এ বারের বর্ষণে। — ফাইল চিত্র।
ঘণ্টাটা বাজালেন স্বয়ং পুর কমিশনার। ঝড়বৃষ্টির পরিস্থিতি মোকাবিলায় রবিবার বিকেলে ডাকা জরুরি বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে পুর কমিশনার খলিল আহমেদই প্রশ্ন তুলেছেন ঠনঠনিয়া, আমহার্স্ট স্ট্রিটের জলযন্ত্রণা নিয়ে। ফি বর্ষায় কেন ওই এলাকাগুলিতে নৌকো, স্পিডবোট নামাতে হবে, কেন পুরসভার নিকাশি দফতর এত কাল ধরে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি— বৈঠকে তা সোজাসাপ্টা জানতে চেয়েছেন তিনি। এত দিন এ নিয়ে বিশেষ হেলদোল না থাকলেও খোদ পুর-কমিশনার প্রশ্ন তোলায় অগত্যা নড়েচড়ে বসেছেন পুর-আধিকারিকেরা। আলোচনাতেই বেরিয়ে এসেছে, নিকাশি ব্যবস্থার ত্রুটিতেই ওই দুই এলাকার এই হাল। এর পাশাপাশি ঠিক হয়েছে, এ বার জল জমার জন্য পরিচিত অন্য এলাকাগুলিরও নিকাশির হাল জানতে রিপোর্ট চাইবে পুরসভা।
পুরসভা সূত্রে খবর, ২৮ জুলাই থেকে টানা ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিস্তীর্ণ এলাকা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পরদিন থেকেই বিকেলে শহরের প্রতিটি বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স চালু করেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। সেই সূত্রেই রবিবারের ওই বৈঠক।
গত মাসে আনন্দবাজারে প্রকাশিত ঠনঠনিয়া ও আমহার্স্ট স্ট্রিটের জল জমার ছবি প্রকাশ হতেই মেয়র জানিয়েছিলেন, ওখানে তো অল্প বৃষ্টি হলেই জল জমে। অর্থাৎ সেখানে বানভাসি হওয়াই যেন ভবিতব্য। এবং বৃষ্টি হলে বরাবরই ভোগান্তি হবে, দুই এলাকার বাসিন্দাদের তা মেনে নেওয়াটাই যেন দস্তুর। রবিবারের বৈঠকে হাজির ছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। সেখানেই পুর কমিশনার নিকাশি দফতরের কাছে জানতে চান, দীর্ঘকাল থেকে ঠনঠনিয়া এবং আমহার্স্ট স্ট্রিটে জল জমে আসছে। কেন তা হবে? কী এমন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, যা সারানো যায় না? এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিভাগীয় কর্তাদের নির্দেশও দেন তিনি। ভিডিও কনফারেন্সেই নিকাশি দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, ওই দুই এলাকায় জল জমার প্রধান কারণ হল নিকাশি ব্যবস্থায় ত্রুটি। যতক্ষণ তা ঠিক না হবে, ততক্ষণ ওই হাল চলবে।
প্রশ্ন উঠেছে, তা জেনেও এত কাল কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ওখানকার পাম্পিং স্টেশনটি প্রয়োজনের তুলনায় কম শক্তিশালী। পাম্পিং স্টেশনের ক্ষমতা বাড়াতে ওই এলাকায় আরও জায়গা দরকার। তা পাওয়া যাচ্ছেনা। এর প্রেক্ষিতে পুর কমিশনারের প্রস্তাব দেন, পাম্পিং স্টেশন দু’তিন তলা করলেই সমস্যা মিটতে পারে।
ওই এলাকাগুলির ভোগান্তি ঘুচলে আখেরে তা যে তাঁদের নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ডের সাফল্য, সে কথা বিলক্ষণ জানেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। সোমবার এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আগে যতক্ষণ জল জমে থাকত, এখন ততটা থাকে না। পরিস্থিতি যাতে আরও ভাল করা যায়, তা দেখতে বলা হয়েছে।’’
ঠনঠনিয়া ও আমহার্স্ট স্ট্রিটের পাশাপাশি রবিবারের ওই বৈঠকে বাইপাস সংলগ্ন ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের জলমগ্ন চিত্র বদলাতেও জোর দিয়েছেন পুর কমিশনার। শহরের আয়তন বাড়ালেই হবে না, সঙ্গে শহরের নিকাশি ব্যবস্থাও যে মজবুত রাখতে হবে— তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারদের।
এর পাশাপাশি, শহরের জল-ছবি বদলাতেও উদ্যোগী হচ্ছে পুরসভা। মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ বলেন, ‘‘শহরের যে সব জায়গায় জল জমে, তার তালিকা চাওয়া হয়েছে। জমার কারণও জানাতে বলা হয়েছে।’’ প্রতিটি বরোর এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে শহরের কোথায় জল জমে, নিকাশি নালার বহর এবং গভীরতা কত, কত পলি জমা রয়েছে, নিকাশি নালা অবরুদ্ধ হয়ে আছে কি না, নিকাশির জন্য প্রয়োজনীয় গালিপিট রয়েছে কি না এবং বৈজ্ঞানিক ভাবে নিকাশি নালা করা হয়েছে কি না জানতে চেয়েছেন তিনি। কাল, বুধবার প্রতিটি বরোর অফিসারদের নিয়ে বৈঠক হবে। সেখানে প্রত্যেকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy