসমিতির সদস্যদের একটি বড় অংশ। কিন্তু কেন বারবার সিদ্ধান্ত বদল, উঠছে প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন, পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের জেরেই এই সিদ্ধান্ত বদল।

২৭ জুনের বৈঠকে ঠিক হয়, কলা বিভাগের ছ’টি বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে। কিন্তু ৪ জুলাই মত বদলান কর্মসমিতির অধিকাংশ সদস্যই। বৈঠকে উপস্থিত ছ’জন পরীক্ষার পক্ষে মত দিলেও ন’জন বিপক্ষে ছিলেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। প্রবেশিকা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। শুরু হয় পড়ুয়াদের আন্দোলন। ভর্তি-পরীক্ষার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। চাপের মুখে ফের কর্মসমিতি বসে ১০ জুলাই।

ভর্তি ঘিরে খামখেয়াল

• ৯ জুন: প্রবেশিকার বিজ্ঞপ্তি।

• ১৫ জুন: কর্মসমিতিতে প্রবেশিকা পরীক্ষার বিরুদ্ধে মত।

• ২৭ জুন: অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ মেনে আলোচনা। বহাল প্রবেশিকা। পরীক্ষার দিন বদল।

• ৪ জুলাই: প্রবেশিকা বাতিল। নতুন নিয়মে ভর্তির দিন ঘোষণা।

• ১০ জুলাই: ফের কর্মসমিতির বৈঠক। ফিরল প্রবেশিকা।

• ১১ জুলাই: প্রবেশিকা পরীক্ষার দিন ঘোষণা।

যাদবপুর সূত্রের খবর, সেদিন দু’টি বৈঠক হয়। প্রথমে আলোচনা হয় আচার্য-রাজ্যপালের বক্তব্য নিয়ে। প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা হয় দ্বিতীয় বৈঠকে। সেখানে ২৭ জুনের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। অর্থাৎ প্রবেশিকা চালু থাকছে। যদিও সেই আলোচনায় যোগ দেননি রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। সমিতির প্রস্তাব বা সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেননি উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য। তাঁরা ওই প্রস্তাবের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেননি। বৈঠকের বিবরণীতে বলা হয়, ‘নট পার্টি টু দ্য রেজোলিউশন’। উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধি মনোজিৎ মণ্ডল পরীক্ষার বিপক্ষে মত দেন। কোনও মতামত দেননি অর্থনীতির প্রধান অর্পিতা ঘোষ (ধর)। আগের বৈঠকে যিনি পরীক্ষার বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন। বাকি ১২ জন সদস্যই পরীক্ষার পক্ষে মত দেন। প্রবেশিকার সিদ্ধান্তের পরে সেটি ‘কনফার্ম’ বা নিশ্চিত করার জন্য উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে অনুরোধ করা হয়। সিদ্ধান্তের পক্ষে না-থাকলেও সিদ্ধান্তে সই করতে বাধ্য হন সুরঞ্জনবাবু। স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের প্রধান সঞ্জীব নাগ বলেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল, প্রবেশিকা পরীক্ষা না-হলেই সমস্যা মিটবে। পরে দেখলাম, পরীক্ষা না-হওয়াটাই বড় সমস্যা।’’

ইন্টারনাল ডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ়, ল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিন শমিতা সেন বলেন, ‘‘ব্ল্যাকমেল ও রাজনৈতিক চাপের মুখেই মত বদলাতে হয়েছে।’’ তিনি জানান, ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা থাকতে পারেন কি না, তা নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সেই জটিলতা মেটানো সময়সাপেক্ষ। তাই দ্রুত ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যই প্রবেশিকা পরীক্ষা বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পড়ুয়ারা অনশন করায় চাপ তৈরি হয়। ফলে মতও বদলাতে হয়।

কলা বিভাগের ডিন শুভাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, ভর্তি প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য এ বছর পরীক্ষা না-নিলেই ভাল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যে-ভাবে আন্দোলন শুরু হল, তাতে বুঝলাম, পরীক্ষা নিলেই দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’’ সংস্কৃত বিভাগের প্রধান তপনশঙ্কর ভট্টাচার্যকে ফোন করলে বলা হয়, তিনি বাড়ি নেই। রসায়নের প্রধান কল্যাণকুমার দাসকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনিও ১০ জুলাইয়ের বৈঠকে মত বদল করেছেন। বিজ্ঞান বিভাগের ডিন সুব্রত কোনারকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিধির ৬৭(১৩) এবং ৬৮(৪) ধারা অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে কর্মসমিতি সিদ্ধান্ত বদল করতে পারে না। সেখানকার প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রজত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১২০ দিনের মধ্যে এ ভাবে সিদ্ধান্ত বদলের অধিকার নেই কর্মসমিতির।’’ শিক্ষক সংগঠন আবুটা-র যুগ্ম সম্পাদক গৌতম মাইতি জানান, এটা নজিরবিহীন নয়। ভিতর এবং বাইরের রাজনৈতিক চাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রায়ই এই ধরনের বেআইনি কাজ করে থাকে। ‘‘উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকার মাঝেমধ্যেই কর্মসমিতির উপরে চাপ সৃষ্টি করে,’’ বলেন জুটা-র সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়।

Jadavpur University Student Protest Student Movement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy