Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bijan Setu

ইঞ্জিনিয়ারদের নজরে ইঁদুর, কোথাও বা ফাটল

পড়ন্ত বিকেলে বিজন সেতুর নীচে এসে দাঁড়াতেই সেতুর দেওয়ালের গর্ত থেকে একটা ধেড়ে ইঁদুর বেরিয়ে এল। ইঁদুরের আকার দেখেই চমকে উঠল কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারদের দল।

স্বাস্থ্য-পরীক্ষা: চিংড়িঘাটা উড়ালপুলে চলছে পরিদর্শন। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

স্বাস্থ্য-পরীক্ষা: চিংড়িঘাটা উড়ালপুলে চলছে পরিদর্শন। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

পড়ন্ত বিকেলে বিজন সেতুর নীচে এসে দাঁড়াতেই সেতুর দেওয়ালের গর্ত থেকে একটা ধেড়ে ইঁদুর বেরিয়ে এল। ইঁদুরের আকার দেখেই চমকে উঠল কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারদের দল। ওই সেতুর নীচে বসা এক দোকানদার ইঞ্জিনিয়ারদের অভিযোগ করলেন,‘‘স্যর, সেতুর গর্তে কিন্তু প্রচুর ইঁদুর। ওগুলো সেতুর ভিতরের মাটিকে পুরো ক্ষয় ধরিয়ে দিচ্ছে।’’

মঙ্গলবার কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা বিজন সেতুর স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করতে গিয়ে শুধু ইঁদুরের অভিযোগই শুনলেন না, দোকানদারেরা দেখিয়ে দিলেন সেতুর ফাটল দিয়ে দিয়ে কী ভাবে জল চুঁইয়ে পড়ে। তাঁরা দেখালেন, সেতুর নীচে দোতলার বিপজ্জনক বারান্দা। ভাঙাচোরা বারান্দা দেখে এক ইঞ্জিনিয়ার বললেন,‘‘এমন একটা বারান্দা ভেঙে পড়লে তো অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারে! এটা ভেঙে ফেলা খুবই জরুরি।’’

শুধু বিজন সেতুই নয় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ন’টা থেকে কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল শহরের বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য-পরীক্ষা শুরু করে। এ দিন শুরুটা হয়েছিল উল্টোডাঙার অরবিন্দ সেতু দিয়ে। এর পরে উল্টোডাঙা সেতু, চিংড়িঘাটা সেতু, বাঘা যতীন উড়ালপুল ও সব শেষে বিজন সেতু। কোথাও ইঞ্জিনিয়ারেরা লক্ষ করলেন সেতুর গার্ডারের ফাটল, কোথাও আবার গার্ডার সরে যাওয়াও দেখলেন। কোথাও আবার লক্ষ করলেন ‘টেনশন ক্র্যাক’ কংক্রিটের উপর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে।

উল্টোডাঙা সেতুর একটি অংশ ২০১৩ সালে ভেঙে পড়েছিল। সেই সেতুর ওই ভাঙা অংশের নীচে এসে ইঞ্জিনিয়ারেরা দেখলেন নতুন জোড়া লাগানো গার্ডারের

কাছেও ফের ফাটল দেখা গিয়েছে। এক ইঞ্জিনিয়ার তাঁর চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বললেন, ‘‘স্যর, দেখুন গার্ডারের স্টিল কলামের উপরে একটা ক্র্যাক তৈরি হয়েছে।’’ ওই ফাটল কী রকম তা দেখতে সঙ্গে থাকা হাইড্রোলিক মই বেয়ে একেবারে উঠে গেলেন প্রায় পাঁচতলা উঁচু ওই গার্ডারের ফাটলের কাছে। তুললেন সেই ফাটলের ছবি। শুধু ওখানেই নয় বিভিন্ন জায়গায় কতটা ফাটল দেখা দিয়েছে তা দেখতে মাঝেমধ্যেই ওই হাইড্রোলিক মইয়ে উঠে পড়তে হল তাঁদের। ছবি তুলে নোট করে নিলেন। এক ইঞ্জিনিয়ার সরু সরু ফাটলের দিকে তাকিয়ে বললেন,‘‘ফাটল দিয়ে জল ঢুকলেই তো শেষ।’’

অরবিন্দ সেতু পরিদর্শন করতে গিয়ে এক ইঞ্জিনিয়ার তাঁর সহকর্মীকে বললেন, ‘‘দেখছেন সেতুর এই স্তম্ভ একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ স্তম্ভের ছবি তুলতে না তুলতেই ইঞ্জিনিয়ারেরা আবিষ্কার করলেন ক্রস গার্ডারের ফাটল। সেই ফাটলেরও ছবি উঠল। অরবিন্দ সেতুর নীচে দোকানের ভিতরে বিপজ্জনক রাসায়নিকও ব্যবহার হচ্ছে। যা থেকে আগুন ছড়াতে পারে দ্রুত। ওই সব রাসায়নিক দেখে রীতিমতো অসন্তুষ্ট হলেন ইঞ্জিনিয়ারেরা।

চিংড়িঘাটা সেতুতে এসে ফের হাইড্রোলিক মই দিয়ে প্রায় তিনতলা সমান উঁচু গার্ডারের সামনে উঠে গেলেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। উপর থেকে এক ইঞ্জিনিয়ার চেঁচিয়ে বললেন, ‘‘স্যর, গার্ডারের কাছে একটা অ্যাঙ্গেল বেঁকে গিয়েছে।’’ ওখানে দাঁড়ানো এক অটোওয়ালা অভিযোগ করলেন, ‘‘সেতুর একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব সময়ে জল পড়ে। এটা দেখুন স্যর।’’

চিংড়িঘাটা থেকে ইঞ্জিনিয়ারদের গাড়ি চলল বাঘা যতীন উড়ালপুলের দিকে। ওই সেতুর ধার ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেলের লাইন। ভৌগোলিক ছবিটা দেখে মনে পড়ে যায় মাঝেরহাট সেতুর কথা। ওই সেতুরও এ রকম ধার ঘেঁষে মেট্রোর লাইন হচ্ছিল। অভিযোগ উঠেছিল মেট্রোর কাজের কম্পনের জেরেই মাঝেরহাট সেতু দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। বাঘা যতীন উড়ালপুলের ওই চত্বরে কর্মরত এক ইঞ্জিনিয়ার অবশ্য বলেন, ‘‘স্যর, নিশ্চিত থাকুন। মেট্রোর যন্ত্রাংশের ভার সেতুর উপর পড়ছে না।’’ তবে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানালেন, সেতুর বেশ কিছু জায়গায় কংক্রিট ফাঁপা হয়ে গিয়েছে। সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করে মেরামতি করে দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bijan Setu KMDA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE