ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভার কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বারবার। সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিব্রতও হতে হয়। এ বার সেই পুরকর্মীদের ওভারটাইমের অঙ্ক দেখে চোখ কপালে উঠেছে কর্তাদের। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড়, না কি কর্মীদের ওভারটাইম দেওয়া— কোনটা বেশি জরুরি, এমন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। আপাতত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পুরনো হারেই ওভারটাইম দেওয়া হবে। নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নয়। এমনকি পুরসভা নির্বাচনের পরে ওভারটাইম নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
পুরকর্তারা হিসেব করে দেখেছেন, বর্তমানে শুধু ওভারটাইমের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়। তা-ও পুরনো ২০০৯ এর রোপা (রিভিশন অব পে অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স) অনুসারে। চলতি বছর থেকে নতুন বেতন কমিশন চালুর পরে (রোপা ২০১৯) তার পরিমাণ প্রায় আড়াইগুণ বেড়ে সাড়ে ১২ কোটিরও বেশি দাঁড়াবে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। তার সঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ি ব্যবহারের কারণে প্রতি মাসে তিন কোটিরও বেশি টাকা খরচ রয়েছে।
খরচ কমাতে সোম এবং মঙ্গল, পরপর দু’দিন ওভারটাইম নিয়ে বৈঠকে বসেন পুর কমিশনার-সহ একাধিক পুর আধিকারিক। এক আধিকারিক জানান, কলকাতা পুলিশেও অনেকেই ছুটি পান না। তবে তাঁদের ওভারটাইম নেই। ১২ মাসের বদলে ১৩ মাসের বেতন দেওয়া হয়। যা ওভারটাইমের হিসেবের থেকে কিছুটা সাশ্রয়জনক। সেই পদ্ধতি এখানে চালু করা যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলে। তবে ভোটের আগে সেই নিয়ম চালু করা হচ্ছে না।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘অপ্রয়োজনীয় যে কোনও কিছুর ব্যবহার রুখতে চায় পুরসভা।’’ পুরকর্তারা জানান, ভোটের মুখে উন্নয়নের কাজ শেষ করতে প্রচুর অর্থের দরকার। সে সব চিন্তা করেই খরচে রাশ টানতে চাওয়া হচ্ছে। ঠিক হয়েছে প্রতি মাসের বেতনের সঙ্গে নয়, ওভারটাইমের বিল পরে মেটানো হবে। মঙ্গলবার মেয়রের সঙ্গে আলোচনার পরে এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
পুরসভা সূত্রের খবর, জল সরবরাহ, জঞ্জাল অপসারণ, নিকাশি এবং স্বাস্থ্য দফতরে ওভারটাইম বেশি হয়। যদিও জঞ্জাল দফতরের ক্ষেত্রে ওভারটাইম নিয়ে ভিন্ন মতও শোনা গিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, দৈনিক সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন জঞ্জাল জমা হয় শহরে। ছুটির দিনেও তা তুলতে হয়। না হলে তা জমে থাকবে। ছুটির দিনে কাজ করাতে হলে ওভারটাইম ছাড়া চলবে না।
গাড়ি ব্যবহারেও রাশ টানার সিদ্ধান্ত হয়েছে এ দিন। বিভিন্ন দফতরের পদস্থ আধিকারিকদের গাড়ি যেমন ছিল, তা-ই থাকবে। তবে দফতরগুলিতে একাধিক গাড়ি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এ বার তা কাটছাঁট করা হবে। নতুন সিদ্ধান্তে বলা হচ্ছে একটি দফতরকে মাত্র একটি গাড়ি দেওয়া হবে। যদি কোনও কারণে বাড়তি গাড়ি লাগে তবে পুর কমিশনারের অনুমতি নিতে হবে। নতুন এই সিদ্ধান্তে কিছুটা খরচ কমানো যাবে বলে পুরসভার ধারণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy