Advertisement
E-Paper

নাচেই মুক্তির খোঁজ ‘দাগি’ ছেলেদের

পুরুষ মনের এই ক্লেদ মুছতে না-পারলে সমাজেরও মুক্তি নেই! তা-ই অসুখটার শিকড়ে ঘা মারার পথ খুঁজছিলেন নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০৩:৩৪
অলকানন্দা রায়

অলকানন্দা রায়

কী করে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে পুরুষ? সম্প্রতি জম্মুর কাঠুয়ায় ৮ বছরের মেয়েটিকে ধর্ষণ ও খুনের অভিঘাতেই ভাবতে শুরু করেছিলেন তিনি।

পুরুষ মনের এই ক্লেদ মুছতে না-পারলে সমাজেরও মুক্তি নেই! তা-ই অসুখটার শিকড়ে ঘা মারার পথ খুঁজছিলেন নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়। সরকারি হোমে অপরাধী-তকমাধারী বালকদের নাচ শেখানোর কথা তখনই মাথায় আসে! সংশোধনাগারের বন্দিদেরও এ ভাবেই শিখিয়েছিলেন অলকানন্দা। গোটা দেশ ঘুরে তখন পর পর নৃত্য আলেখ্যের অনুষ্ঠান করে চলেছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরাও। এই স্বীকৃতি মানুষের সম্মান দিয়ে সে-দিন ফিরিয়ে এনেছিল দাগি কয়েদিদের হৃত মর্যাদাবোধ। এ বার ছোট ছেলেদের মধ্যেও ইতিবাচক প্রাণশক্তি সঞ্চার করা তাঁর লক্ষ্য।

জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট বা নাবালক বিচার আইনে চিহ্নিত ছোট ছেলেদের একমাত্র সরকারি হোম আড়িয়াদহের ধ্রুবাশ্রমে ইতিমধ্যে ঘুরেও এসেছেন অলকানন্দা। অপরাধী-তকমা থাকলেও ওই খুদেদের অবশ্য অপরাধী বলাটা আইনত গর্হিত এখন। বলা হয়, ‘চিলড্রেন ইন কনফ্লিক্ট উইথ ল’ বা আইনের সঙ্গে সংঘাতগ্রস্ত নাবালক। ৮-৯ থেকে ১৬-১৭র বালক-কিশোরেরা রয়েছে ধ্রুবাশ্রমে। তাদের কারও কারও নামে খুন-ধর্ষণেরও অভিযোগ রয়েছে। ঠিক হয়েছে, ৪ জুলাই থেকে প্রতি বুধবার দুপুরে ঘণ্টা দেড়েক ওই খুদেদের মাঝে কাটাবেন অলকানন্দা। ছেলেদের নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান হলে বাড়বে চর্চার মেয়াদ। দরকারে তখন ঘন ঘন যাবেন অলকানন্দা। সবাই মিলে নাচের সৃষ্টিশীল সুযোগ যে অপরাধী-তকমাধারী বালকদের উত্তরণ ঘটাবে তা নিয়ে আশাবাদী সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তিনি বলছেন, ‘‘বন্দিদের মতো হোমের ছেলেদের মূল স্রোতে ফেরাতেও অলকানন্দার তালিম কাজে আসবে বলে মনে হয়। এই প্রস্তাবে আমরা রাজি হয়েছি।’’

রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের মনস্তত্ত্ববিদদের মাধ্যমে ধ্রুপদী সঙ্গীত শুনিয়ে বা ‘মিউজ়িক থেরাপি’তে ছোটদের মনের ক্ষত সারানোর কাজ হয়েছে ধ্রুবাশ্রমে। কিন্তু নাচের দীক্ষা নতুন। সমাজের চোখে দাগি হলেও এই কিশোরদের ফের মাথা উঁচু করে সমাজে ফেরানোই লক্ষ্য সরকারি হোমের। ধ্রবাশ্রমের সুপার অর্ণব রায়ের কথায়, ‘‘একবার দাগি বলে চিহ্নিত হওয়ার পরে ছোট ছেলেরা একেবারেই হতাশ হয়ে পড়ে। নাচ শেখার এই সুযোগ তাদের পরে সসম্মানে সবার সঙ্গে বাঁচার ইচ্ছেটা বাড়িয়ে দেবে বলে মনে হয়।’’ কিন্তু কাজটা সহজ নয় জানেন অলকানন্দা।

রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্পে রয়েছে পৃথিবীর সব থেকে বড় বালাই হল ১৩-১৪ বছরের ছেলেরা! দেখে মায়া হয় না, কোনও কাজেও লাগে না! তাদের আধো কথা ন্যাকামি, পাকা কথা জ্যাঠামি, আবার কথা মাত্রই প্রগল্‌ভতা। বড় বা ছোট— কোনও দলেই ঠিক খাপ খায় না ওই ছেলেরা। অলকানন্দারও মনে হয়, কিশোর বয়সে মেয়েরা বরং অনেকের মনোযোগ পায়। ছেলেরা ততটা গুরুত্ব না-পেয়ে ক্রমশ মুখচোরা হয়ে গুটিয়ে যায়, কিংবা বিপথে ঝোঁকে। তা-ই আলাদা করে বালক-কিশোরদের নিয়েই কাজ করতে চান অলকানন্দা। ‘‘মেয়েদের জন্য তা-ও কিছু কাজ হচ্ছে! কিন্তু ছেলেদের আমরা যেন বয়ে যেতে দিচ্ছি।’’— বলছেন তিনি। অলকানন্দার উপলব্ধি, ‘‘ছেলেরা কাঁদলে আমরা হাসি! কিন্তু ভালওবাসি না। তা হলে ওরা কী করে বড় হয়ে ভালবাসতে, মেয়েদের সম্মান করতে শিখবে?’’

নাচের ছোঁয়ায় ছেলেদের ভালবাসতে শেখানোর কাজেই জীবনের নতুন দায়বদ্ধতা খুঁজে পেয়েছেন অলকানন্দা।

Alokananda Roy Jail convicts Dance Therapy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy