Advertisement
E-Paper

দরপত্রের জটিলতায় বন্ধ পুরসভার কসাইখানা

নতুন করে আর বরাত দেওয়া যায়নি। যার জেরে পুরসভারই হিসেব অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঢোকেনি তাদের ভাঁড়ারে। অর্থাৎ, ওই পরিমাণ আয় কমেছে পুর প্রশাসনের।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
রামগড়ের বিদ্যাসাগর কলোনিতে জন্ডিস আক্রান্তের বাড়িতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

রামগড়ের বিদ্যাসাগর কলোনিতে জন্ডিস আক্রান্তের বাড়িতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

প্রায় ২৮ কোটি টাকা খরচ করে একটি আধুনিক স্বয়ংক্রিয় কসাইখানা তৈরি করেছিল কলকাতা পুরসভা। ট্যাংরা থানা এলাকার ডি সি দে রোডে ২০১৪ সালে ঘটা করে উদ্বোধনও করা হয় সেই ‘মডার্ন অ্যাবাতোয়ার’-এর। সেটি ভাড়া দিয়ে বছরে দু’কোটি ৪০ লক্ষ টাকা আয়ও করছিল পুর প্রশাসন। ২০১৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ওই ভাবে চলার পরে ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার পর থেকে গত দু’বছরে পাঁচ বার দরপত্র ডাকা হলেও কোনও বারই একটির বেশি আবেদন জমা পড়েনি। ফলে নতুন করে আর বরাত দেওয়া যায়নি। যার জেরে পুরসভারই হিসেব অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঢোকেনি তাদের ভাঁড়ারে। অর্থাৎ, ওই পরিমাণ আয় কমেছে পুর প্রশাসনের।

এই সমস্ত জটিলতায় দু’বছর ধরে বন্ধ হয়েই পড়ে রয়েছে ওই কসাইখানার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের যন্ত্র দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে তার কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। বিষয়টি উল্লেখ করে সম্প্রতি পুরসভার এক নথিতে লেখা হয়েছে, এই মুহূর্তে গবাদি পশু কাটার এই আধুনিক প্রতিষ্ঠান এখন অনিশ্চয়তায় রয়েছে। ওই নথিতে আরও বলা হয়েছে, দু’বছর পার হয়ে গিয়েছে। এখনও কোনও ব্যবস্থা না হলে লোকসানের পরিমাণ ক্রমেই বাড়বে। পুরকর্তাদের মতে, দরপত্রের নিয়মের জটিলতাতেই বন্ধ হয়ে রয়েছে ওই আধুনিক কসাইখানা।

এ শহরে গরু, ছাগল কাটার জন্য পুরসভার একাধিক কসাইখানা রয়েছে। ট্যাংরার কিলখানায় পুরনো পদ্ধতির কসাইখানা আগেই ছিল। ২০০৭ সালে কলকাতা পুর এলাকায় বড় মাপের একটি আধুনিক, স্বয়ংক্রিয় কসাইখানা তৈরিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতি মিললেও বাম আমলে তা আর হয়ে ওঠেনি। কোথায় মিলবে জায়গা, সেই প্রশ্নে আটকে থাকে সব কিছু। ২০১০ সালে তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে জায়গা চিহ্নিত করে ওই কসাইখানা তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়। ঠিক হয়, পুরনো কসাইখানার কাছে পুরসভার একটি জমিতেই গড়ে তোলা হবে নতুন কসাইখানা। সেই মতো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়ে বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠানো হয়। কেন্দ্রের আর্থিক বরাদ্দ পৌঁছনোর পরেই শুরু হয় কাজ। ২০১৪ সালে চালু হয় ওই কসাইখানা। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মোষ জাতীয় পশু কাটা এবং মাংস সংরক্ষণের সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে ওই কসাইখানায়। পুরসভা সূত্রের খবর, যে সংস্থা ওই কসাইখানা তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিল, প্রথম দিকে সেটি চালানোর বরাতও তারাই পেয়েছিল। শর্ত ছিল, ত্রৈমাসিক ভাড়া হিসেবে ৬০ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। আর পুরসভার যে হাতে কাটা কসাইখানা রয়েছে, সেখানকার গবাদি পশুও কেটে দিতে হবে ওই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে। ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত তা ভাল ভাবেই চলেছে। তার পরেই নিয়মের জটিলতায় আটকে পড়ে দরপত্র প্রক্রিয়া।

পুরসভা সূত্রের খবর, নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ। তার পরে ওই বছরেরই ১৮ এপ্রিল, ২৭ জুন এবং ১৫ নভেম্বর ফের দরপত্র ডাকা হয়। পরপর চার বার দরপত্র চেয়েও এক জনের বেশি যোগ্য আবেদনকারী পাওয়া যায়নি। আবেদনকারী সংস্থার সংখ্যা বাড়াতে ন্যূনতম ১০ কোটি টাকা বার্ষিক টার্নওভারের শর্ত কমিয়ে ৬ কোটি টাকা করা হয়। তবু সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ দরপত্র ডাকা হয় গত ১৪ জানুয়ারি। নিয়মানুসারে তিন বার দরপত্রে একটি সংস্থা ছাড়া অন্য কেউ যদি অংশ না নেয়, তা হলে তাদেরই কাজের বরাত দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দরপত্রের অন্য শর্ত কিছু থাকলে তা মানতে হবে। কিন্তু সেই শর্ত পূরণ না হওয়ায় আটকে যায় দরপত্র প্রক্রিয়া। পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘যত দেরি হবে, তত পুরসভারই লোকসান বাড়বে। আয় কম হবে। তাই পুরসভার স্বার্থে নিয়মের জটিলতা কিছুটা লাঘব করে দ্রুত ওই আধুনিক কসাইখানা চালু করা প্রয়োজন।’’ জটিলতা কাটাতে একটি কমিটি গঠন করেছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। যোগাযোগ করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের সঙ্গেও। তাঁর আশা, খুব শীঘ্রই সমস্যা মিটতে পারে।

Modern Abattoir Tangra KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy